somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লোকাল বাসের ভিড়ে

২৬ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা শহরে সীমা নতুন।মাত্র এক মাসের মত হল নতুন অফিসে জয়েন করেছে।অফিস শুরু হয় সকাল নয়টায়।আটটার মধ্যে তৈরী হয়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছে বাসে উঠতে কিন্তু পুরুষদের ভিড় কাটিয়ে উঠতে পারছে না।তার সাথে বাসগুলো সব আসছে মহিলা সিট ভরে।বাসওয়ালা তাই মহিলা উঠাতে চায় না।সীমা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।শুরুর কয়েকদিন সি এন জি দিয়ে যাতায়াত করেছে।কিন্তু যেই ভাড়া!৭০ টাকা অফিসে যেতেই খরচ হয়!এভাবে চলতে গেলে বেতন সব যাতায়াতেই শেষ হয়ে যাবে।প্রায় আধা ঘন্টা পর সীমা মহিলা সিট খালি পেলো।অফিসে পৌছল ১ ঘণ্টা পর।নতুন চাকরি!প্রতিদিনই যদি দেরি হয় তাহলে টিকবে কিভাবে?পরশুদিনই স্যার সীমাকে সামনে পেয়ে এইরকমই কিছু ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে।এভাবেই প্রতিদিন একরাশ টেনশন আর তিক্ততা নিয়ে সীমার দিন শুরু হয়।
পরেরদিন অনেকগুলো বাস চলে যাওয়ার পর সীমা ঠিক করল মহিলা সিট না পেলে আর দশটা পুরুষের সাথে সেও দাঁড়িয়ে যাবে।কন্ডাক্টরের সাথে ঝগড়া করে উঠে গেলো বাসে।সাহসিকতা দেখাতে পেরে ভালোই লাগল নিজের কাছে।কিন্তু কিছুক্ষণ পরই টের পেলো পিছন থেকে একটি লোক বারবার ধাক্কা দিচ্ছে এবং প্রতিবার ব্রেক কষার সাথে সাথে লোকটির হাত তার উরুতে চাপ দিচ্ছে।।সীমা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।অসহায়ের মত চুপ করে রইল।সেদিন সীমা সময়মত অফিসে পৌঁছেছিল।তার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু একধরনের অস্বস্তি আর অপমান গ্লাসে মদের তলানির মত নাড়াচাড়া করছিল তার মনে।সীমা খুশি হতে পারল না।
তিন চার মাস পরে সীমা অভ্যস্ত হয়ে গেলো লোকাল বাসে চড়ার।প্রায় সময়েই সীমাকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়।তার সাথে থাকে লোকজনের হাতের চাপ,নিম্নাঙ্গের ঘষাঘষি।এখন সীমা চুপ থাকে না।সীমা প্রতিবাদ করে।মাঝে মাঝে ক্লান্তি এসে ভর করে।আজ একজনের হাত মুচ্‌ড়ে দিল,কাল আরেকটা হাত ধেয়ে আসবে।কয়টা হাতকে সে একা আট্‌কাবে।যেখানে প্রশাসন নির্বিকার!কিন্তু সীমা বুঝে গিয়েছে দুর্বলদের জন্য এই দুনিয়া খুব নিষ্ঠুর।সীমা দুর্বল থাকতে চায় না করুণা চায় না।পরিশ্রম করেই টিকে থাকতে চায়।
ড্রাইভারের পাশে গরম ইঞ্জিনে পা দিয়ে মহিলা আসনে বসার পক্ষপাতী নয় সীমা।ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে বাসে উঠা,সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা,ঘামতে ঘামতে গন্তব্যে পৌঁছানো যতই কষ্ট হোক সীমার আপত্তি নেই।কিন্তু একটি ছেলের যেই নিরাপত্তা মেয়ের তা কোথায়!একটি ছেলে অনায়াসেই ভিড়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে কিন্তু একটি মেয়েকে এই অবস্থায় কামুক পুরুষদের হাতের টিপাটিপি সহ্য করে যেতে হয় শুধুমাত্র তাদের বিকৃতি মনের আনন্দ সাধনে।এই একটি কারণেই সীমা মহিলা সিটের প্রয়োজন অনুভব করে।কিন্তু এতে কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়!মহিলা সিট তো একটি সাময়িক ব্যবস্থা।এর প্রবর্তনের কারণ মেয়েদের নিরাপত্তা রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারে নি।কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হয় না নিশ্চিত করার তেমন ইচ্ছা আছে।সীমা অবাক্‌ হয়ে দেখে এ নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই।এক দলের লোক ব্যস্ত মহিলা সিটের বিরুদ্ধাচরণে আরেকদলের লোক ব্যস্ত পঙ্গু এই ব্যবস্থাকে জোরদার করায়।আসল মোদ্দায় কেউ কথা বলে না।
ইতিবাচক পদক্ষেপ কোন্‌টি!নির্দিষ্ট আসনের ব্যবস্থা করে মেয়েদের দুর্বল করে রাখা নাকি সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী পুরুষের যাতায়াত ব্যবস্থা নিরাপদ করা!সীমা জানে এর জবাব অনেকের কাছেই নেই।তবু জবাব যে দিতেই হবে একদিন।এই রাষ্ট্রকে এই সমাজকে।সীমা সেইদিনের অপেক্ষায় আছে!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×