somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমৃত্যু শৈশব চাই ১১

২৩ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১১। চোর সমগ্র



লেখার শিরোনাম দেখে আমার চরিত্র সম্পর্কে কোন প্রশ্ন তুলবেন না,প্লিজ। ;) মূলত শৈশবে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি চৌর্যবৃত্তি দর্শন এবং শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।আজও সেসব ঘটনা মনে পরলে হাসি চেপে রাখা দায় হয়ে পড়ে। =p~



ক্লাস ফোরে পড়ি তখন।এক রাত্রিবেলা ঘুম ভেঙ্গে গেল,প্রচন্ড টয়লেট চেপেছে।বড়টা না,ছোটটা। ;) মাকে ডাকলাম।মা বললেন,"উঠে লাইট জ্বালাও,আমি উঠতেছি।"লাইট জ্বালাতে গিয়ে দেখি ইলেক্ট্রিসিটি নেই।হ্যারিকেন ধরানো ছিল,ওইটা নিয়েই দরজা খুলে বের হলাম।ঘর থেকে একটু দূরে গিয়ে মাত্র বসেছি,হঠাত দেখি আমাদের বাড়ির ঢুকার প্রবেশপথে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে।অন্তরাত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।মনে মনে আল্লাহ্‌র নাম নিতে নিতে চোখ বুজলাম।ভাবলাম,হয়তো ঘুমের ঘোরে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে।আবার চোখ খুল্লাম।নাহ,তাও দেখি ওই জিনিসটা ওখান থেকে নড়ে নাই।আমি "আম্মু,ভুত..." বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। B:-)



পরের দিন সকালে উঠে আমার ভূতদর্শনের বৈজ্ঞানিক কারণ খুঁজে পেলাম।আমাদের পাশের বাড়িতে চোর বাবাজী সিঁদ দিয়েছেন।কিন্তু দুঃখের বিষয়,যে ঘরে সিঁদ দিয়েছেন,ওইটা অই বাড়ির খাবার ঘর।অর্থকড়ি বা স্বর্ণালঙ্কার কিছুই পায় নি চোর বাবাজী।ওই বাড়ির চাচী বিভিন্ন ধরণের আঁচার-চাটনী তৈরি করে রেখেছিলেন অই ঘরে।আমরা গিয়ে দেখি সব কয়টা আচারের বয়াম খালি,চোর মিয়া সারারাত বসে বসে আচার খেয়ে আমার গিনেজ বুকে স্থান করে নিলেন।:P



আমাদের তিন ভাইবোনের একটা ছোট্ট বাগান ছিল।ফুলের মধ্যে গাঁদা,লাল গোলাপ আর দোপাটিই ছিল উল্লেখযোগ্য।কোত্থেকে একদিন আমাদের এক আত্মীয় একটা কাল গোলাপ গাছের কলম দিয়ে গেলেন,যেটা নাকি বুনলে তিন মাসের মধ্যেই ফুল ধরে।গাছ লাগানো হল,আমাদের তো উৎসাহের অন্ত নেই।ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে আমাদের অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যিই কয়েকটা কলি ধরল।আমরা বোধ হয় বেহেশতি বাগানের ফুল পেলেও এত আনন্দ পেতাম না।



যাই হোক,২১শে ফেব্রুয়ারি এল।তখন একটা প্রচলন ছিল,নাইন টেনে পড়ুয়া ছাত্ররা বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার বানাত এবং গ্রাম ঘুরে ঘুরে ফুল সংগ্রহ করে মিনারে পুষ্পার্ঘ প্রদান করত।যথারীতি আমাদের বাড়িতেও এল,আমার বড় আপু বলল,"তোমরা সব ফুল নিয়ে যাও,প্রব্লেম নাই।কিন্তু কাল গোলাপের কলিগুলো নিও না।"কিন্তু ওই পোলাপানগুলা তো নাছরবান্দা,ওরা কাল গোলাপ নিবেই।শেষ পর্যন্ত আপুরই জয় হল,পোলাপানরা হার মেনে নিয়ে চলে গেল।আমাদের চরম আরাধ্য কাল গোলাপ অক্ষত রইল।:)



২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে উঠে দেখি,আপু মন খারাপ করে বসে আছে।তড়িঘড়ি করে বাগানে গিয়ে দেখি,কাল গোলাপ তো দুরের কথা,ফুল তো দুরের কথা,একটা গাছও অবশিষ্ট নেই।দেশপ্রেমী লুটেরারা আমাদের বাগানের সব ফুলগাছ কোদাল দিয়ে সমূলে উৎপাটন করে নিয়ে গেছে। :( :(



একবার স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখলাম,দুই চোর ধরা পড়েছে এবং তাদের একটা চালের উপর তুলে রাখা হয়েছে।কি যে একটা সিন,নিচ থেকে লোকজন খাবার ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে,যেন বান্দরকে কলা খাওয়াচ্ছে।এক চোরের বাড়ি ছিল পার্শবর্তী একটা গ্রামে,চোরের গার্জিয়ানকে ডেকে আনা হল।উনি খুব অনুনয়-বিনয় করে চোরের হয়ে মাফ চাইলেন।চোরকে চাল থেকে নামানো হল।এরপর যে দৃশ্যের অবতারণা আমি এ জনমে ভুলব না।চোর তার গার্জিয়ানের সাথে প্রথমে কদমবুসি,তারপর কোলাকোলি করল।তার ভাবখানা এমন ছিল,যে সে বাবরের মত এই মাত্র পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করলেন।:P;)

৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×