somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামাজ, শুদ্ধভাবে নামাজ এবং নামাজের পদ্ধতি নিয়ে ইদানীংকার অস্বস্তিকর অস্পষ্টতা ১

১০ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নামাজের পদ্ধতি নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি খুব সুন্দরভাবে ছড়ানো হচ্ছে। এই বিভ্র্রান্তির ফলটা কেমন দাঁড়াচ্ছে তা নিজের চোখে দেখলাম এবং খুবই বিরক্ত হলাম। একজন নিকটাত্মীয় ত্রিশ বছর আগে কামিল বা টাইটেল ডিগ্রি নিয়েছেন মাদ্রাসা থেকে। এর বাইরে, ধর্মীয় নয় এমন একটা সম্মানজনক বিষয়ে তিনি স্কলার, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান।

ইনি যদি হয়রান হয়ে বলেন, বুঝলে, সারা জীবন তো ভুল নামাজ পড়ে এলাম!
তাহলে পরিস্থিতিটা কেমন হয়?

ভুল নামাজ পড়ে এলেন মানে কী? তিনি কি শিরক করে এলেন? যাকে ফার্সিতে বোৎপরস্তি বলে, সেই প্রতিমা-প্রার্থনা করে এলেন? যাকে নিকৃষ্ট অনুপ্রবেশ বলা হয়, সেই বিদ'আত করে এলেন? অথবা দয়াময় রাসূল দ. যে পথে নামাজ পড়েছেন, সেই পথে না পড়ে মনগড়া পথে পড়লেন? ঠিক কী কারণে, সুস্থ-অসুস্থ অবস্থায় কাঁটায় কাঁটায় নামাজ পড়া আলিম একজন মানুষ বলতে পারে, বুঝলে, সারা জীবন তো ভুল নামাজ পড়ে এলাম!

তিনি বললেন, বুখারি শরীফে আছে, বারবার আছে, রুকুতে যাবার আগে হাত তুলতে হবে। এবং রুকু থেকে দাঁড়ানোর আগেও। মূলত এভাবে নামাজ না পড়াই তার ভুলভাবে নামাজ পড়া। এবং এর সাথে সম্পর্কিত আরো কিছু বিষয়।

প্রথমেই কথা, বুখারী শরীফে কি এই কথাটা ভুল লেখা আছে? না।
রাসূল দ. কি এভাবে নামাজ পড়েছেন, যেভাবে বুখারী শরীফে আছে? পড়েছেন।
সাহাবীরা কি এভাবে পড়েছেন? পড়েছেন।
এভাবে পড়লে কি শুদ্ধ হবে? অবশ্যই হবে।
তাহলে শেষ কথা হল, তিনি কি ভুল বলেছেন? তিনি অবশ্যই ভুল বলেছেন। শুধু ভুল বলেননি, তিনি ফিৎনা সৃষ্টিকারী ভুল কথা বলেছেন যা একটা খুব বড় ধরনের অপরাধ। উম্মাহ্ র মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার মত অপরাধ খুব কমই আছে। আর সেই অপরাধ হল, তিনি যেভাবে নামাজ পড়ে এসেছেন, সেটাকে ভুল বলার মাধ্যমে বাংলাদেশের ৯০%+ মুসলমানের নামাজকে বাতিল করে দেয়া পাশাপাশি পৃথিবীর ৭০%+ মুসলমানের নামাজকে ব্যর্থ কাজ বলা।

ওই নামাজটা যেমন সঠিক গাইডেন্সের মাধ্যমে শিখে তারপর পড়লে বিশুদ্ধ হবে, প্রচলিত নামাজও সঠিক গাইডেন্সের মাধ্যমে শিখে (যা মানুষ এম্নিতেই শিখে থাকে) পড়লে পূর্ণ বিশুদ্ধ হবে।

কারণ?
রাসূল দ. অন্তত চার-পাঁচভাবে নামাজ পড়েছেন। তিনিই ধর্মের দলিলনামা। তিনি যা করে গেছেন, তাই ধর্ম। তিনি যা অনুমোদন করেছেন এবং পরবর্তীতে বাতিল করেননি সেটাকে বিশ্লেষণ করার মত সত্যিকার যথাযথ যোগ্য মানুষ বিশ্লেষণ করে একটা গাইডলাইন তৈরি করলে সে গাইডলাইন সম্ভাব্য সবচে বেশি এরর-ফ্রি হয়, আর এই সম্ভাব্য সবচে বেশি এরর-ফ্রি পদ্ধতিতে ধর্মাচরণ করাই ইসলাম। নিজের ইচ্ছামত কুরআন থেকে একটা আয়াত দেখে বা হাদীসের দুইটা রেওয়ায়েত দেখে কাজ করা আর যাই হোক, ধর্ম হতে পারে না।

তখনি তাঁর মত মহিমাণ্বিত নামকে আশ্রয় করে মহান আল্লাহর নামকে কলঙ্কিত করে হত্যা এবং সন্ত্রাসের মত অসহিষ্ণু অধার্মিক কাজ যেমন শুরু হয়, তেমনি তাঁর কথাকে বিকৃত করে ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়।

এক হিসাবে ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা প্রোপাগান্ডাবাজ ধর্মদ্বেষী কিছু লোক আর ইসলামের ভিতরে ফিৎনা তৈরিকারী 'তোমার নামাজ ভুল' টাইপের লোক আদপে একই পাত্রের মধু।

আশা করি তিন পর্বে এই আলোচনা শেষ হবে। পরবর্তী পর্বে আমরা দেখব, যেভাবে প্রচলিত নামাজ পড়া হয়, সেটা হাদ্বরাত আলী রা. পড়েছেন, এবং তা পড়েছেন হাদ্বরাত উমার রা.'র রীতিতে। আর হাদ্বরাত উসমান রা. এই পদ্ধতিতেই নামাজ পড়াতেন। আর খুলাফায়ে রাশিদীন রা. এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেননি বরং রাসূল দ. নিজে এই পদ্ধতিতে এত বেশি নামাজ পড়িয়েছেন যে, আলাদাভাবে সাহাবী রা.'র পূর্ণ বিশুদ্ধ বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, সাহাবাদের বেশিরভাগও এইভাবেই নামাজ পড়েছেন।

এবং নামাজ পড়ার পদ্ধতিগুলোর গ্রহণযোগ্যতার পারস্পরিকতার এই আলোচনায় বুখারী শরীফ সহ হাদিস গ্রহণের পদ্ধতি এবং ধর্মীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে দালিলিক আলোচনা হবে, পাশাপাশি বিভ্রান্তির উৎসে দেয়া হবে সাহসী উঁকি।

বিরক্তি না আনার জন্যই খন্ড করে উপস্থাপন। ইনশাআল্লাহ দুদিনের মধ্যে পুরো সিরিজ সমাপ্ত হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:১৮
৩২টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×