somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুটিন

২৩ শে নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘড়ি নিয়ে একটি দীর্ঘতম অবসেশন আমৃত্যু তোমাকে তাড়া করে ফিরবে নিশ্চিত।

সেই যে ছেলেবেলায় রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তুমি মনছবিতে আঁকতে একটি বিশাল ডায়ালের গ্রান্ডফাদারস ক্লক। কাঁটা দুটি বনবন ঘুরতে ঘুরতে যখন উলম্ব আকারে সোজা হয়ে দাঁড়াতো, অর্থাৎ কী না ভোর ছয়টা, তুমি মনে মনে শুনতে পেতে ঢং...ঢং...ঢং...কলজে-কাঁপানো ছয়-ছয়টি ঘন্টাধ্বনি।

তুমি মনের ভেতরে এই ছবিটি বার বার মকশ করে, মোটা তুলিতে এঁকে ঘুমিয়ে পড়ার পর কী আশ্চর্য, পরদিন ঠিক ভোর ছয়টায় ঘুম ভাংতো তোমার। তারপর ফ্রেশ হওয়া, দাঁত ব্রাশ, হাফ বয়েল্ড ডিম, পাউরুটি দু-এক পিস, হাফ গ্লাস ওভাল্টিন খেয়ে, চক দেওয়া সাদা কেডস, নীল প্যান্ট শাদা শার্ট স্কুল ড্রেস পরে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছুট...সকাল সাতটায় তোমার স্কুল এসেম্বলি!

আর প্রতি ভোরেই ওই মনছবির কর্তা, তোমার রিটায়ার্ড নানার ঘর থেকে ভেসে আসতো বিবিসি রেডিওতে প্রভাতি সংলাপ।...

এখন অবশ্য অতিবড় বেলায় ওইসব মনছবি-টবি ধুয়ে-মুছে কোথায় যে গেছে! তুমি এখন সপ্তাহে পাঁচ-পাঁচটি লেট-নাইট ডিউটি সেরে প্রায় শেষ রাতে বিছানায় যাও। মাঝে মাঝে একেবারেই নির্ঘুম...পাঁচ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট ধবংস করো।

তোমার মুখোমুখি এটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘ বছরের সাক্ষী বিশাল এক নারিকেল গাছ।

আচ্ছা এই যে নিশুতি রাতে তুমি এইমাত্র বিশ কি পঁচিশতম সিগারেরটটি পুড়িয়ে ফেললে, একবারও কি ভাবো, এই টাকায় একটি দিনমজুর কতো কেজি চাল কিনতে পারে? আর ড্রিংকসের পেছনে তুমি যে পরিমাণ টাকা ওড়াও...।

মর্নিং ডিউটির ভোরটি তোমার কাছে বরাবরই বিচ্ছিরি রকমের বিরক্তিকর। প্রথমে পিপ পিপ করে এলার্ম দেবে দেয়াল ঘড়ি, এর তিন সেকেন্ড পর মোবাইল ফোন।...এরপর অজান্তেই আবারো তুমি তলিয়ে যাবে গহিণতম ঘুমের অতলে। মিনিট পনের কী আধ ঘন্টার ঘুম পর্বের ভেতরে তোমার জিওন-এলার্ম বৃদ্ধ নানী ডেকে বলবেন, ''ষড়জ...এই ষড়জ! জলদি ওঠো। তোমার অফিস আছে না?''

তুমি ধড়মড় করে এইবার নির্ঘাত উঠবেই উঠবে। ফিটবাবু হয়ে তিনগুন ভাড়ায় একটি গ্যাস চালিত ত্রি-চক্রযান পাকড়ে পৌঁছে যাবে অফিসে।

অবসেশনের লেবেল তুঙ্গে উঠলে কী মারাত্মক কান্ড-কারখানাই না ঘটে। তার একেকটা এতোই দুঃখের...ওই যে সাহিত্য করে বলে না, দুঃখে একেবারে বুক ভেঙ্গে যায়।

আর মনছবি নেই বলে যে চাপাবাজী করে আসছো তা-ও মিথ্যে করে দেখো তুমি প্যারাসিটামল আকৃতির...।

বার্গম্যানের ওয়াইল্ড স্ট্রবেরি-র সেই বৃদ্ধটির কথা মনে পড়লো। যে স্বপ্নের মাঝে ডায়াল ছাড়া একটা সাদা (সাদা-র চেয়ে সাদা নাকি বেশি সাদা) ঘড়ি দেখে চমকে ওঠে। এর কয়েকটা শট পরেই মুখোমুখি নিজের মৃতদেহের সঙ্গে। কফিন থেকে বেরিয়ে আসা হাতের ভীতিকর হাতছানি। এ থেকে বুঝে নিই মানুষের মৃত্যু মানে সময়েরও মৃত্যু হয়। আসলেই।

সময় বলতে আমরা কী-ই বা বুঝি! সময় আর সময়ের পরিমাপ তো আর এক জিনিস নয়। আমরা সারাজীবন সময় মেপেই গেলাম। কিন্তু সময় কী বস্তু (বা নির্বস্তু) তার বোধ হলো না।

তবুও সময়ের পেছনে ধাওয়া করি। মানবীয় সীমাবদ্ধতা আর ভুল বোঝাবুঝির কারণে, সময়কে ভেবে নেই আমারই মতো ছুটে চলা আরেকজন মানুষ। আমার প্রতিদ্বন্দ্বি। নিয়তি।

সেলুলয়েডের মতো একের পর এক তোমার ভেতরে তৈরী হয় কতশত দৃষ্টিসুখ! আর না চাইতেই তারা আবার ভেঙ্গেও যায় কতোই না সহজে! প্রেম...হায় প্রেম!!!

তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার কাছে আমি আছি যতোটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই, আমার করুণ ছায়া।

“আমার মাঝে এক মানবের ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবের তুমুল সহবাস।।”

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৩:২৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নজরুলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমার গাওয়া ৩টি নজরুল গীতি শেয়ার করলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ২:১৩

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে এক গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীনতা ও সাম্যের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উসমানীয় সাম্রাজ্যের উসমান এখন বাংলাদেশে

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০



জনপ্রিয় ''কুরুলুস উসমান'' সিরিজের নায়ক Burak Ozcivit এখন বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছর ধরে তার্কির অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সুলতানদের নিয়ে নির্মিত সিরিজগুলো বিশ্বব্যপী বেশ সারা ফেলেছে। মুসলিমদের মাঝেতো বটেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×