somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাইসাইকেল থিফ!

১০ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভার্সিটি লাইফে মোট তিনবার সাইকেল হারিয়েছিলাম। প্রথমবার
পুরোই কাল্পনিক, দ্বিতীয়বার পুরোপুরি নিজের বোকামীর কারণে আর সবচেয়ে ইন্টেরেস্টিং ছিল তৃতীয়বার হারানোর কাহিনীটি।

প্রথমবার হারানোর ঠিক দুদিন আগে গার্লফ্রেন্ডের সাথে কোন এক কারণে তুমুল ঝগড়া হয়েছিল। এরপর যথারীতি আমি মোবাইলে কল দেই-সে কল রিসিভ করেনা, আমি মেসেজ পাঠাই-সে মেসেজের রিপ্লাই দেয়না এবং আমি হলের ফোন থেকে ওর হলের ফোনে কল দেই-ফোনের এ প্রান্ত থেকে পরিষ্কার শুনতে পাই হলের খালা জোরে জোরে চিৎকার করছে, লিসি খালা রুম নং ২০৬ কিন্তু ম্যাডামের কোন সাড়া নেই। অতঃপর আর দূরালপনীর উপর ভরসা না করে স্বশরীরে ওর হলে গিয়ে খালাকে দিয়ে ডাকালাম। নাহ্ , এবারও তিনি দেখা করলেন না! এরপর মন খারাপ করে হলে ফিরে গিয়ে রাতের বেলা একটা ইমোশনাল এসএমএস করলাম, গতকাল আমার সাইকেল চুরি হয়ে গেসে! :( এইবার রাজকন্যার অভিমান ভাঙ্গলো, কারণ তার জানা ছিল, সেই সাইকেল আমার কতটা প্রিয় ছিল। পরে অবশ্য এই সুন্দর মিথ্যেটির জন্য মুচলেকাসহ ক্ষমা চাইতে হয়েছিল!

দ্বিতীয়বার হারিয়েছিলাম, জাহাঙ্গীরনগরের তৃতীয় সমাবর্তনের দিন। সিনিয়রদের সমাবর্তন অথচ আমাদের জুনিয়রদের উৎসাহের কোন শেষ নেই! অতি উৎসাহে ভয়ংকর এক কান্ড করে বসলাম। বঙ্গবন্ধু হল থেকে সাইকেলে করে খালেদা জিয়া হলে গিয়ে যথারীতি গাছের সাথে সাইকেল লক করে লিসির সাথে রিকশায় করে মেহের চত্বর আসার সময় ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি কি বোকামীটাই না করেছি! টের পেলাম বটতলায় খেয়ে রাতে ওকে হলে নামানোর সময় গাছের সাথে সাইকেল দেখতে না পেয়ে! জিন্সের পকেটে দেখি সাইকেলের চাবি নেই অর্থাৎ ভুল করে লকের সাথেই চাবিটি লাগিয়ে রেখেছিলাম। সমাবর্তন দিবসের উত্তেজনা বলে কথা! অবশ্য আমি দোষটা পুরোপুরি বাইসাইকেল থিফের উপর দিয়ে নিজের বোকামীটা স্বীকার করার মত দ্বিতীয়বার আর কোন বোকামী করলামনা ;)

আমার সেই সাইকেলটি ছিল খুবই ভালো। বুয়েটের বন্ধু রাশেদের কাছ থেকে কেনা সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল! সেই সাইকেল হারানোর পর পার্ট টাইম জবের টাকা দিয়ে ভুতের গলি থেকে থার্ড হ্যান্ড একটা ভুতূড়ে সাইকেল কিনি এরপর। ভুতূড়ে বললাম এই কারণে কারণ সেই সাইকেল দুসপ্তাহ চালাইতো এক সপ্তাহ পড়ে থাকে ওয়ার্কশপে! তো সেই সাইকেলে উপর যখন বিরক্তি আর বিতৃষ্ণা চরম পর্যায়ে সেই সময়েই একদিন জাবি সেন্ট্রাল ফিল্ডে সাইকেলটা গেল অকেজো হয়ে! এই ভাঙ্গাচোরা সাইকেল কে নিবে সে চিন্তা করে কিংবা নিলেও আপদ বিদেয় হবে সে ভাবনা থেকে এক গাছের সাথে সাইকেল লক করে নিশ্চিন্তে হলে ফিরে যাই। একদিন অথবা দুদিন পর সেখানে গিয়ে দেখি ল অব অ্যাট্রাকশনের কারণে সাইকেলটা আর নেই! কাহিনী এখানেই শেষ হলে হয়তোবা ভালো ছিল কিন্তু সাইকেল বিধাতা যে আরো ক্লাইমেক্স রেখেছেন আমার জন্য তখনো তা বুঝতে পারিনি, মাস দেড়েক পর আমারই হলের গেস্ট রুমে দেখি আমার সেই ঐতিহাসিক সাইকেল!!!! রং-টং করে একটু ভদ্রস্থ চেহারা দেয়া হয়েছে! ততদিনে হলে সিনিয়র হয়ে গিয়েছি, তাই পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম, কিভাবে বাইসাইকেল থিফকে ধরা যায় এবং তাকে র‌্যাগিং সহকারে যথাযথ শাস্তি দেয়া যায়। যদিও আমি মনে মনে ঠিক করেছিলাম, ভার্সিটি লাইফের একদম শেষের দিকে হলে 'সাইকেল বিক্রি'র একটা নোটিশ দিয়ে যে ছোট ভাই সবার আগে যোগাযোগ করবে তাকে ফ্রীতেই সাইকেলটা দিয়ে দিব। একদিন সকালে সেই বহুল প্রতীক্ষিত বাইসাইকেল থিফকে আমার সাইকেলসহ পাকড়াও করে যার পরনাই হতাশ হলাম। নিতান্তই একটা গোবেচারা টাইপের নিরীহ ছেলে! চেহারার মধ্যে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট! শানে নুজুল যা বুঝতে পারলাম, আমার সাইকেলটা বেওয়ারিশ মনে করে (বেওয়ারিশ লাশ অনেক শুনেছি কিন্তু বেওয়ারিশ সাইকেলের কথা সেই প্রথম শুনলাম!) গার্ড মামারা রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে পাঠায় এবং তারা একটা নিলামের মাধ্যমে এক হাজার টাকার বিনিময়ে সাইকেলটা এই ছেলেটার কাছে বিক্রি করে! ছেলেটিকে কিছুই বললাম না, কারণ তার বাবাও নাকি ভার্সিটির গার্ড মামা! আমার ধারণা তার বাবাই 'বেওয়ারিশ সাইকেল' ধারণাটির জনক! এরপর একদা হলের ফোন থেকে রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে ফোন করে জানতে চাইলাম নিলাম প্রসঙ্গে, জানতে পারলাম প্রতিটি হলের নোটিশ বোর্ডে নাকি সাইকেলসহ আরো বেশ কয়েকটি জিনিস বিক্রির নিলামের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল! আমি প্রমাণসহ নিলামের আগেই দেখা করলে আমাকে নাকি সাইকেলটি ফেরত দেয়া হতো! পুরো বিষয়টি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে আমার বেশ মজাই লেগেছিল, ভার্সিটিতে হারিয়ে যাওয়া আমার সাইকেল আমারই হলের এক ছোট ভাইয়ের কাছে বিক্রি করে আমারই ভার্সিটি এক হাজার টাকা আয় করে ফেলল আর আমি জানতেও পারলুমনা ;)
ভুতের গলির সাইকেলের শেষ পরিণতি বুঝি এরকম ভুতূড়েই হয়!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৪০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×