somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রানজিটের নামে করিডর :ঋণ ডিপ্লোমেসি

২০ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আওয়ামীলীগ, বিএনপি আর বেশ কিছু মিডিয়ার বালখিল্যতা দেখে যে কোনো সচেতন মানুষের এটাই মনে হতে পারে, এই 'ত্রিরত্ন' মাংগো-পাবলিকরে 'মফিজ' ভাবে।ওরা করিডরের চুক্তিকে ট্রানজিট চুক্তি হিসেবে চালিয়ে দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে কিভাবে? নাকি ট্রানজিট, করিডর, কানেক্টিভিটি আর ট্রান্সশিপমেন্টের সংজ্ঞা আম-জনতাকে নতুন করে শিখতে হবে?

ট্রানজিটের আজানুলম্বিত 'অবিশ্বস্ত' ওভারকোট চাপানো এই সো-কল্ড করিডরের মাধ্যমে ভারতের কানেক্টিভিটি ক্যামনে বাড়বে, তার হিসাব আগে লন। তারপর ক্যালকুলেটেরের বাটন টিপে টিপে ভারতের আর্থিক ও ভূ-রাজনৈতিক লাভের ব্যালান্সশিট বের করুন।

এই মুহূর্তে কলকাতা-আগরতলার দূরত্ব ১৬৮০ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে মিজোরামের আইজলের দূরত্ব ১৫৫০ কিলোমিটার। আবার কলকাতা থেকে মেঘালয়ের শিলং ১১৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং কলকাতা থেকে নাগাল্যান্ডের কোহিমার দূরত্ব ১৪২০ কিলোমিটার।

ভারত করিডর পেলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সব অঞ্চলের ভৌগোলিক দূরত্ব এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কমে যাবে যাবে!!

আবার ভারত-দাদা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার শুরু করলে তখন চট্টগ্রাম-আগরতলার দূরত্ব হবে ২৪৮ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম-আইজল ৬৫৫ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম-শিলং ৫৭৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-কোহিমার দূরত্ব দাঁড়াবে ৪৪০ কিলোমিটারে।

এবার আসুন ঋণ-ডিপ্লোমেসিতে। করিডর প্রয়োজন ভারতের, বাংলাদেশের নয়। অথচ চড়া হারে সুদ দিয়ে ভারত থেকেই ৮৫ শতাংশ পণ্য কিনতে হবে বাংলাদেশকে। আর ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে শতভাগ ভাগ। এই খাতে বাংলাদেশীদের কোনো প্রবেশাধিকার দাদারা রাখেননি।

ঋণ-ডিপ্লোমেসির আসল কাহানি আরেকটু খোলাসা করে বলি। চুক্তি অনুযায়ী শতভাগ ভারতীয় বিশেষজ্ঞ নিয়োগের শর্ত রাখার কারণ আর কিছু নয়। ভারতীয়রা পণ্যের দাম যা স্থির করে দেবে, সেই দামেই বাংলাদেশ কিনতে বাধ্য থাকবে বাংলাদেশষ। কোনো আপত্তি চলবে না। অথচ নেতাদের মাঝে বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম থাকলে তারা এটা সাফ বলে দিতে পারতেন, আমরা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের মাধ্যমে পণ্য কিনবো, পণ্যের গুণগত মান 'এই' পর্যায়ের হতে হবে। তখন ভারতের পক্ষে রাজি না হবার কোনোই যুক্তি ছিল না। কারণ করিডরের প্রয়োজন তো তাদেরই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে , তখন ভারত তার নিজের স্বার্থেই স্বল্প মার্জিনে পণ্য সরবরাহ করতো। কিন্তু তারা শেখ হাসিনাকে দিয়ে এমন চুক্তি করিয়ে নিয়েছে, যে চুক্তি মিডিয়ায় প্রকাশ করার নৈতিক সাহস এই সরকার রাখে না। বর্তমানে যা বলাবলি হচ্ছে, তা চুক্তির ফাঁস হয়ে যাওয়া ছিটেফোঁটা অংশ কেন্দ্রিক।

তবে বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক আলামত দেখে এটা অনুমান করছেন, ঋণ-চুক্তির গ্যাঁড়াকলে ফেলে ভারত শুরুতেই পণ্যের দাম তিন থেকে চারগুণ বাড়িয়ে নিলেও বাংলাদেশের বলার কিছু থাকবে না। ভারত এটা কেন করছে? উত্তরটা খুবই সহজ এবং খুবই কঠিন। সম্ভবত ভারতীয় নেতাদের কাছে দুটো জিনিস পরিষ্কার। প্রথমত, বাংলাদেশী নেতারা খুব একটা দেশপ্রেমিক নন। তাই তাদেরকে দিয়ে প্রথমেই 'অন্যায্য' শর্ত আদায় করে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, এসব নেতা পল্টিও মারতে পারে। তাই প্রথম রাতেই বেড়াল মেরে দাও।
যাই হোক, ভারত পণ্যের দাম শুরুতেই তিন থেকে চার গুণ বাড়িয়ে নিলেও সুদ কিন্তু ম্যাংগো-পাবলিককেই গুণতে হবে।

আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলে ফেললেন, 'ট্রানজিট (সরি, করিডর) প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ নাকি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে। সাবাশ দীপুমনি। অর্থনীতিতে এবারের নোবেল প্রাইজটা আপনি কেন যে পেলেন না, তা বুঝতে পারছি না।;););)

আমি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির দেউলিয়াপনা আর অসহায়ত্ব নিয়ে মোটেও প্রশ্ন তুলবো না। কারণ দেশের স্বার্থের চেয়ে গদিরক্ষা বড় হয়ে গেলে সাধারণ জ্ঞান-গম্মি আশা করা যায় নাX((X((X((

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, ট্রানজিটের ব্যানারে বাংলাদেশের উপর ভারতের বেনিয়াবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ এদেশে হাজার বছর ধরে চলে আসা 'পুরুষতন্ত্র'-এর চেয়েও ব্যাপক হয়ে দেখা দিতে পারে।

জনাবে আলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী!:P:P:P আমারে একটু বুঝায়া কইবেন, ভারতের অর্থনৈতিক ও সামরিক যুদ্ধে ট্রানজিটের তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশ কেন বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৫৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×