somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

সোস্যাল নেটওয়ার্ক : জীবনকে যেভাবে উপদ্রুত করে তোলে

২০ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোস্যাল নেটওয়ার্ক : জীবনকে যেভাবে উপদ্রুত করে তোলে
ফকির ইলিয়াস
========================================
আমি একটি ব্লগে মাঝে মধ্যে লিখি। ব্লগের একটা সুবিধা আছে ছদ্ম নামে লেখা যায়। কিন্তু স্বনামে না লিখলে দায়-দায়িত্ব অনেকটা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকে যায়। অনেকে তা করেনও এবং করা হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসৎ উদ্দেশ্যে। কারণ মূলত অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে 'রাজা', উজির' মারার জন্য মানুষের সংখ্যা আমাদের চারপাশে কম নয় কোন মতেই। এবং এসব মুখোশধারী এতই হীনস্বার্থবাজ যে তারা অন্যের যৌক্তিক মতামতকেও আক্রমণ করতে কসুর করেন না।

একদিন বিকালে সেই ব্লগটি খুলেই দেখি, একজন ব্লগার 'সাহায্য চেয়ে' একটি পোস্ট দিয়েছেন। লিখেছেন তার অফিস কর্তৃপক্ষ তার অফিসে 'ফেসবুক' ব্লক করে রেখেছে। তিনি কীভাবে 'ফেসবুকে' ঢুকবেন, সেই সাহায্য চেয়েছেন। দেখলাম, বেশ কিছু ব্লগার প্রক্সি দিয়ে ফেসবুকে ঢোকার বিভিন্ন পথও বাতলে দিচ্ছেন। বিভিন্ন ওয়েব লিংকও দিচ্ছেন, কীভাবে ব্লক হলেও ফেসবুক ব্যবহার করা যাবে। এটাও দেখলাম, ক'জন ব্লগার এমন মানসিকতার প্রতি ধিক্কারও জানিয়েছেন। তারা বলেছেন 'মনোযোগ দিয়ে অফিসের কাজকর্ম করুন। অফিসের সময় চুরি করে ফেসবুকে চ্যাটিং করা সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ।'

আমার দেখে মনে হলো এই ব্লগার বাংলাদেশ থেকেই এ পোস্টটি দিয়েছিলেন। জেনে খুবই ভালো লাগল, বাংলাদেশের বিভিন্ন অফিস কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন সোস্যাল নেটওয়ার্ক তাদের ওয়ার্কিং জোনে ব্লক করছে, করে রাখছে। এবং এটা ভেবে শঙ্কিত হলাম অফিস ফাঁকি দেয়ার দুর্নাম ভরা দেশে ফেসবুক নামক সোস্যাল উপদ্রবগুলো সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময় হত্যা করছে। ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

এই উপদ্রব গোটা বিশ্বে এখন একটি বড় সমস্যা। অফিসের কাজে বসে দীর্ঘ সময় মোবাইলে কথা বলা, টেক্সট মেসেজ করা, আইপডে গান শোনা, হেডফোন লাগিয়ে বসে থাকা বিষয়গুলো একটি জটিল সমস্যা হিসেবেই দেখা দিয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলার ঝুঁকি কমাতে জেল-জরিমানা করার আইন পাশ্চাত্যে পাস হলেও অফিস টাইমে এই উপদ্রব কমাতে হিমশিম খাচ্ছে পাশ্চাত্যের কর্পোরেট অফিসগুলো। অনেকে এখন চাকরি দেয়ার সময়ই নিয়মকানুনের বিধিবিধানে 'কর্মস্থলে এসব কাজগুলো করা যাবে না' এ মর্মে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। কারণ এ এই উপদ্রবগুলো নানাভাবেই কোম্পানির ক্ষতি করছে।
এর চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক প্রাত্যহিক জীবনকে ধকলপূর্ণ করে তুলছে নানাভাবে। অতি সম্প্রতি একটি প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে কভার স্টোরি ছাপা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ফেসবুকের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক কোম্পানির বড় কর্মকর্তারা তাদের অনেক চাকরিজীবীকে চাকরিচ্যুত পর্যন্ত করছেন।
দৈনিকটির সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফেসবুক, টুইটার, মাইস্পেস প্রভৃতি সোস্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোম্পানির বড় কর্তারা সহজেই তাদের এমপ্লয়িদের ট্র্যাক করতে পারেন। তারা জেনে নেন তাদের প্রাত্যহিক জীবন প্রণালি সম্পর্কে।
এখানে একটি উদাহরণ দেয়া যাক। একটি বহুজাতিক রিটেল কোম্পানির একজন এরিয়া সেলস ম্যানেজার একটি উইকএন্ডে (শনি ও রোববার) সিক কল (শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে কাজে বিরত থাকা) করেন। অথচ তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ। শনি ও রোববার দুই দিনই ব্যস্ত ছিলেন আমোদ-ফুর্তির পার্টি নিয়ে। তার এই এনজয়মেন্টের কথা তিনি ফেসবুকে ছবিসহ আপডেট করেন। ফেসবুকে বন্ধু তালিকায় তার কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্স ডিরেক্টরও যুক্ত ছিলেন। ফলে ওই এরিয়া সেলস ম্যানেজারের ফেসবুক আপডেট বিষয়টি ছবিসহ হিউম্যান রিসোর্স ডিরেক্টরের নজরে পড়ে। সপ্তাহান্ত কাটিয়ে সোমবার কর্মক্ষেত্রে ফেরার পরই এরিয়া সেলস ম্যানেজারের কাছে তার দুই দিন অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হয়। তিনি অসুস্থতার অজুহাত দেখালেও তা ধোপে টেকেনি। তাকে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, রুটিন মাফিক কাজে না আসায় এবং মিথ্যা অজুহাত দেখানোয় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বার্ষিক প্রায় ৮০ হাজার ইউএস ডলারের চাকরিটি তাকে খোয়াতে হয় এই ফেসবুকের কারণেই।
ফেসবুক, টুইটার নিয়ে কালো মেঘের ঘনঘটা আরও আছে। কাউকে চাকরি দেয়ার আগে কোম্পানিগুলো জেনে নিচ্ছে, তার বন্ধু-বান্ধব কে বা কারা তার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, মনমানসিকতা সামাজিক কর্মকান্ডের পরিধি সম্পর্কে। ফেসবুক বা অন্য কোন সোস্যাল নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটে কটূক্তি, গালিগালাজ, নগ্ন কথাবার্তা, হীনমানসিকতার বহিঃপ্রকাশের মূল্যায়ন হচ্ছে চাকরি পাওয়ার কিংবা চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়ার্ক রাইটস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট লুইস মাল্টবি বলেন, "অনেকেই মনে করেন আমরা আমেরিকায় আছি। আমাদের যা ইচ্ছে তাই কথা বলার স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সরকারের সঙ্গে কথা বলতে 'ফ্রিডম অব স্পিচ' এর দোহাই দেয়া গেলেও প্রাইভেট সেক্টরে তা প্রায় অসম্ভব।" কারণ প্রাইভেট মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে খুবই কঠিন হস্ত।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, ইউরোপজুড়ে সোস্যাল মিডিয়া রিলেটেড কার্যক্রমের ওপর তদারকি বাড়ছে। ২০১০ সালে শতকরা ১৮ ভাগ কোম্পানি তাদের ইন্টারনেট সিক্যুরিটি প্রুফ পয়েন্ট বাড়িয়েছে।
এদিকে ফেসবুক কার্যক্রমের কারণে চাকরিচ্যুতরা 'ফায়ার্ড বাই ফেসবুক' নামে একটি গ্রুপও খুলেছে। তা থেকে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার নমুনাবলি হচ্ছে-চলতি বছরের অক্টোবর মাসে নিউইয়র্ক পাবলিক স্কুলে চাকরিরত তিনজন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ফেসবুকে অবৈধ যোগাযোগ রক্ষার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে একটি ম্যাকডোনাল্ড ফাস্ট ফুডের স্টোর ম্যানেজার ফেসবুকে বিকৃত যৌন মানসিকতার কথা লেখার কারণে বরখাস্ত হয়েছেন। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্যের একজন স্টেডিয়াম কর্মকর্তা একটি টিমের বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রচারণা চালানোর কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এ রকম ঘটনা অনেক ঘটছে।
দমকা ঝড় আর বজ্রপাতের মতো ঘূর্ণি এই যে জীবনকে লন্ডভন্ড, উপদ্রুত করে তুলছে তা থেকে মুক্তির উপায় কী? এ বিষয়ে ইয়েল ইউনিভার্সিটির গণসংযোগ ও মিডিয়া বিভাগের অধ্যাপক ড. ফ্রেড টমসন বলেন, মানুষ ভুলে যাচ্ছে ফেসবুক, টুইস্টারে স্ট্যাটাস লেখা মানে তা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া। এটা আর কোন মতেই লুকানো থাকছে না। তাই সোস্যাল নেটওয়ার্কে কিছু শেয়ার করার আগে অবশ্যই গভীরভাবে ভাবতে হবে। কথার বাহাদুরিতে যে মারাত্মক ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ হতে পারে এই সোস্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের সাম্প্রতিক উদাহরণ।
বলছিলাম বাংলাদেশে এই সোস্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের অপব্যবহারের কথা। অবৈধভাবে ছবি তুলে, বিনা অনুমতিতে কথাবার্তা রেকর্ড করে তা ইউটিউবে দিয়ে দেয়ার মতো জঘন্য সামাজিক অপরাধ আজকালের সমাজে অনেক ঘটছে। শোবিজের হীন ন্যক্কারজনক অনেক ঘটনা ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে অনেকের ব্যক্তিগত জীবন। এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকাও নগ্ন স্বার্থপরতায় অন্ধ হয়ে একে-অন্যকে চরম হেয়-প্রতিপন্ন করার প্রতিযোগিতায় নামছে। এর সবই মানবিক অবক্ষয়ের নিকৃষ্ট নমুনা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষকে আলোর পাশাপাশি ঘন অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত করছে।
মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী গ্রহণ করবে আর কী বর্জন করবে। প্রজন্মের জন্যও এসব বিষয় গভীরভাবে ভাবার বিষয়। কারণ ইন্টারনেটে কে কি লিখছে, তার স্ক্রিনশট রেখে দিয়ে প্রমাণ করা কয়েক যুগ পরেও সম্ভব। বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলে শঙ্কিত তো হতেই হবে।
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ / ঢাকা/ ২০ নভেম্বর ২০১০ শনিবার

ছবি- ডানিয়েলা নবেইল
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:৫৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×