somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক জীবনী এবং আমাদের শিক্ষা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই; সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ।’
গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বলব মুবারক উনার মধ্যে পবিত্র যিকির মুবারক জারি থাকার কারণেই তিনি আজীবন পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার উপর ইস্তিকামত ছিলেন।
আর উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবাসায়ীদের ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি না থাকার কারণে তারা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে হারাম কাজে লিপ্ত হয় এবং হারামকে হালাল ফতওয়া দেয়।
তাই প্রত্যেকের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে, একজন হক্কানী-রব্বানী শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে, ছোহবত ইখতিয়ার করে ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি করা।
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল। উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ থেকে পবিত্র বিছাল শরীফ পর্যন্ত পুরো পবিত্র হায়াত মুবারক উনার মধ্যেই মুসলমানদের জন্য রয়েছে নছীহত, ইবরত।

গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আজীবন পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার উপর অবিচল বা ইস্তিকামত ছিলেন।

হযরত গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বৎসরকাল ইরাকের নির্জন বন-জঙ্গলে, মাঠে-প্রান্তরে এবং ভগ্ন প্রায় বাড়ি-ঘরে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি যখন ইরাকের জঙ্গলে সাধনা বা রিয়াজত-মাশাক্কাত করতাম তখন একদা আমার খুব পানির পিপাসা পেলো, এমন সময় মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে আকাশ থেকে শিশিরের ন্যায় বৃষ্টি বর্ষিত হলো তাতে পিপাসা মিটে গেল। এরপর আকাশে একটা আলো জাহির হলো, যা সমস্ত আকাশকে আলোকিত করে ফেললো। অতঃপর ঐ আলো থেকে আওয়াজ এলো- ‘হে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমি আপনার আল্লাহ। আমি আপনার ইবাদত-বন্দেগীতে সন্তুষ্ট হয়ে সমস্ত হারামগুলিকে আপনার জন্য হালাল করে দিলাম। নাউযুবিল্লাহ!’ এটা ইবলিসের ধোঁকা বা প্রতারণা বুঝতে পেরে তিনি সাথে সাথে পড়লেন, ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম’ মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে বিতাড়িত শয়তানের ওয়াওয়াসা থেকে আমি পানাহ চাচ্ছি। তখন ঐ ছুরতটা দূরে সরে গেল এবং বললো, হে হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনার ইলম আপনাকে বাঁচিয়ে দিলো।। হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একথা শুনে বললেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’। রে ইবলিস শয়তান! আমার ইলম আমাকে বাঁচায়নি; বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে বাঁচিয়েছেন। তখন ইবলিস শয়তান বললো, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে বেঁচে গেলেন। কিন্তু এভাবে আমি অনেক ছূফী-দরবেশ, আলিম-উলামা, মাওলানা, মুফতী, মুফাসসির, খতীব, আমীরকে ধোঁকা দিয়ে গুমরাহ করে দিয়েছি। যার ফলে তারা হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছে এবং হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

এই ওয়াকিয়া দ্বারা প্রথমতঃ প্রমাণিত হয় যে, একজন লোক যত উপরের মাক্বামেই উঠুক না কেন তার জন্য ইবাদত-বন্দেগী বা শরীয়ত মাফ নেই। অথচ আজকাল এক শ্রেণীর বাতিনী ফকীর নামধারী ভণ্ড ব্যক্তিরা বলে থাকে যে, উপরের মাক্বামে উঠলে ইবাদতের প্রয়োজন হয় না। তারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ভুল ব্যাখ্যা দেয়। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইয়াক্বীন বা মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমরা ইবাদত কর।” ভণ্ডরা ‘ইয়াক্বীন’-এর শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস ধরে নিয়েছে। ইবাদত-বন্দেগীতে মোটামুটি বিশ্বাস এসে গেলে তাদের মতে আর ইবাদত না করলেও চলবে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ সমস্ত মুফাসসিরীণে কিরামগণ একমত যে, এখানে ইয়াক্বীন শব্দের অর্থ হচ্ছে মৃত্যু। অর্থাৎ ইন্তিকাল পর্যন্ত মানুষকে ইবাদত-বন্দেগী করে যেতে হবে।

পক্ষান্তরে আরেক শ্রেণী হচ্ছে জাহিরী ফক্বীর- যারা উলামায়ে ‘সূ’, তারা হক্কানী-রব্বানী ওলী উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ত্বরীকা অনুযায়ী ক্বলবী যিকির না করার কারণেই অর্থাৎ তাদের ক্বলবে যিকির জারি না থাকার কারণে তারা নির্দ্বিধায় হারাম কাজগুলো করে যাচ্ছে এবং অসংখ্য হারাম কাজগুলোকে তারা পবিত্র ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে হালাল বা জায়িয ফতওয়া দিচ্ছে। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দৃঢ়তার সাথে পর্দা পালনের নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও তারা বেপর্দা হচ্ছে এবং বেপর্দা হওয়াকে জায়িয বলছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ছবি তোলা, আঁকা, রাখা ইত্যাদি হারাম ঘোষণা দেয়ার পরও তারা ছবি তুলছে এবং টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করছে এবং বলছে বর্তমানে ছবি তোলা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করা জায়িয। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী নারী নেতৃত্ব মানা, দ্বীন ইসলাম উনার নামে ভোট নির্বাচন করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, পুরুষ মহিলাদের খেলাধুলা করা ইত্যাদি সবই হারাম ও নাজায়িয হওয়ার পরও তারা এগুলো করছে ও এগুলোকে জায়িয বলে ফতওয়া দিচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! মূলত এরাই হচ্ছে জাহিরী ফকীর অর্থাৎ উলামায়ে ‘সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। আর এদের সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে যারা উলামায়ে ‘সূ’ তাদের জন্য জাহান্নাম। যারা ইলমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর তা যামানার রাজ-বাদশাহ, আমীর-উমরাদের নিকট বিক্রি করে থাকে দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করার জন্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনো তাদের এ ধর্মব্যবসায় বরকত দিবেন না।’

মূলত এদের ক্বলবে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির জারি না থাকার কারণেই ইবলিস তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে হারাম কাজে মশগুল করে দিয়েছে এবং এদের মাধ্যম দিয়ে হারামকে হালাল ফতওয়া দেয়ায়ে এদেরকে কুফরীতে নিমজ্জিত করে গুমরাহ করে দিচ্ছে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ‘সূরা কাহফ শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ কর না, যার ক্বলব আমার যিকির থেকে গাফিল সে নফসের পায়রবী করে এবং তার কাজগুলো ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ।” আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ইবলিস মানুষের ক্বলবে বসে যখন সে যিকির করে তখন পালিয়ে যায় আর যখন যিকির থেকে গাফিল থাকে তখনই শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়।” নাউযুবিল্লাহ!

প্রত্যেকের দায়িত্ব কর্তব্য হবে- গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার উক্ত ওয়াকিয়া থেকে ইবরত-নছীহত হাছিল করা। অর্থাৎ সকলের ক্বলবে যিকির জারি করা। আর তা তখনই সম্ভব যখন একজন হক্কানী রব্বানী ওলীআল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ছবক নিয়ে ছোহবত ইখতিয়ার করে ত্বরীকা মুতাবিক যিকির করা হবে। নচেৎ কস্মিনকালেও ক্বলবে যিকির জারি করা সম্ভব নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

উপকূলের ভাই-বোনদের প্রতি গভীর সমবেদনা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৭




আমরা ঢাকার পাকা দালানে বসে যখন আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি বিলাসে বিভোর, ঠিক সেই সময় আমাদের উপকূেলের ভাই-বোনেরা হয়তো কেউ স্বজন, কেউ ঘর, কেউ ফসল, কেউবা গবাদী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: অশ্লীলতা কি পোশাক দিয়ে নির্ধারণ করা উচিৎ নাকি মানসিকতা ও চরিত্র দিয়ে?

লিখেছেন লেখার খাতা, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫২


ছবিটি -ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

কহিনুরের, ফ্লোরা ওরিয়েন্টাল বিউটি সোপ।১৯৭৮ সালের বিজ্ঞাপন। ছবিটি ফেসবুকে পেয়েছি। ব্লগার সোনাগাজী, ব্লগার কামাল ১৮ সহ যারা মুরুব্বি ব্লগার রয়েছেন তারা হয়তো এই বিজ্ঞাপনটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

রেমাল ঘূর্ণিঝড়ে

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



কতোজনে ভাসছে জলে
পথ ঘাট সব যে পানির তলে
রেমালের কবলে পড়ে।
কতোজনে আজ দূর্বিপাকে
ভাবছি বসে তাদের কথা
কতৈনা দূর্গতি, বাড়িঘর
ফসলী জমি গৃহস্থালি;
ভাসছে আজ জোয়ার জলে
প্রকৃতির বিষম খেয়ালে।
জেলেরা আজ ধরছে না মাছ,
স্কুল কলেজে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন বেনজীর আহমেদ ও আমাদের পুলিশ প্রশাসন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪২



বৃষ্টিস্নাত এই সন্ধ্যায় ব্লগে যদি একবার লগইন না করি তাহলে তা যেন এক অপরাধের পর্যায়েই পরবে, যেহেতু দীর্ঘদিন পর এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণে আমার আজ সারাদিন মাটি হয়েছে তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×