somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেউ ফিরিয়ে দিবে না

১৭ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ এই ঈদের দিনে ঈদ মাঠে গিয়ে হঠাৎ হারিয়ে যাই স্মৃতির সাগরে। আমার কচি ছোট হাত দিয়ে বাবার হাত ধরে হেঁটে এই মাঠে আসতাম। কখনও দাদার হাত ধরে। আজ দাদা শুধুই স্মৃতি। আজ আমি পূর্ন যুবক। এখন আর পারি না বাবার হাত ধরে ঈদ মাঠে আসতে। ইচ্ছা করে এখনও তা করি। কিন্তু পারি না। এটা কি বয়সের বাঁধা? একটি মাঠেই আমার প্রায় সব ঈদের নামায পড়া হয়েছে। যতদুর মনে হয় ৫-৬ টা ঈদের নামায অন্য মাঠে হয়েছে। কিন্তু এই মাঠের মতো কোন মাঠে নামায পড়ে তৃপ্তি পাই না। হয়তো এটা মানসিক একটা অনুভ’তির ব্যপার।

একবার নানা বাড়ি গেলাম ঈদ করতে। সেখানে গিয়ে দেখি আমার আরেক খালাতো ভাইও আছে। ঈদের আগের দিন নানা আমাদের জেলা শহরে নিয়ে গেলেন। আমি আমার ভাই ও খালাতো ভাই। নানা তিন জনকে শহরের সেরা দোকানে ঢুকিয়ে বললেন- তোদের কোন পাঞ্জাবী-পায়জামা পছন্দ হয় দেখ। আমাদের তিন জনকে নতুন পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিয়ে ষ্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে এক সাথে আমাদের বেশ কিছু ছবি তুললেন। নানা চলে গেছেন অনেক দিন হলো। তার সাথে তোলা একমাত্র ছবি গুলো হারিয়ে ফেলেছি। এখন শুধুই স্মৃতি।

ছোট বাচ্চারা যখন মাঠে গিয়ে দোকানে বিভিন্ন কিছু কেনাকাটা করছিল তখন ফিরে গেলাম সেই দিনের কাছে। যেদিন আমিও বিভিন্ন প্রকার খেলনা কিনে হাত ভরে বাড়ি ফিরতাম। বিশেষ করে টমটম গাড়ি চালিয়ে বড়দের মাথা ধরিয়ে দিয়ে বকুনি খেতাম। কাগজের চরকা নিয়ে দৌড় দিতাম একপাক তা ঘুরনোর জন্য।

ঈদের চাঁদ দেখার জন্য সে কি প্রতিক্ষা। কত উদ্দীপনা। কত আনন্দের জোয়ার বয়ে যেত ঈদের চাঁদ দেখে। চাঁদকে মেহেদী রাঙ্গানো হাত দেখানো। গ্রামের সকল ছেলেমেয়ে মিলে ঈদের চাঁদ দেখে হইচই করেতে কখন যে সন্ধা গড়িয়ে রাত নেমে আসতো তা ভুলে যেতাম। বড়দের বকুনি খেয়ে বাড়ি ফিরতাম। ফিরার পর এবার প্রতিক্ষার পালা কখন বাবা নতুন জামা নিয়ে আসবে। কেন যে বাবা এতো দেরি করে ফিরতো এই দিনে। খুব রাগ হতো বাবার উপর। সকাল সকাল এলে কি এমন হয়। তারপর বাবা যখন ফিরেন নতুন জামা নিয়ে। তখন সে কি উচ্ছলতা আমার। বাবা বলতেন গয়ে দিয়ে দেখ। আমি বলতাম- কাল সকলে পরবো। কিছুতে বাবা-মা রাতে পরাতে পারতেন না। ঈদই যেন হতো না নতুন জামা না হলে। যদিও সব ঈদে নতুন জামা পেতাম না। বড় পরিবার। সবার আবদার রাখা যে কত কষ্টের ছিল এখন বুঝি। নতুন জামার না পাবার বেদনা ঈদের দিন কখন যেন হারিয়ে যেত বুঝতেই পারতাম না।
আর্থিক ভাবে অতটা সচ্ছল না হলেও বড় পরিবারের জন্য এক-দুইটাকা করে হলেও তখন অনেক টাকা ঈদ পরবি পেতাম।

যখন একটু বড় হলাম তখন কিছুটা পরিবর্তন। কাঁচের গুলি খেলার ধুম পরে যেত ঈদকে কেন্দ্র করে। কারন এই একটি সময়ই এই খেলাটার সুযোগ পেতাম। অন্য সময় গুলি খেললেই পারিবারিক বিচারের কাঠগড়ায় কঠিন শাস্তি। গুলি খেলা কেন অপরাধ আজও বুঝতে পারিনাই। এরপর দুরন্ত কৈশর। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হওয়া। কোথায় যাচ্ছি কি করছি কোনই ঠিক নেই।

ঈদের আগের দিন পারার সকল ছেলেরা পুকুর ঘাট সুন্দর করে পরিস্কার করতাম অতি উৎসাহে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম মা-চাচীরা সবাই পিঠা, পায়েস ও বিভিন্ন মিষ্টি তৈরিতে ব্যস্ত। গরম পিঠা হাতে নিয়ে ঘুরতাম আর খেতাম। কিছুক্ষণ পর সবাই হই-হল্লা করতে করতে পুকুরে এক সথে গোসল করতাম নতুন সাবানের মোড়ক খুলে। গোসল শেষে পিঠা, মিষ্টি খেয়ে চলে যেতাম মাঠে। বাপ-চাচারা সাত ভাই আর আমরা চাচাতো-জেঠাতো ছয় ভাই এক সথে মাঠে যেতাম। এখনও আমরা এক সথে মাঠে যাই সাতে ভাতিজা-ভাগিনাসহ আরো কিছু সদস্য বেড়েছে। তবে এখন বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গায় চাকুরী করার জন্য দুই-চারজন থাকতে পারেন না। ঈদুল আজহার দিন নামাজ পরে এসইে কুরবানি দেয়া দেখার জন্য দুরে দাড়িয়ে থাকতাম। গরুর পর্দা দিয়ে ঢোল তৈরী করে বাজাতাম।



এখনও ঈদ আসে আগের মতই। কিন্তু সেই চাঁদ দেখা, নতুন জামার প্রতিক্ষার প্রহর, টমটমগাড়ি, গুলি খেলা, পুকুর ঘাট পরিস্কার কিছুই হয় না। এখন ঈদে আগের মত আর বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের জোয়ার আসেনা। এখন ঈদ আমার কাছে মনে হয় একটা ছকে বাঁধা ফরমেটের মতো। কিছু আনুষ্ঠানিকতা। সেই উচ্ছাস, সেই উত্তেজনা, সেই নির্মল আনন্দ আর পাই না।

কেউ কি ফিরিয়ে দিতে পারে আগের মতো সেই ঈদ যা পেয়েছি শিশু-কিশোর বয়সে। আস্তে আস্তে মনে হয় ঈদ আনন্দ আরো কমে যাবে। তাহলে এটাই কি নিয়ম? নির্মল আনন্দের সময় কি শুধু শিশু-কিশোর বয়স।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:১১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×