somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান
চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

কোরবানীর পশুঃ তবুও যদি উহারা মানুষ হইতে পারে?

১৬ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এই গল্পের বিষয়বস্তু পুরোটাই কাল্পনিক, কেউ মনে আঘাত পেলে ক্ষমা করবেন)
ক’দিন থেকে মা’র চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, কোন কিছু খাচ্ছে না, মাঝে মাঝে তার জোয়ান ছেলের দিকে তাকিয়ে হাম্বা, হাম্বাকরে ডাকছে। ছোট ছেলেটা একটু খাদক টাইপের, খাবার পাইলে তাহার আর কোন কিছু মনে থাকে না। গরুর জাত, খাবার পাইলে আর কোন কিছু মনে থাকিবেই বা কেন? গরু তো আর কোনদিন ব্যাংক-এ টাকা-পয়সা সঞ্চয় করিবে না, আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা বানাইবে না, অফিসারও হইবে না। একদিক দিয়া সে ঠিকই করিয়াছে, খাইয়া, খাইয়া শরীরটাকে মোটাতাজা করিতেছে। তবু মায়ের ডাকে একবার সাড়া দিবে না? আপন মনে কথাগুলো বলতে বলতে হাম্বাকরে ডাক দিল। কিন্তু ছেলের কোন সাড়া নেই, সে মজা করে খাবার খাচ্ছে।
মা’র একান্ত ইচ্ছা শেষ বিদায়ের আগে ছেলেটার সঙ্গে একবার কথা বলবে। ক’দিন থেকে সে কথা বলার সুযোগ খুঁজছে। একদিন সে সুযোগ এলো। গৃহস্থ একদিন কী ভেবে যেন মা’র কাছে ছেলেকেও বেঁধে রাখল। মা এই সুযোগটাকে কাজে লাগালো।
মা তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, কীরে কেমন আছিস?
ষাঁড় খাবর থেকে সামান্য মুখ উঁচু করে বলল, ভালো আছি।
কেমন ভালো?
খুউব ভালো, গৃহস্থ আমাকে খুব আদর করে, আমাকে ভালো ভালো খাবার দেয়।
কেন ভালো ভালো খাবার দেয় জানিস?
কেন আবার? আমাকে আদর করে তাই!
মা রেগে গেল, গরুর বাচ্চা গরু বুঝবি কেন? একটু ভালো খাবার দেয় তাতেই খুশিতে গেলগেলা হইয়া গিয়াছিস, কয়েকদিন পরে যে তোকে কোরবানীর হাটে লইয়া যাইবে সেইটা বুঝলি না, না?
মা তুমি খালি খালি আমার খাওয়া দেখিয়া হিংসা করিতেছ, আর আমি যখনই মুখে কোন খাবার নিই তখনই তুমি হাম্বা, হাম্বাকরিয়া ডাক দাও, আমার খুউব ডিসটার্ব হয়।
এমনি আমাদের সবাই গরু বলে না, আমরা জানোয়ার তাই গরু বলে, মায়ে কখনো বেটার খাওয়া দেখিয়া হিংসা করে না, বুঝলি? তোর সঙ্গে আমার কথা বলিতে ইচ্ছা করে, তোকে একবার শেষবারের মতো দেখিতে ইচ্ছা করে, তাই তোকে ডাকি।
কিন্তু খাওয়ার সময় ডাক দিলে আমার খুব রাগ হয়, সেজন্য তুমি খাবার সময় ডাক দিলে আমি সাড়া দিই না।
আর বেশিদিন তোকে সাড়া দিতে হইবে না, খা, খইয়া, খাইয়া মোটা তাজা হ। ঐরকম আমিও যখন মা হই তখন ওরা আমাকে ভালো খাওয়ায়, কেন জানিস?
না।
আমি বেশি খাইলে দুধ বেশি হইবে তাই।
মা তুমি খালি বাঁকা বাঁকা কথা বলো, মানুষের গীবত করো, এগুলো আমার পছন্দ না।
আমি বাঁকা কথা বলি না, আমার বয়স অনেক, দুনিয়াতে অনেক কিছু দেখিয়াছি তাই আমার অভিজ্ঞতাও বেশি। শোন তোর আরো দু’ভাই ছিল।
ষাঁড়টা মুখ তুলে তাকালো, তাই নাকি?
হ্যাঁ।
তোর বড় ভাই যখন জোয়ান হইলো তখন বাড়িতে কসাই আসিতে শুরু করিল। তখন গৃহস্থের ঘরে টাকার অভাব ছিল তাই গৃহস্থ দাম নিয়ে বেশি চাপাচাপি করে নাই। তোর ভাইকে কসাইয়ের কাছেই বিক্রি করিয়া দিলো। ওর চেহারাটা ছিল লাল টগবগে, হয়ত কোন বড় নামী-দামী হাটে কিংবা ঢাকার বড় কোন বাজারে ষাঁড়ের মাংস বলিয়া বেশি দামে বিক্রি করিয়াছে। তাহাতে আমার কোন কষ্ট নাই, কারণ আমরা গরুর জাত মানুষ আমাদের ভক্ষণ করিবে এইটাই নিয়ম। এইটাকে আমরা সবাই মানিয়াই লইয়াছি।
ষাঁড়ের শরীর শিউরে উঠল, মা তুমি বলো কি? আমার বড় ভাইকে জবাই করিয়াছে, শালা কসাই আসিলেই এইবার শালাকে দিব এক শিংয়ের গুতো।
না এই কাজ কখনো করবি না, তোকে ওরা মারিবে। গরু হইয়া জম্মিয়াছিস, অনেক অত্যাচার সহ্য করিতে হইবে।
তারপর তোর মেজো ভাই জোয়ান হইলো। তোর মতো ওর খাওয়া-দাওয়াও বাড়িয়ে দিলো, আহ রে কী দামি দামি খাবার? আমি দু’চোখেও দেখি নাই। তয় আমার কিন্তু হিংসা হয়নি নিজের ছেলেই তো সেই যদি একটু ভালো খায় তাহা হইলে মা হিসেবে আমিও একটু তৃপ্তি পাই।
তারপর-
তারপর কোরবানী ঈদ আসিলো। ঈদের প্রায় মাস খানেক আগেই বাড়িতে দালাল আসিতে শুরু করিলো। আহারে আমার ছেলেটার চেহারাটা কী মোটাতাজা ছিল! শুনিলাম কোরবানীর পশু হিসেবে বাজারে ওর খুব কদর আছে।
ষাঁড়টা শিউরে উঠল।
একদিন খোয়াড়ে বান্ধা ছিলাম, এক মৌলভী বলিল, কোরবানী নাকি মানুষকে উৎসর্গ করিতে শেখায়, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তার ছেলে হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানী করিয়া খোদাভীতির প্রদর্শন করিয়াছিল কিন্তু হযরত ইসমাইল (আঃ) কোরবানী হয় নাই অলৌকিকভাবে পশু কোরবানী হইয়াছিল তখন হইতে মুসলমানরা পশু কোরবানী দেয়। কোরবানী দিলে পাপ মোচন হয়, পূণ্য অর্জন হয়। এই দেশটা অন্যায় অত্যাচারে ভরিয়া গিয়াছে, মানুষের লোভ লালসা বাড়িয়া গিয়াছে, দেশের টাকা নিজের পকেটে নেওয়ার দিক হইতে ইহারা সবসময় প্রথম সারিতেই থাকে, যাহারা তাহাদের জাতের অধিকার লইয়া ছিনিমিনি খেলিতে পারে তাহাদের কাছে কোন সুবিচার আশা করা ঠিক না কারণ আমরা তো পশু। পশুর রক্তে যদি ইহাদের দেশ হইতে অন্যায় অত্যাচার দূর হয়, মানুষ নিজের লোভ লালসাকে উৎসর্গ করিতে পারে তাহা হইলে তো আমার মেজো ছেলের কপাল ভালো আর ওর মা হিসাবে, ওর গর্ভধারিণী হিসাবে আমিও সৌভাগ্যবতী।
ষাঁড় মনোযোগ দিয়ে মায়ের কথা শুনছিল।
মা আবারো বলতে শুরু করলো, ওরা মেজো ছেলেকে লইয়া গেল। কান্নায় আমার বুক ফাটিয়া গেল। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ইহারা আমাদের ভাষা বোঝে না, বুঝিলে হয়ত একটু দয়া-মায়া হইতো। যাহা হউক সেই বছর আমার মেজো ছেলেসহ দেশে হাজার হাজার গরু-ছাগল কোরবানী হইলো, পশুর রক্তে দেশ রক্তাক্ত হইলো কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হইলো না। সবাই মাংস খাইয়া মুখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করিলো কিন্তু কোরবানীর যে উদ্দেশ্য, পাপ মোচন, অন্যায় অত্যাচার বন্ধ করা এবং দুর্নীতি দূর করা তাহার একটিও হইলো না। তবে একটা কাজ হইলো বুঝলি?
কী কাজ?
বড় লোকেরা, যাহারা তোর মতো মোটা তাজা গরু কোরবানী দিলো তাহারা এক টুকরা মাংসও কোন গরীব দূঃখীকে দিলো না। আজকাল বাক্স জাতীয় একটা যন্ত্র তৈরি হইয়াছে, উহার নাম নাকি ফ্রিজ, উহাতে রাখিয়া সারা বছর মাংস দিয়া কাবাব বানাইয়া খাওয়া যায়। তাহারা তাই খায়, তাই আমার কোন ছেলেকে কোরবানী ঈদে বিক্রি করিলেও আমি আর খুশি হই না। এইবার বুঝলি তোকে কেন এত বেশি বেশি করিয়া খাবার দিতেছে?
প্রাণ ভয়ে ষাঁড়টি হাম্বাবলে চিৎকার করে উঠল, তার দু’চোখ দিয়ে কয়েকফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
মা’র চোখ দিয়েও তখন পানি ঝরছে সে কাছে এসে ষাঁড়টির শরীর জিহব্বা দিয়ে আদর করে দিতে দিতে বলল, যা আমি এইবারো তোকে উৎসর্গ করিলাম, এইবার যদি মানুষের পাপ মোচন হয়, সমাজ হইতে অন্যায়, অত্যাচার দূর হয়, উহারা যদি মানুষ হইতে পারে!
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×