বিগব্যাং থেকে ব্ল্যাকহোল, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য থেকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব --এসব নিয়ে দুনিয়াজোড়া চলছে বিতর্ক। আর সমাধানসূত্র পাবার জন্য সবাই তাকিয়ে আছে এমন একজনের মুখের দিকে, যিনি মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক দশক ধরে হুইলচেয়ারবন্দি। নাম তার স্টিফেন হকিং। টাইম ম্যাগাজিনের বাছাই করা ১০ প্রশ্নকর্তার ‘টেন কোয়েশ্চেন’-এর জবাবও দিয়েছেন একালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বিজ্ঞান-মস্তিষ্ক।
প্রশ্ন: সৃষ্টিকর্তা যদি না থাকেন তাহলে কেন বিশ্বজুড়ে তার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়?
হকিং: সৃষ্টিকর্তার (গড) অস্তিত্ব নেই সেটা আমি কখনোই বলিনি। আমরা যে পৃথিবীতে আছি সেজন্যই তার নামটা উচ্চারণ করি। কিন্তু কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারের চাইতে আমি পদার্থবিদ্যার নীতিসমূহের আলোকে আমি বলবো সৃষ্টিকর্তা অস্তিত্বহীন (অ্যান ইমপারসোনাল গড)।
প্রশ্ন: মহাবিশ্ব কি ধ্বংস হবে? যদি হয় তাহলে কি কারণে হবে?
হকিং: বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। একইসঙ্গে শূন্যতা এবং অন্ধকারও বাড়ছে। এটা আরও বাড়বে। যদিও মহাবিশ্বের কোনো সমাপ্তি নেই, কিন্তু ‘বিগ ব্যাং’ এর শুরুতো ছিল। কেউ প্রশ্ন করতে পারে এর আগে তাহলে কি ছিল? উত্তরটা হচ্ছে এর আগে কিছুই ছিল না, যেমন দক্ষিণ মেরুর দক্ষিণে আর কিছুই নেই।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, দূর মহাকাশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের সভ্যতা টিকে থাকবে?
হকিং: আমি মনে করি সৌরজগতে বসতি গড়ার জন্য টিকে থাকার মতো যথেষ্ট সময় আমাদের আছে, যদিও সৌরজগতে পৃথিবীর মতো বসবাসের উপযুক্ত কোনো স্থান নেই। পৃথিবী যদি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে আমরা টিকে থাকতে পারবো কিনা তা পরিস্কার নয়। দীর্ঘদিন টিকে থাকা নিশ্চিত করতে হলে বিভিন্ন গ্রহে আমাদের পৌঁছাতে হবে। এ জন্য সময় লাগবে অনেক। সে পর্যন্ত আশা করতে দোষ কোথায়?
প্রশ্ন: আইনস্টাইনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলে কি বলতেন?
হকিং: তাকে জিজ্ঞেস করতাম তিনি কেন ‘কৃষ্ণ গহ্বর’ (ব্ল্যাক হোলস) বিশ্বাস করতে না। তার ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’র সমীকরণেই দেখা গেছে একটি বড় নক্ষত্র কিংবা গ্যাসের বিশাল একটি মেঘ নিজে নিজেই ধ্বংস হয়ে ‘কৃষ্ণ গহ্বর’র সৃষ্টি করে। আইনস্টাইন সেটা জানতেনও, কিন্তু তাকে যে কোনোভাবে বিশ্বাস করানো হয়েছিল যে, মহাশুন্যে সবসময়ই বিস্ফোরণের মতো কিছু একটা ঘটতো এবং ‘কৃষ্ণ গহ্বর’ সৃষ্টি হতো। যদি কোনো বিস্ফোরণ না ঘটতো সে ক্ষেত্রে কি হতো?
প্রশ্ন: নিজের জীবদ্দশায় বিজ্ঞানের কোন আবিষ্কার দেখতে চান?
হকিং: পারমানবিক সংমিশ্রণে সত্যিকার জ্বালানি শক্তি হিসেবে দেখতে চাই। কোনো রকম দুষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ছাড়া জ্বালানির প্রাচুর্য দেখতে চাই।
প্রশ্ন: মৃত্যুর পর চেতনা (কনসাসনেস) সম্পর্কে আপনার বিশ্বাস কি?
হকিং: আমি মনে করি মস্তিষ্ক হচ্ছে একটি কম্পিউটারের মতো আর চেতনা হচ্ছে এর প্রোগ্রাম। কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলে এটাও থেমে যায়। তাত্ত্বিক দিক থেকে নিউরাল নেটওয়ার্কে এটা আবার সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু বিষয়টি যেহেতু মানুষের স্মৃতিশক্তির সঙ্গে জড়িত তাই বিষয়টি একটু কঠিনই।
প্রশ্ন: প্রচণ্ড মেধাসম্পন্ন একজন পদার্থবিদ হওয়ার পর আপনার মধ্যেকার কোন সাধারণ বিষয়টি মানুষকে বিস্মিত করতে পারে?
হকিং: সঙ্গীত। আমি সবধরনের সঙ্গীত পছন্দ করি, সেটা পপ, কাসিক্যাল কিংবা অপেরা যাই হোক না কেন। আমি আমার ছেলে টিম’র সঙ্গে ফর্মুলা ওয়ানও উপভোগ করি।
প্রশ্ন: শারীরিক সমস্যা আপনার কাজের ক্ষেত্রে কিভাবে সহায়তা কিংবা বাধাগ্রস্ত করেছে?
হকিং: মোটর নিউরন ডিজিজ আমার জন্য দুর্ভাগ্যজনক হলেও একই সঙ্গে সবকিছুর জন্য আমি সৌভাগ্যবানও বটে। আমি স্যৌভাগ্যবান যে আমি তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে কাজ করতে পেরেছি, কারণ এক্ষেত্রটিতে শারীরিক অক্ষমতা বড় ধরনের কোনো অক্ষমতা না। তাছাড়া আমি কিছু জনপ্রিয় বইও লিখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রশ্ন জীবনের সকল রহস্যের উত্তর মানুষ আপনার কাছে জানতে চায়, আপনি এটাকে বিশাল দায়িত্ব মনে করেন?
হকিং: জীবনের সব সমস্যার সমাধান অবশ্যই আমার কাছে নেই। পদার্থবিদ্যা এবং গণিতের মাধ্যমে আমরা হয়তো মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পারি, কিন্তু এর মাধ্যমে মানব চরিত্রের পুর্বাভাস দেওয়াটা নিশ্চয়ই সম্ভব নয়। কারণ এখনো অনেক সমীকরণের সমাধান বাকী রয়ে গেছে। অনেক কিছুর মতো, বিশেষ করে নারীদের বোঝার ক্ষেত্রে আমি অন্যদের চেয়ে আলাদা নই।
প্রশ্ন: মানুষ পদার্থবিদ্যা বোঝার জন্য প্রয়্জোনীয় সবকিছুই কি বুঝে ফেলবে- এমন দিন কি কোনোদিন কি আসবে?
হকিং: আশা করি না, তাহলে তো আমার কোনো কাজই থাকবে না।
সব সমস্যার সমাধান আমার কাছে নেই:স্টিফেন হকিং
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।
আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।
অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?
অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন
জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?
জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন
মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়
১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷
চলুন গল্পটা শুনে আসি৷
বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন