somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরবানির মাসাআলা-মাসায়েল

১৫ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ-স্বাভাবিক, মুকীম এবং সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্যের সম্পদের মালিক হলে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর কোরবানি ওয়াজিব। নিত্য অপরিহার্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘর, বাড়ি, আসবাবপত্র এবং ব্যবসায়ী পণ্যও এই হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য ওই সম্পদের উপর এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া বা ব্যবসায়ী পণ্য হওয়াও আবশ্যক নয়।
যদি কোনো ব্যক্তি কোরবানির শেষ দিনেও উপরোক্ত সম্পদের মালিক হয়ে যায়, তবে তার উপরও কোরবানি ওয়াজিব। তবে শিশু ও উন্মাদ উল্লিখিত পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না।
—কোরবানি ওয়াজিব না হলে ঋণ করে কোরবানি করা উচিত নয়।
— ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির উচিত কোরবানি না করে ঋণ পরিশোধ করার চিন্তা করা। তবে এমন ব্যক্তি কোরবানি করলে সাওয়াব লাভ করবে।
— তালেবে ইলমের জন্য নফল কোরবানি অপেক্ষা দ্বিনী কিতাব ক্রয় করা উত্তম।
— লৌকিকতা ও লোকলজ্জার কারণে কোরবানি করা বৈধ নয়।
— একটি পরিবারের পক্ষ থেকে শুধু এক অংশ কোরবানি করা যথেষ্ট নয়। পরিবারের সব সদস্যের উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকলে, তবে প্রত্যেকের কোরবানি করা আবশ্যক।
— নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর যাকাত, সাদকায়ে ফিতর যেমন প্রতি বছর বাধ্যতামূলক, অনুরূপভাবে এমন ব্যক্তির উপর প্রতি বছর কোরবানি করাও ওয়াজিব।
— নিজের ওয়াজিব কোরবানি আদায় না করে জীবিত বা মৃত পিতা-মাতার জন্য কোরবানি করলে তবে সেই কোরবানি ওই ব্যক্তির পক্ষ থেকেই আদায় হবে। পিতা-মাতা এর সওয়াবও পাবে না।
— কোরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও যিনি অতীতে কোরবানি করতে পারেননি তবে তিনি তার উপর যত বছর কোরবানি ওয়াজিব ছিল এর হিসাব করে প্রত্যেক কোরবানির বিনিময়ে সমপরিমাণ কোরবানির মূল্য সাদ্কা করে দেবেন।
— আল্লাহতা’আলা যাকে সম্পদ দান করেছেন তার উচিত নিজ কোরবানি আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন, নবীজী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উম্মাহাতুল মু’মিনীন, সাহাবায়ে কিরাম এবং অন্যান্য আল্লাহর ওলীদের জন্যও কোরবানি করা।
— একাধিক ভাই মিলে কোরবানি করার ক্ষেত্রে এক সপ্তমাংশ যদি সম্মিলিতভাবে পিতা অথবা মাতার জন্য কোরবানি করে তবে এদের কারও কোরবানি বৈধ হবে না। তবে হ্যাঁ, যদি সব ভাই ওই অংশের টাকা একজনকে প্রদান করে তাকে ওই টাকার মালিক বানিয়ে দেয় এবং সে ওই টাকা দিয়ে মাতা কিংবা পিতার জন্য কোরবানি করলে তবে সবার কোরবানি বৈধ হবে।
— অংশীদারের ভিত্তিতে কোরবানি করার ক্ষেত্রে কোনো একজন অংশীদারের উদ্দেশ্য যদি গোশত বা গোশত বিক্রির থাকে তবে সব শরিকের কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব শরিকানা কোরবানির ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে অংশীদার ঠিক করে নেয়া বাঞ্চনীয়।
— কোরবানির জন্য ক্রয়কৃত পশু দিয়ে বিশেষ কোনো কারণে কোরবানি করতে না পারলে তবে ওই অবস্থায় পশুটি সদকা করে দিতে হবে।

কোরবানির পশু
— গরু, মহিষ, উট দিয়ে কোরবানি করার ক্ষেত্রে সাতজন মিলে কোরবানি দিতে পারবে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে কারও অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। সেই সঙ্গে সবার নিয়ত কোরবানি অথবা আকিকার হতে হবে। অন্যথায় সবার কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। দুম্বা, বকরি এবং ভেড়া দিয়ে এক ব্যক্তির ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে।
— প্রথমোক্ত পশু একাধিক ব্যক্তি মিলেও কোরবানি দিতে পারবে। আবার কোনো একক ব্যক্তিও অনুরূপ সম্পূর্ণ একটি পশু দিয়েও কোরবানি দিতে পারবে। তবে শরিক যদি ৭ জনের অধিক হয়, তবে সবার কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে।
— কোরবানির পশু কিছুদিন পালন করে তত্পর কোরবানি করা উত্তম। সেই সঙ্গে কোরবানির পশুর দুধ দোহন করা বা এর পশম কাটা জায়েজ নেই। যদি কেউ এমন করে তবে সেই পশম এবং দুধ অথবা সমপরিমাণ মূল্য অবশ্যই সদকা করে দিতে হবে।
— যদি পশুর চামড়া জ্বলে যাওয়ার কারণে জ্বলে যাওয়া স্থানে পশম না গজায় এবং যখম ইত্যাদি না থাকে এবং পূর্ণাঙ্গ দেহ যদি যথাযথভাবে থাকে, তবে এমন পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ আছে।
— কোরবানির পশু যবেহ করার জন্য শোয়ানোর সময় পশুর কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে তা ধর্তব্য নয়। সেই পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে।
— কোরবানির পশুর যদি শিং না ওঠে, অংশবিশেষ ভেঙে যায় অথবা শিংয়ের খোল খসে যায় তবে সেই পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে। কিন্তু শিং যদি গোড়া থেকেই ভেঙে যায় কিংবা উপড়ে যায় অথবা আঘাতের প্রভাব মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তবে এমন পশু দিয়ে কোরবানি সঠিক ও বৈধ হবে না।
— গর্ভবতী পশু দিয়ে কোরবানি করলে কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু জেনেশুনে কিছু দিনের মধ্যে প্রসব করবে এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা মাকরুহ। যদি এমন পশু দিয়ে কোরবানি করে তবে পেট থেকে যদি জীবিত বাছুর বের হয়, তবে সেটাও যবেহ করে দেবে এবং এর গোশত খাওয়াও বৈধ।
— দরিদ্র ব্যক্তির ক্রয়কৃত কোরবানির পশুর পা ভেঙে গেলে তবে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় এমন দরিদ্র ব্যক্তি ওই পশুটি দিয়েই কোরবানি করতে পারবে।
— ভুলবশত, পরস্পরের পশু কোরবানি করে ফেললে তবে উভয়ের কোরবানি আদায় হয়ে যাবে।
— ধনী, গরিব সবার জন্য কোরবানির পশু দ্বারা উপকৃত হওয়া মাকরুহ।

কোরবানির সময়
— ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা জায়েজ নেই। ঈদের নামাজের পর কোরবানি আদায় করতে হবে।
— যদি কোরবানি দাতা নিজে কোনো কারণে ঈদের নামাজ পড়তে না পারে, তবে শহরের কোথাও যদি ঈদের নামাজ আদায় হয়ে যায় তবে ঈদের নামাজ আদায় করতে না পারলেও সে কোরবানি করতে পারবে।
— যদি শহরের কোনো একটি স্থানে ঈদের নামাজ হয়ে যায়, তবে শহরের অন্যত্র কোরবানি করা যাবে।
জবেহ
—কোরবানির পশু জবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলা আবশ্যক। কোরবানির নিয়তের দু’আ পড়া হোক বা না হোক এক্ষেত্রে শুধু কোরবানির নিয়ত করাই যথেষ্ট।
— কোরবানির পশু জবেহ করার সময় উচ্চস্বরে শরিকদের নাম উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। তবে হ্যাঁ, জবেহ করার সময় জবেহকারী ব্যক্তি সব শরিকের পক্ষ থেকে কোরবানি করার কথা খেয়াল রাখবে।
— ইসলামে জবেহর ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত প্রযোজ্য। (এক) জবেহকারী মুসলমান হওয়। (দুই) জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা। (তিন) শরয়ী পদ্ধতিতে গলা, শ্বাসনালী এবং রক্তের প্রবহমান রগ কেটে দেয়া।
— কোরবানির পশু জবেহ করার আগে তাকে পানাহার করানো উচিত।
— সহজভাবে কোরবানির পশুকে শোয়ানো উচিত।
— কিবলামুখী করে বাম পার্শ্বস্থ করে শোয়ানো উচিত।
— তিনটি পা বেঁধে ফেলা উচিত।
— ছুরি ধারালো হওয়া উচিত।
— ছুরি যদি ধার দিতে হয়, তবে পশুকে শোয়ানোর আগেই ধার দিয়ে নেবে এবং পশুর সামনে ধার না দেয়া উচিত।
— একটি পশু অন্য পশুর সামনে জবেহ করা মাকরুহ।
— জবেহ করার পর পশু ঠাণ্ডা হওয়ার আগে দেহ থেকে মাথা পৃথক করা এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ কর্তন করা ও চামড়া ছাড়ানো নিষেধ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেককে মাসআলা অনুযায়ী কোরবানি করার তৌফিক দি।


সংগ্রহ - Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×