somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালীর নৈতিকতা ... (পর্ব-৫)

১৪ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ হরতাল থাকায় দুপুরে অফিস যাবার সময় বাইরে কেমন পরিস্থির সম্মুখীন হবো তা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। তবে আশ্বস্থ ছিলাম এই ভেবে যে, কেয়ারটেকার সরকারের সময় কার্ফু থাকা সত্বেও তেজগাঁতে যায়যায়দিনে গিয়ে অফিস করেছিলাম। সে সময়ের ভয়াবহ নানা কাহিনীর তুলনায় তো এই হরতাল তেমন কিছুই না।

যা হোক, যতটা না ভেবেছিলাম সে তুলনায় বরং অনেকটা নির্বিঘ্নেই অফিস পৌঁছালাম। শ্যামলীতে গিয়ে ২২নং রুটের (পূর্বের ৮নং) বাসে অন্য দিনের চেয়ে অর্ধেক সময়েই অফিস পৌঁছালাম। তবে বিড়ম্বনায় পড়তে হলো অফিস থেকে ফেরার সময়। ভেবেছিলাম, সন্ধ্যা পর্যন্ত যেহেতু হরতাল, তাই সন্ধ্যার পর এভেলেবল ট্রান্সপোর্ট পাওয়া যাবে। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে দেখি গতকাল রাতের মতো অবস্থা! খুবই কম বাস চলাচল করছে।

অবশেষে ফার্মগেট থেকে মিরপুর (২নং) রুটের একটি বাসে বহু কষ্টে উঠলাম। কিন্তু বাসে উঠেই দেখলাম গেটে হট্টগোল। কারণ, বাসে ড্রাইভারের পাশে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত সিটে ৩ জন মহিলার পাশে ৩০-৩২ বছর বয়সী একজন পুরুষ বসে আছেন। আর তার ঠিক সামনেই একজন চল্লিশোর্ধ মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। বাসের লোকজন সবাই সেই ব্যক্তিকে অনুরোধ করছে মহিলা সিটটি ছেড়ে দিতে। কিন্তু মহিলা সিটে উপবিষ্ট ব্যক্তির একই কথা, সে যখন বাসে উঠেছে তখন কোন মহিলা ছিলো না। তাই সে এই সিটে বসেছে। ফলে মহিলা সিট খালি না থাকা সত্বেও কেন হেলপার-কন্ট্রাক্টর এই মহিলাকে বাসে উঠিয়েছে, এই নিয়েই তার যত আপত্তি!

যখন দেখলাম কারো কথাকেই সে লোক পাত্তা দিচ্ছে তখন নিজেই উদ্যোগী হয়ে তাকে কড়া স্বরে বললাম, মহিলা সিট ছেড়ে দিতে। এরপর দেখলাম আরো কিছু ব্যক্তি আমার সঙ্গে সমস্বরে তাকে মহিলা সিট ছেড়ে দিতে ধমকা-ধামকি শুরু করলো। তখন সে বাধ্য হয়ে সিট ছেড়ে দাঁড়ালো।

এরই মধ্যে বাস চলা শুরু হয়েছে। বাস যখন শ্যামলীর কাছাকাছি এসেছে বাস থেকে মাত্র নেমে সামনে এগিয়েছি, তখন সেই ব্যক্তিও দেখলাম বাস থেকে নেমে আমাকে ডাকলো। আমার পাশে পাশে হাঁটতে হাটতে জিজ্ঞেস করলো, "কোথায় থাকেন?"
৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় সিগনাল দিলো যে, কিছু একটা ঘাপলা হতে পারে। তাই সেই লোককে চার্জ করার ইচ্ছে শত-কষ্টে দমন করে প্রত্যুত্তর দিলাম।
- সে তখন আরো উৎসাহের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো, "কি করেন?"
তবে এবার জানানোর পরে দেখলাম সে খানিকটা দমে গেলো।
- এবার আমি সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনার পরিচয়?"
সে তখন বললো, আমার পরিচয় একটু পরেই পাবেন। তারপর তেজের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো, "কোন পত্রিকার?"
- এবারও তাকে জানালাম।
খানিকক্ষণ থেমে এবার সে আমার নাম জিজ্ঞেস করলো।
- এটাও জানালাম।

তবে উল্লেখ করাটা জরুরী যে, সেই লোকের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। কারণ আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, সে কেন আমাকে বাস থেকে নেমে চার্জ করেছে। এক্ষেত্রে সামান্য আত্মবিশ্বাসহীনতাও বিপদের কারণ হতে পারে। আর এই বিশ্বাসও ছিলো যে, যেহেতু কোন অন্যায় করি নি, তাই এই টাইপের লোকদের প্রতিহিংসা থেকে আসা করি বেরিয়ে আসতে পারবো।

যা হোক, আমার পরিচয় নেওয়া হলে সেই ব্যক্তি চুপ মেরে গেলো। একটু পরে সে কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গিতে বললো, "আপনি একজন সাংবাদিক হয়েও আমার সঙ্গে যেভাবে রূঢ় স্বরে কথা বললেন তা কি ঠিক করেছেন?"
আমিও পাল্টা তেজে জবাব দিলাম, "বে-ঠিক কোনটা করেছি? আপনি মহিলা সিট থেকে উঠতে চাচ্ছিলেন না বলেই তো এভাবে বলেছি। আমি কি ভুল কিছু বলেছি?"
সে তখন বললো, "না ভুল বলেন নি। তবে এভাবে না বলে ভালো ভাবে বললেও তো পারতেন?"
সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বললাম, "বাসের সবাই-ই তো ভালো ভাবেই আপনাকে সিট ছেড়ে দিতে রিকোয়েস্ট করছিলো। কিন্তু আপনি কি তা শুনেছেন? তাই বাধ্য হয়েই আপনাকে এমন রূঢ় ভাবে বলেছি।"
তখন সে বললো, "আপনাকে কি আর বলবো, আপনি একজন সাংবাদিক। তাই আপনাকে আর কিছু বললাম না। আমিও এই এলাকাতেই হক সাহেবের গ্যারেজের কাছেই থাকি। আমার বন্ধুরা সবাই চলে এসেছে, আপনি যদি এখানে না নামতেন তবে বাস আটকে দিতাম।"
ভালোই বুঝতে পারলাম যে আমাকে পরিস্কার হুমকি দেয়া হলো। X((

এরপর দেখলাম কাকে যেন সে ফোনে তার লোকেশন জানালো। এরপর সেখানে লম্বা-সুদর্শন এক যুবক আসলো। নবাগত যুবক সবিস্তারে পুরো ঘটনা শুনে আমার পরিচয় নিলো। এরপর ঐ দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিকশা ঠিক করলাম। রিকশায় উঠে যাবার সময় মাঝ পথে খেয়াল করলাম সেই দুজন অন্য একটি রিকশাতে যাচ্ছে। দুজনেই একেবারে নিরব, থমথমে। বোধহয় হাত থেকে এমন একটি "শিকার" হাতছাড়া হয়ে যাওয়াতেই তাদের এমন বিধ্বস্ত অবস্থা!

তবে আসার পথে ভাবলাম যে, আমার জায়গায় অন্য একজনকে এরা পেলে কি করতো? সেই একজন যদি সাধারণ যুবক হতো, তবে একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেও হয়তো এইসব ক্ষমতার খেলা দেখানোর ক্রীড়ানকদের হাতে তাকে নাজেহাল-হেনস্তা হতে হতো। ফলে পরবর্তীতে কি আর কখনো সেই প্রতিবাদী কন্ঠ সোচ্চার হতো? :(

সেই উত্তরের ভার আমি ব্লগারদের উপরই ছেড়ে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:০৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×