somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়ি ছাড়তেই হলো খালেদাকেব্যাপক বিক্ষোভ ভাঙচুর সংঘাত, আজ সারা দেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি

১৪ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক ঘটনা, নাটকীয়তা, বিক্ষোভ, সংঘাতের মধ্য দিয়ে অবশেষে বিরোধী দলীয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়তে হলো। গতকাল শনিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে খালেদা জিয়া তাঁর নিজের গাড়িতে করে অশ্রুসিক্ত চোখে ওই বাড়ি ছাড়েন।
জানা গেছে, বাড়ি ছাড়ার আগে বেগম জিয়ার শেষ দাবি ছিল, ওই বাড়িতে তাঁর পারিবারিক বিভিন্ন মালামাল আছে, সেগুলো যেন সঠিকভাবে হেফাজতে রাখা হয়। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তাঁকে লিখিত নিশ্চয়তা দিলে তিনি বাড়ি ছাড়তে সম্মত হন।
এদিকে ঢাকা সেনানিবাসে যখন খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়ার আয়োজন চলছিল, তখন এর প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-ভাঙচুর করেন। ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান প্রবেশপথ শহীদ জাহাঙ্গীর গেটসহ মতিঝিল, ফকিরাপুল, মিরপুর, দারুসসালাম, গাবতলী, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন স্থানে সাতটি যাত্রীবাহী বাসে অগি্নসংযোগ করা হয়। জাতীয় পার্টির এক এমপির গাড়িসহ ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর ও রাস্তা অবরোধের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ চলে। এতে মহিলা কর্মী, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। ১৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। খালেদা জিয়াকে তাঁর সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে দাবি তুলে এর প্রতিবাদে আজ রবিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল সড়কে খালেদা জিয়ার বাড়িটি খালি করার জন্য শুক্রবার রাতেই প্রস্তুতি নেওয়া হয় বলে জানা যায়। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও সামরিক ভূসম্পত্তি প্রশাসকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যেও দপ্তরে হাজির হতে হয়। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসের বাইরে শহীদ জাহাঙ্গীর গেটের পূর্ব দিকে সেনাকল্যাণ সংস্থার নির্মাণাধীন একটি ভবনে কাপড় দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) অস্থায়ী ব্রিফিং সেন্টার। গতকাল প্রায় সারা দিনই ঢাকা সেনানিবাসে বিশেষ সতর্ক অবস্থা বহাল থাকে। খালেদা জিয়ার বাড়ি খালি করার চেষ্টা শুরু হয় গতকাল ভোর ৬টা থেকে। প্রায় ৯ ঘণ্টা চেষ্টার পর বেলা সোয়া ৩টার দিকে অবশেষে বাড়ি ছাড়েন বেগম খালেদা জিয়া। নিজের সাদা রঙের একটি পাজেরো গাড়িতে করে সামনে-পেছনে র‌্যাব ও পুলিশ পাহারায় সেনানিবাসের বনানী গেট দিয়ে তিনি সেনানিবাস ছাড়েন। বিকেল ৪টার দিকে তিনি গুলশানে নিজের দলীয় কার্যালয়ে পেঁৗছান। এ সময় দলের নেতা-কর্মীরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে।
খালেদা জিয়া বাড়িটি ছাড়ার পরপরই সামরিক ভূসম্পত্তি প্রশাসকের পক্ষ থেকে বাসাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। আইএসপিআরের পরিচালক শাহীনুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই বাসা থেকে বের করা মালামালের তালিকা করা হচ্ছে। বাসার ভেতরে এখনো যেসব মালামাল রয়েছে তা যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে খালেদা জিয়ার জন্য ২৯ মিন্টো রোডের বাসাটি বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া গুলশানেও তাঁর জন্য একটি বাসা বরাদ্দ রয়েছে। তিনি যেখানে থাকবেন অথবা যেখানে মালামাল পেঁৗছে দিতে বলবেন, সেখানে তা পেঁৗছে দেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানা যায়, গতকাল ভোর ৬টার দিকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শহীদ মইনুল রোডের বাড়িটির কাছে অবস্থান নেন। একসময় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও সামরিক ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার (এমইও) উপস্থিতিতে তাঁরা ওই বাড়িতে ঢোকেন। এ সময় খালেদা জিয়ার শয়নকক্ষটি ছাড়া বাড়িটির বেশির ভাগ অংশই ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। বেগম জিয়ার সঙ্গে অবস্থান করছিলেন তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী। বাড়ি থেকে 'আন-অথারাইজড' হিসেবে চিহ্নিত ৬১ জন লোককে বের করে বাইরে অপেক্ষমাণ একটি বাসে তুলে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেগম জিয়া বাড়ি ছাড়ার আগে পর্যন্ত ওই বাসেই বসিয়ে রাখা হয় তাঁদের। আইএসপিআরসহ একটি সংস্থার কর্মকর্তারা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে ঢুকে দেখতে পান, একটি ময়ূর বাড়ির বাগানে ঘোরাঘুরি করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে বেগম জিয়া ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে সম্মত হননি। পরে দুপুর ১২টায় তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায় কর্তৃপক্ষ। এ সময় বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ খালি করে বাইরে তিনটি বড় ট্রাক ও দুটি পিক-আপ ভ্যানে মালামাল ওঠানোর কাজ চলছিল। তার আগে ওই বাড়ির ল্যান্ড টেলিফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
বেলা সোয়া ১২টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইএসপিআর পরিচালক শাহীনুল ইসলাম বলেন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যায়, বিরোধীদলীয় নেতা আইনের প্রতি, মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের রায়ের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে স্বেচ্ছায় ওই বাড়ি ছেড়ে দেবেন। ইতিমধ্যে ওই বাড়ি থেকে আন-অথারাইজড ৬১ জন লোক সরে গেছে। হাইকোর্ট ডিভিশন ওই বাড়ি ছেড়ে দিতে এক মাস সময় দিয়েছিলেন, তা গত ১২ নভেম্বর শেষ হয়ে গেছে। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। আশা করা যাচ্ছে, বিরোধীদলীয় নেতা এ বিষয়ে তাঁর সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন।
আইএসপিআর পরিচালক ওই সময় জানান, বেগম খালেদা জিয়া কয়েক দিন ধরে ওই বাসা থেকে তাঁর মূল্যবান অনেক জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছেন।
এরপর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আইএসপিআর পরিচালক সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেটের সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, খালেদা জিয়া হাইকোর্টের আদেশের প্রতি সম্মান জানিয়ে শহীদ মইনুল রোডের বাড়িটি ছেড়ে গেছেন। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ সময় তাঁকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে। তিনি ওই বাড়ি থকে মালামাল অনেকটাই নিয়ে গেছেন। বাকিটা কর্তৃপক্ষ তালিকা করে তাঁর চাহিদামতো সময় ও জায়গায় পেঁৗছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেবে। বনানী ডিওএইচএসের গেট দিয়ে তিনি সেনানিবাস ছেড়েছেন। এ সময় তাঁর গাড়িতে পতাকাও ছিল।
এর আগে আইএসপিআর জানিয়েছিল, 'খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন। তাঁর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মালামাল স্থানান্তরের জন্য ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাঁকে সহায়তা করছে।'
এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত শহীদ জাহাঙ্গীর গেটের বাইরের পরিস্থিতি ছিল উত্তেজনাকর। দুপুর সোয়া ২টার দিকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে বিএনপি সমর্থক একদল আইনজীবী জাহাঙ্গীর গেট দিয়ে সেনানিবাসের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্যাডে স্বরাষ্ট্রসচিব, প্রতিরক্ষাসচিব, ঢাকা সেনানিবাসের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বরাবর লেখা একটি চিঠি নিয়ে সেনানিবাসে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় সেনাসদস্যরা তাঁদের গেটের বাইরে চলে আসতে বাধ্য করেন এবং পুলিশের জলকামান সচল হয়ে ওঠে।
তবে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, গতকাল যাত্রীবাহী বাসে অগি্নসংযোগের বেশির ভাগ ঘটনায় 'চোরাগোপ্তা' হামলা হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বিক্ষোভকারী না থাকলেও হঠাৎ করে বাসে আগুন বা ভাঙচুর করে পালিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। সেনানিবাসের শহীদ জাহাঙ্গীর গেট, নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয় ছাড়া রাজধানীর আর কোথাও বিএনপির কোনো জমায়েত ছিল না। তারপরও রাজধানীতে আরো কয়েকটি স্থানে গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্বল্পসংখ্যক যুবক ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগে অংশ নেয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, সেনানিবাসের প্রবেশপথ ও নয়াপল্টনের বিএনপির কার্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও পুলিশের কোনো ফোর্স মোতায়েন ছিল না। এ দুটি স্থানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের রাস্তা থেকে সরাতে গেলে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। গতকাল সকাল ৬টা ২০ মিনিট থেকে পুলিশ, র‌্যাব, মহিলা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। এ খবরের পর সেনানিবাসের প্রধান প্রবেশপথ জাহাঙ্গীর গেটের কাছে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী জড়ো হন। তাঁদের সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে দুই দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
জাহাঙ্গীর গেটে : এখানে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। নেতা-কর্মীরা যানবাহনে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। এখানে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন সাবেক সংসদ সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম, বর্তমান মহিলা সংসদ সদস্য শাম্মী আখতার, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও রমনা থানা বিএনপির কর্মী পান্নাসহ ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে শিরিন সুলতানা ও পান্নার অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। এ সময় মহাখালী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ও সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী সকালে সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার বাসায় যেতে চাইলে তাঁদের জাহাঙ্গীর গেটে আটকে দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদেরও সেনানিবাসে যেতে দেওয়া হয়নি।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, '২৯ নভেম্বর আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। অথচ এর আগেই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। এ ঘটনার ভেতর দিয়ে সরকার হাইকোর্টের রায়কে অশ্রদ্ধা করছে।'
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে : সকাল থেকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন দলের নেতা-কর্মীরা। কার্যালয়ের প্রবেশপথে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকায় নেতা-কর্মীরা সেখানে না গিয়ে আশপাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে বারবার বলেন, 'তোমরা বিক্ষোভ করো, তোমরা বিক্ষোভ করো।' পরে দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ মিছিল শুরু হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে টিয়ার শেল ছোড়ে। এ সময় কয়েকজন আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দেশ টিভির একটি গাড়ি এবং ওই এলাকা দিয়ে অতিক্রমের সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুর গাড়িসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। ভাঙচুরে জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে আটক করা হয় বলে জানান পল্টন থানার অপারেশন অফিসার গোলাম সারোয়ার।
রবিবার হরতালের ঘোষণা দেওয়া হলে কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় দফা মিছিল করা হয়। নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভের পাশাপাশি ভাঙচুর শুরু করলে তাঁদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ সময় ইংরেজি দৈনিক নিউএজ-এর ফটোসাংবাদিক সানাউল হকের মোটরসাইকেল ও দেশ টিভির একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিকেল পৌনে ৩টার দিকে মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ফকিরাপুলে পানির ট্যাংকের সামনে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে ভাঙচুরের পর অগি্নসংযোগ করা হয়। প্রায় ১৫ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ বিআরটিসি বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
দুপুর ২টার দিকে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা নটর ডেম কলেজের সামনে থাকা বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন ধরিয়ে দেন। গুলশানে সরকারি তিতুমীর কলেজের সামনের রাস্তায় সকালে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে একদল লোক। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজের সামনের রাস্তায় কয়েকটি টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করা হলে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সকাল ১১টায় বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঢাকা মেট্রো (ব-১১-৩৮১৩) একটি বাসে অগি্নসংযোগ করেন। কোতোয়ালি থানার ওসি সালাউদ্দিন জানান, ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আজ : খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে আজ রবিবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন হরতাল ঘোষণা করেন।
মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার অবৈধভাবে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। সরকারের এ অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারা দেশের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল-সমাবেশে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। তাই বিএনপি কাল হরতাল ডেকেছে। ঈদকে সামনে রেখে বিএনপি হরতাল দিতে চায়নি। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে হরতাল ডাকা হয়েছে। তিনি সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল সফল করার আহ্বান জানান।
এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির প্রতিবাদ : দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি লাঠিচার্জের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন গতকাল বিবৃতিতে বলেছেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও জাহাঙ্গীর গেটে অবস্থান নিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে তাঁদের ওপর টিয়ার শেল ও লাঠিচার্জ করে। এতে দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার বাসভবন থেকে পুলিশ-র‌্যাব প্রত্যাহার করে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।

এই লেখাটির জন্য আমি দৈনিক কালের কন্ঠ এর নিকট কৃতজ্ঞ।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×