somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পর্নোগ্রাফি রোধে বিদ্যমান আইসিটি আইন

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন

“তথ্য-প্রযুক্তি” -আধুনিক বিশ্বে এই শব্দটির প্রয়োগ সর্বক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে। অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাসহ সার্বিক কার্যক্রমকে গতিশীল তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর কোন বিকল্প নাই। “তথ্য-প্রযুক্তি” পরিণত হয়েছে একটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর মেরুদন্ড হিসেবে। সময়ের সাথে সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ সর্বত্র ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে। উক্ত কার্যক্রমের সুষ্ঠু ও সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির সুফল পাওয়া যাবে। বিশ্বের কোথাও আইসিটি বিহীন ভবিষ্যত অকল্পনীয়। দেশের সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বহুল মানব সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সে লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন-২০০৯ এবং জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯ অনুমোদন করেছে।

তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান এই অগ্রগতির সাথে সাথে এর অপব্যবহার তথা সাইবার অপরাধ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তা নিয়ন্ত্রনে সামর্থ অর্জনে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) সাইবার অপরাধীদের চার ভাগে ভাগ করেছে। এগুলো হলো- ভেতরের লোক, অনুপ্রবেশকারী, ভাইরাসের স্রষ্টা ও অপরাধী চক্র। কৌতূহলবশত কিংবা বিকৃত মানসিকতা থেকেই এরা এসব করে থাকে।

এখন দেশে ক্রমাগত ভাবেই ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেভাবে সবকিছু এগোচ্ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টারনেটের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়াবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ইন্টারনেটের মাধ্যমে জনগণকে সেবা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে। বেসরকারি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রবেশ করেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। স্বাভাবিকভাবে অপরাধীরা তাদের ক্ষেত্র হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে। এ কারণে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমাদের এখনই প্রস্তুত হতে হবে।

সম্প্রতি আশংকাজনকভাবে পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে পড়ছে। সেই সাথে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও লঙ্ঘিত হচ্ছে চরমভাবে। সাধারণ ও শান্তিপ্রিয় ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিপদগ্রস্ত করার লক্ষ্যে ইচ্ছা করলে অন্য কেউ যেকোনো আপত্তিকর ছবি বা মন্তব্যে তাঁকে যুক্ত করতে পারে। সে লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ হতে এ বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ পর্নোগ্রাফি রোধে বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনটি যথার্থ নয় বলে আবেদনে উল্লেখ করে বেশ কিছুদিন আগে এ বিষয়ে আদালতের একটি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালকের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে, দেশে বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, পর্নোগ্রাফি রোধে যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে একটি পূর্নাঙ্গ তথ্য-প্রযুক্তি আইন প্রণয়নে কেন নিদের্শ দেয়া হবে না -জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। একইসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোন, ভিসিডি, সিডি ও ম্যাগাজিনে পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়া বন্ধে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না -রুলে তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগ।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন-২০০৯ এর ৮ম অধ্যায়ে (যথাক্রমে ধারা ৫৪ থেকে ৬৭, ৬৮ থেকে ৮১ এবং ৮২ থেকে ৮৪) কম্পিউটার সম্পর্কিত অপরাধ, তদন্ত, বিচার ও দন্ড ইত্যাদি (যথাক্রমে অংশ-১: অপরাধ ও দন্ড; অংশ-২: সাইবার ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা, অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপীল, ইত্যাদি; অংশ-৩: সাইবার আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠন, ইত্যাদি) বিষয়ে বিশদ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বিশেষতঃ এই আইনের ৫৭নং ধারা অনুসারে- ‘ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দন্ড- (১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন। ৭৬নং ধারা অনুসারে- ‘অপরাধ তদন্তের ক্ষমতা, ইত্যাদি- (১) ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, নিয়ন্ত্রক বা নিয়ন্ত্রক হইতে এতুদদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা বা সাব-ইন্সপেক্টরের পদমর্যাদার নিম্নে নহেন এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তা এই আইনের অধীন কোন অপরাধ তদন্ত করিবেন। (২) এই আইনের অধীন অপারাধসমূহ অ-আমলযোগ্য (non-cognizable) হইবে।’

তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক আধুনিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের সঠিক উপস্থাপন ও আইনের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা এবং জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯ বাস্তবায়নে গুরুত্ব আরোপ অপরিহার্য। প্রয়োজনে আইন ও নীতিমালা পুনঃবিবেচনা করে যুগোপযোগী সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

[ লেখকঃ মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রোগ্রামার, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ঢাকা। ই-মেইলঃ [email protected] ]
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×