somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র হজ্জ উপলক্ষে "দ্বীপ রয়" এর কিছু জিজ্ঞাসাঃ-আমার উত্তর

১৩ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামু ব্লগে "দ্বীপ রয়"নামক এক ভদ্রলোক মুসলমানদের পবিত্র হজ্জ সম্পর্কে কিছু মূল্যবান প্রশ্ন রেখেছেন, প্রশ্নগুলো ছিল এ লিংকে Click This Link
আমি ফেসবুকের নিয়মিত সদস্য,অনেকদিন ধরে সামুতে পোষ্টগুলো পডে আসছি,বেশ কিছুদিন আগে সামুতে রেজিষ্টার করেছি,কিন্তু এখনো কমেন্ট করারও অনুমতি পায়নি,তাই আমার ব্লগে পোষ্ট করলাম,(লিখেছেন আমার ফেসবুক বন্ধু Ismail Jabihullah,লেখাটি তাকে উৎসর্গ করলাম)

জবাব:
১. সাদা কাপড় পরা শর্ত নয়। তবে, উত্তম। এটা দ্বারা পরোক্ষভাবে বুঝানো হয় যে, সাদা পোশাক যেমন পরিস্কার ও পবিত্র মানুষের মনটাও তেমনি পরিস্কার ও পবিত্র হতে হবে। সেলাই বিহীন যেকোন কাপড় হলেই চলবে। রঙ শর্ত নয়। এটা দিয়ে কাফনের কাপড় পরার অনুভূতিও মানুষের মনে সৃষ্টি হতে পারে। হয়ত এর কারণেই সে মৃত্যুর কথা বেশী বেশী স্মরণ করবে।

২. হজ্জের সময় ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার অত্যন্ত নিকটবর্তী হয়। সে হজ্জ থেকে শিক্ষা পায় যে, এভাবেই তাকে খালি হাতে দুনিয়া ছেড়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে একদিন হাজির হতে হবে। তখন দুনিয়ার কোন সম্পদই তার সাথে যাবে না। দুনিয়ায় যত প্রতাপশালী রাজা বাদশাহ হোক না কেন তাকে শুধুমাত্র কয়েক প্রস্থ কাপড় সাথে করে দুনিয়া ছেড়ে যেতে হবে। আর কিছুই নিয়ে যেতে পারবেনা।

পাঞ্জাবী পায়জামা বলেন আর যেটার কথাই বলেন দুনিয়ার সব পোশাক কিছুটা আয়েশী। সেগুলো থেকে হজ্জের মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতি নিয়ে আসার জন্যেই হয়ত সেলাইবিহীন কাপড় পরতে বলা হয়েছে। এখানে সেলাইবিহীন কাপড় পরা শর্ত।

৩. জি সেটা পাথর। এবং বেহেশত থেকে সেটাকে আনা হয়েছে। আদম (আঃ) সেটাকে কা'বা ঘরে স্থাপন করেছেন। এটা মানুষের পাপ শোষণ করে কালো রংয়ে পরিণত হয়েছে। হাদীসে এসেছে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْحَجَرُ الْأَسْوَدُ مِنْ الْجَنَّةِ وَكَانَ أَشَدَّ بَيَاضًا مِنْ الثَّلْجِ حَتَّى سَوَّدَتْهُ خَطَايَا أَهْلِ الشِّرْكِ
অর্থাৎ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন: কালো পাথরটি জান্নাতের পাথর। সেটা বরফের চেয়েও সাদা ছিল। মুশরিকদের পাপ তাকে কালো করে ফেলেছে। (মুসনাদে আহমাদ) অন্য বর্ণনায় এসেছে-আদম সন্তানের পাপ তাকে কালো করে ফেলেছে। (তিরমীজি,নাসায়ী, তাবারানী)

৪. দামী কোন জিনিসকে কখনো খালি রাখা হয় না। সেগুলোকে যত্ন করেই ঢেকে রাখা হয়। আপনার কাছে স্বর্ণ থাকলে আপনি সেটাকে মানুষের চোখ থেকে আড়াল করে রাখেন। মুসলমানদের কাছে কা'বা ঘর স্বর্ণের চেয়েও কোটি কোটি গুণে মুল্যবান। সুতরাং, সেটাকে কাপড় পরিয়ে রাখতেই পারেন। এ ছাড়া মানুষ সম্মানিত, তারা কাপড় পরে থাকেন। কা'বা শরীফও আমাদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ঘর।
সুতরাং, কা'বা শরীফকে দামী কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা ভুল হয়নি।


আপনি বলেছেন- লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মানুষ সেখানে আসে তারা সেটাকে এক নজর দেখতে পারে না।

আপনার জানা কথা সঠিক নয়। অনেক মানুষ সে ঘরের ভিতর ঢুকতে পারে। তবে, ঘরটা যেহেতু ছোট সে জন্য সেখানে সবাইকে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয় না। লক্ষ লক্ষ মানুষকে সে ঘরে ঢোকার অনুমতি দিলে তো সেখানে চ্যাপ্টা হয়ে অনেক মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। তবে, সরকারী মেহমানরা অনেক সময় তার ভিতরে ঢোকার অনুমতি পেয়ে থাকেন।

আমাদের দেশের অনেক আলেম সউদী সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে সে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছেন।

সেটার ভিতরের দৃশ্য দেখতে পারেন নিচের লিঙ্কে
Click This Link
Click This Link


৫.পবিত্র কা'বা ঘরে ৩৬০ টি মুর্তি ছিল। মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (সাঃ)সেখান থেকে সমস্ত মুর্তিকেই অপসারণ করেছিলেন।(রাহীকুল মাখতুম)

৬.সেগুলো মুর্তি নয় বরং,পিলার।যে স্থানে ইবরাহীম (আঃ)কে শয়তান প্ররোচনা দিতে চেষ্টা করেছিল সে স্থানটাকে চিহ্নিত রাখার জন্যেই কয়েকটি পিলার তৈরী করে রাখা হয়েছে। কেননা,হজ্জের সময় সেখানে রাসুল (সাঃ)ও পাথর নিক্ষেপ করেছেন। সেখানে পাথর নিক্ষেপ করা হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

৭.আপনি বুঝতে ভুল করেছেন। আসলে ইবরাহীম (আঃ)জাতির পিতা সেটা ঠিক। তবে,খাদিজা (রাঃ)রাসুল (সাঃ)এর উম্মাতের মধ্যকার সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী।
Click This Link
৮। সব হজ্জে কুরবানী দেয়া লাগে না। হজ্জ তিন প্রকার। ইফরাদ, তামাত্তো ও কিরান। তামাত্তো ও কিরানে কুরবাণী দেয়া লাগে আর ইফরাদ হজ্জে কুরবানী দেয়া লাগে না। যদি বলেন যেগুলোতে কুরবাণী দেয়া লাগে সেগুলোতে কুরবাণী দিতে হয় কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে যে, প্রথম কথা হল- হজ্জ কিভাবে করতে হবে তা রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন:
خذوا عني مناسككم

অর্থাৎ,আমার কাছ থেকে তোমাদের হজ্জের কার্যকলাপ শিখে নাও। (মুয়াত্তা মালেক, বায়হাকী)

আর হজ্জ না করলেও তো কুরবাণী দিতে হয়। এটা তার পরিবর্তে হতে পারে। আল্লাহই ভালো জানেন।


৯. বিবাহের সময় রাসুল (সাঃ) ও খাদিজা (রাঃ) দ্বীনে হানিফ তথা সত্য দ্বীনের উপর ছিলেন। যা ছিল সে সময়ে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত সত্য ধর্ম। কেননা, খাদিজা (রাঃ) এর সম্পর্কে তিনি কখনো মুর্তিপুজা করেছেন বলে জানা যায় না। তাদের বিবাহ ইবরাহীম (আঃ) এর আনীত দ্বীন অনুযায়ীই হয়েছে। রাসুল (সাঃ) এর চাচা আবু তালেব সেই বিবাহে খুৎবাহ পাঠ করেছেন। এটা থেকে তাই প্রমাণিত হয়।

১০. মাথা ন্যাড়া করা আবশ্যক নয়; বরং, যার ইচ্ছা ন্যাড়া করতে পারে আর যার ইচ্ছা চুল ছোট করতে পারে।

১১. কোন একটি দেশে কাউকে আসতে দেয়া না দেয়ার অধিকার আছে ঐ দেশের কর্তৃপক্ষের। তাদের ইচ্ছা হলে কাউকে সে দেশের ভিসা দেবে আর ইচ্ছা হয় দেবে না। তেমনি তাদের অধিকার আছে দেশের কোন এলাকায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া বা না দেয়া। সুতরাং, মক্কায় কোন অমুসলিমকে যেতে দেয়া হয় না এটাও তাদের অধিকার। তাদের ভিসাতে সরাসরি লেখা থাকে কিনা জানিনা। তবে, পরোক্ষভাবে এটা শর্ত থাকে যে, মক্কাতে কোন অমুসলিমের প্রবেশ নিষেধ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×