পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অঙ্গীকার আছে কেবল কথায়, কাজে নয়- এমন অভিযোগই উঠে এলো কলকাতার সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত থেকে।
Published : 10 Aug 2013, 03:24 PM
শুক্রবার সকালে রেড রোডে লাখো মুসল্লির এই জমায়েতে মাওলানা কারী ফজলুর রহমান বলেন, রাজ্যের মুসলমানদের জন্য মমতা সরকারের সব প্রতিশ্রুতি আর অঙ্গীকার কেবল ‘কাগজ, ডেস্কের ড্রয়ার আর রাজনৈতিক বুলির’ মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
“যাদের প্রয়োজন, তারা কখনো সরকারের কাজের সুফল পায় না। তারা সব সময়ই বঞ্চিত থাকে।”
ঈদুল ফিতরের এই নামাজের মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেড রোডে হাজির হন ‘সংখ্যালঘু’ মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
খোলামেলা কথা বলার জন্য পরিচিত তৃণমূল নেত্রী মমতা মুসল্লীদের সামনে দাঁড়িয়ে স্পষ্টই স্বীকার করে নেন, মুসলমানদের জোরালো সমর্থন পাওয়ার কারণেই সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার দলের বিপুল বিজয় সম্ভব হয়েছে।
নির্বাচনের সময় সহিংসতায় তৃণমূলের যে সমর্থকরা নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ‘৭০ শতাংশই’ মুসলমান- এমন তথ্য জানিয়ে মমতা বলেন, “তাদের এই আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। তৃণমূলের এখন প্রতিদান দেয়ার সময়।”
মাওলানা কারি ফজলুর রহমান পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান মুখ্য্যমন্ত্রীর কাছে। পশ্চাৎপদ এলাকাগুলোতে স্কুল-কলেজ স্থাপনের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।
মমতা বলেন, তিনি চান সংখ্যালঘু পরিবারগুলো থেকে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় এগিয়ে যাক। ডাক্তার হোক, ইঞ্জিনিয়ার হোক, বিভিন্ন পেশায় ভাল করুক।
“খিলাফত কমিটির আমন্ত্রণে আমি এই রেড রোডে ঈদ উৎসবে শামিল হতে এসেছি। আপনাদের সবাইকে ঈদ মোবারক।”
রেড রোডে মামতার প্রতিশ্রুতির বৃষ্টির মধ্যেই পাল্টা অভিযোগ তোলেন মাওলানা ফজলুর রহমান।
“কিছু লোক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টায় আছে-এটা এখন স্পষ্ট। কলকাতার মধ্যেই কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আগে বাম ফ্রন্টের আমলে এরা কখনোই মাথা তুলতে পারেনি। কিন্তু একটি সংগঠন গত দুই বছরের মধ্যেই পুরো রাজ্যে ১৬০০ শাখা খুলেছে।”
সেই সংগঠনের নাম উচ্চারণ না করলেও এই মুসলিম নেতা বলেন, “বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য অনেক দিনে। এটাকে সেরকমই রাখতে হবে। আর তা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিৎ।”
রেড রোডে ঈদের নামাজ আদায় করা তৃণমূল এমপি সুলতান আহমেদ বলেন, “মুসলমান নারী-পুরুষেরা যেভাবে জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাতে প্রমাণ হয় যে তারা তৃণমূলকেই সমর্থন করেন। আমি বলব না যে সরকার সব কিছু করতে পেরেছে। তবে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। ফল পেতে আমাদের হয়তো আরো কিছুটা সময় লাগবে।”
তিনি জানান, রাজ্য পুলিশ, হোম গার্ড ও সিভিল ডিফেন্সে এখন ১১ থেকে ১৫ শতাংশ মুসলমান নিয়োগ পাচ্ছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের যে কোনো চেষ্টা সরকার কঠোর হাতে দমন করছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরো রাজ্যে ভাল ফল পেলেও মুসলিম অধ্যুষিত মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরসহ চব্বিশ পরগনার কিছু এলাকায় একটি বড় অংকের ভোটার কংগ্রেস ও বাম ফ্রান্টের পক্ষে ভোট দিয়েছেন এবার। এসব এলাকায় মমতার ঘনিষ্ঠ মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে বাঙ্গালি কেউ না থাকাকে এর একটি কারণ বলে ধারণা করা হয়।
কলকাতার বিশ্লেষক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, “তার (মমতার) ঘনিষ্ঠ মুসলমান ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সবাই উর্দুভাষী, অবাঙ্গালি। ওইসব জেলার বাঙ্গালি মুসলমান ভোটারদের ওপর তাদের তেমন কোনো প্রভাব নেই।”
তার অভিযোগ, এই উর্দুভাষী ধর্মীয় নেতারা বাংলাদেশের ব্যাপারে মমতার নীতিকেও প্রভাবিত করছেন।
“তিস্তা চুক্তিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মমতার যে আচরণ, তার পেছনে এই অবাঙ্গালি নেতাদের ইন্ধন রয়েছে।”
এদের মধ্যে মমতা সরকারের নগর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তো প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন, “বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে ভোটে জেতাতে তিস্তার পানি আমরা কেন দেব?”
সুখরঞ্জন বলেন, এখন কলকাতার বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে এ ধরনের মৌলবাদীরা সক্রিয়, যারা শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে কলকাতার রাস্তায় মিছিলও করেছে।