তেল সমৃদ্ধ মুসলিম দেশ- এই ছিল ইরাকের পরিচয়। ছোট বেলা থেকে এই পরিচয়েই আমরা তথা বিশ্ববাসী ইরাককে চিনেছি। বুশ কতৃক ইরাক দখলের পর থেকেই আমরা ইরাকের জাতিগত বিভেদের বিষয়টি বেশি করে জানতে পারলাম। তখন পশ্চিমা মিডিয়ার অন্ধ অনুসরনে আমাদের গণমাধ্যমও ইরাকের জাতিগত বিভেদের বিষয়ে লিখতে গিয়ে সুন্নি-শিয়া-কুর্দী এই তিন ভাগ করে খবর পরিবেশন করতো।আমাদের বুদ্ধিজীবী এবং গণমাধ্যমের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বানরের বৈশিষ্টের মত। অর্থাৎ পশ্চিমারা যা বললো কোন বাছবিচার না করে তা ববহু আবৃত্তি করে যাওয়া। আমরা কেউ এটা প্রশ্ন করি নাই কেন ইরাককে শিয়া-সুন্নি ও কুর্দি এই তিন ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। প্রথম দুই ভাগ ধর্ম ভিত্তিক অর্থাৎ শিয়া মুসলমান আর সুন্নি মুসলমান। কিন্তু কুর্দি কেন এই দুই ভাগের মধ্যে শামিল হবে ? কুর্দি হচ্ছে একটি জাতি যার মধ্যে শিয়া-সুন্নি- ইহুদী-খ্রীষ্টান সবই আছে।আসলে ইরাক দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পরিকল্পনা ছিল ইরাককে ঐ তিন ভাগে ভাগ করে তিনটি ছোট ছোট রাষ্ট্রে পরিণত করা। এছাড়া তুরস্ক সিরিয়া ইরান ও ইরাকের কুর্দি অঞ্চল নিয়ে কুর্দিদের জন্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইরাকের ইহুদী কুর্দীরা খুবই তৎপর ছিল, আরবিলে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতাও অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইরান-সিরিয়া ও তুরস্কের সচেতন পদক্ষেপ,এবং ৩৩ দিনের যুদ্ধে লেবাননের হিজবুল্লাহর হাতে ইসরাইলের শোচনীয় পরাজয়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন মধ্যপ্রাচ্য গঠনের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
যাক সেসব কথা। সম্প্রতি ইরাক আরেক মহাসমস্যায় দিন অতিক্রম করছে। আজ অবশ্য ইরাকের আকাশ থেকে মুসিবতের কালো মেঘ অনেকটাই কেটে গেছে। গত আট মাস আগে দেশটিতে নির্বাচন হয়ে গেলেও এখনো সেখানে কোন দলের পক্ষে সরকার গঠন করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ একদিকে ইরান পন্থী মালেকীর নেতৃত্বাধীন শিয়া মোর্চা , অন্য দিকে সৌদী আরব ও মার্কিন সমর্থিত তথাকথিত সুন্নি মোর্চা।ক্ষমতার মসনদ নিয়ন্ত্রণ করতে দুপক্ষই মরিয়া। এই তথাকথিত সুন্নি মোর্চা নিয়ে একটু ইঙ্গিত করাই আজ আমার লেখার উদ্দেশ্য।
পশ্চিমা মিডিয়ায় সৌদী আরব এবং মার্কিনপন্থী ইরাকীয়া এলায়েন্সকে সুন্নি ব্লক বলা হচ্ছে। বাংলাদেশেও গণমাধ্যম তাই বলছে। বিশেষকরে জামাতপন্থী তথা সৌদী রাজতন্ত্রের তল্পিবাহক মিডিয়া নয়াদিগন্ত,সংগ্রাম ও দিগন্ত টিভি এক্ষেত্রে আরেকটু এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সৌদীপন্থী এই সুন্নি ব্লকের যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি একজন পাশ্চাত্যপন্থী শিয়া।এজন্যই শিরোনামে বলেছি ইরাকে সুন্নিদের কি না দৈন্যদশা ! অবশ্য কেউ হয়ত আমার সাথে দ্বিমত পোষন করে বলবেন সুন্নিদের নয় আমেরিকা ও ইসরাইলের লেজুড় সৌদীপন্থীদের কি না দৈন্যদশা। (সূত্র )