somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'ইভ টিজিং'- রাজনীতিবিদরা উদাসীন কেন

১১ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'ইভ টিজিং'- রাজনীতিবিদরা উদাসীন কেন

শওগাত আলী সাগর

'ইভ টিজিং'- একটি জঘন্য যৌনসন্ত্রাসের কি কাব্যিক নাম দিয়েছে আমাদের মিডিয়া। নামটার মধ্যেই মনে হয় এক ধরনের রোমান্টিকতা আছে। আছে এক ধরনের প্রশ্রয়। প্রতিদিনই খবরের কাগজে, টেলিভিশনে ‘ইভ-টিজদের’ বীরত্বের (!) কাহিনী প্রচারিত হচ্ছে। অনেকটা ফলাও করেইতো বটে। এই সব বীরদের (!) কারনে এ পর্যন্ত বেশ ক’জনকে আত্মাহুতি পর্যন্ত দিতে হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ‘ইভটিজরা’ বোধ হয় এই মৃত্যু দেখে আরো বেশি উল্লসিত হচ্ছে। তাদের কর্মতৎপরতা তাতে বাড়ছে বই কমছে না।

ঘৃণিত একটি অপকর্মের নাম কেন, কিভাবে যে 'ইভটিজিং' হলো তা ভেবে পাচ্ছি না। ইংরেজী ‘এডাম এণ্ড ইভ’ থেকে কি এই ইভ শব্দটা বেছে নেওয়া হয়েছে? ইভ মানে ‘হাওয়া’—সৃষ্টির প্রথম নারী, তারই প্রতিনিধি আজকের নারীকুল ? ‘আদমের’ উত্তরসূরীরা একুশ শতকে এসে ‘হাওয়া’দের বিরুদ্ধে জেহাদে নেমেছে ? অক্সফোর্ড ডিক্সনারি অবশ্য টিজের অর্থ করেছে- খেলাচ্ছলে বা নিষ্ঠুরভাবে কাউকে উত্যক্ত করা। আরো একটি অর্থ সেখানে আছে, সেটি হলো যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণে বাধাগ্রস্থ হয়ে আক্রমণ করা। বাংলাদেশের ‘ইভটিজরা’ আসলে শেষোক্ত ক্যাটাগরিতেই পড়ে। স্পষ্টতই তারা যেটি করছে সেটি যৌনসন্ত্রাস। বাস্তবতা হচ্ছে কাব্যিক নামে ভূষিত (!) করে আমরা নতুন এই উপদ্রবটাকে কিছুতেই রুখতে পারছি না। পত্রপত্রিকায় যে হারে লেখালেখি হচ্ছে সেই হারে এটি দমনে কাজ হচ্ছে বলেও মনে হচ্ছে না।

আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এতো কথা বলেন, দেশ নিয়ে মানুষ নিয়ে এতো দরদ-ভালবাসা উগরে দিচ্ছেন প্রতিদিন মিডিয়ার পাতায়। কিন্তু ইভটিজিং নামের এই যৌনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায়ের কিংবা মাঝারী পর্যায়ের কোনো রাজনৈতিক নেতা কোনো বক্তব্য দিয়েছেন বলে চোখে পড়ে নি। কিন্তু কেন? প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক অবশ্য বলেছেন, বিরোধীদলের সমর্থকরাই ‘ইভটিজিং’ করছে। আমার ধারনা ছিলো নানকের এই বক্তব্যের পর বিরোধীদল থেকে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে তাঁকেই ‘ইভটিজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কেননা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সম্প্রতি ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী রাতে গুলশানের অফিসে কী করেন.... সাকা চৌকে রাতে নিজের গাড়ীতে করে বাসায় নিয়ে গিয়েছেন’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিওতো রুচিহীন টিজিং । বিএনপি থেকে অবশ্য এই ধরনের কোনো বক্তব্য আসে নি। হতে পারে নানকদের এখনো ‘বাচাল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলেই তাদের কথাবার্তা রাজনৈতিক মহলে তেমন পাত্তা পায় না। কিন্তু একটি প্রকাশ্য যৌনসন্ত্রাস নিয়ে যখন পুরো জাতি উদ্বিগ্ন, সেই উদ্বেগ রাজনৈতিক নেতা/নেত্রী বা রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পর্শ করে না, তা ভাবতেও গা শিউরে উঠে। তাহলে কাদের হাতে আমরা দেশ ও জাতির ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছি!

এটা সত্য, রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে নামলে, সোচ্চার হলে সম্ভবত যৌনসন্ত্রাসের কারনে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না । আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সারাদেশে যে নেটওয়ার্ক, তাতে করে দেশব্যাপী একটি সামজিক সচেতনতাও তৈরি হতো । আমাদের রাজনীতিকদের ভাবনায় মানুষ তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বলেই সেট হয়ে ওঠে নি।

প্রশ্ন হচ্ছে, বখাটে তরুণদের এই শক্তির উৎস কি? মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সচেতন মানুষদের দেশব্যাপী আহাজরীতেও তাদের দৌরাত্ম কমছে না কেন ? মনে পড়ে, আশির দশকের গোড়ার দিকে নরসিংদীতে ‘কুতুব সাহেব’ নামে একজন এসপি ছিলেন। নাম তাঁর সম্ভবত কুতুব উদ্দিন, নরসিংদীতে সর্বহারা পার্টি দমনে বিশেষ ভূমিকা ছিলো তার। তাঁর এসপি হিসেবে দায়িত্বপালনকালে শুধু নরসিংদী শহরই নয়- পুরো জেলায়ই স্কুল, রাস্তাঘাট তো বটেই, বাড়ির সামনেও ২/৩ জন তরুণ-কিশোর এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতো না। কুতুব সাহেবের কয়েকদিনের দাবড়ানিতেই পুরো জেলা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিলো।

সে-সময় হঠাৎ করেই নরসিংদীতে বখাটেদের উৎপাত বেড়ে গিয়েছিলো। ছোকড়ারা দল বেধে স্কুলসংলগ্ন গলি, রাস্তার মোড়ে, দোকানে বসে থাকতো। স্কুলগামী মেয়েদের দূর থেকে নানা ধরনের মন্তব্য ছুড়ে দিতো। অভিভাবকরা হয়ে ওঠেন অতিষ্ট। ঘটনাটা কুতুব সাহেবের কানে যেতেই তিনি মাঠে নামেন, ঘুরে দেখেন সারা শহর। তারপর শুরু হয় তার অপারেশন। ফোর্স নয়, ইউনিফর্ম নয়, সাদা পোশাকেই তিনি বখাটেদের দাবড়াতে শুরু করলেন । মাত্র কয়েকদিনেই ‘এসপি কুতুব’ হয়ে উঠেছিলেন বখাটেদের আতংক।

তাহলে এখন হচ্ছে না কেন ? প্রশাসনকে কি খুব উদাসীন মনে হচ্ছে না ? নাকি ‘ওপর থেকে ‘ কোনো নির্দেশ যাচ্ছে না? কেন? এই সব ঘটনায় বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার তেমন একটা সুযোগ নেই বলে ! কেউ বলতে পারেন কেন ইভটিজিং নামের এই যৌনসন্ত্রাস এতোটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলো?
http://notundesh.com/motmotantor.html
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×