somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনুকে একটি প্রশ্ন: তাহের কি জিয়াকে বন্দি করতে চেয়েছিলেন?

১১ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনার মতো ৭ নভেম্বরকে নিয়েও বিতর্ক শেষ হয়নি। বরং যত দিন যাচ্ছে ততই বিতর্ক বিস্তৃৃত হচ্ছে। পাখা মেলছে। স¤প্রতি আমাদের সময়ে ৭ নভেম্বর নিয়ে মীর শওকত ও হাসানুল হক ইনুর পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের পর নতুন করে আলোচনায় আসছে ৭ নভেম্বরের বিষয়টি। এই ঐতিহাসিক দিনের পটভূমিকা, প্রস্ততি ও চূড়ান্তপর্বের মূল সাক্ষী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।

৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় গণঅভ্যুত্থানের অপারেশনাল পরিকল্পনার শেষ মিটিং হয় কর্নেল তাহেরের বড় ভাই আবু ইউসুফ বীরবিক্রমের বন্ধু প্রকৌশলী আনোয়ার সিদ্দিকের গুলশানের বাসভবনে। সেখানে তাহেরের প্রধান সহযোগী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনু। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যখন নতুন ইতিহাসের গোড়াপত্তনের প্রস্ততি চলছে, টু ফিল্ড রেজিমেন্টের জওয়ানরা যখন উত্তেজিত তখন রাতের আঁধারে একটি সাদা জিপে চেপে কর্নেল তাহের সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে যান। তার জিপে ছিলেন গণবাহিনীর পলিটিক্যাল কমিশনার হাসানুল হক ইনু। ৭ নভেম্বর ভোরে রেডিও স্টেশনে বিপ্লবের ঘোষণা দেয়ার সময়ও উপস্থিত ছিলেন ইনু। তিনিই পারেন ৭ নভেম্বরের ভেতরের ও বাইরের সকল তথ্য ও ঘটনার বিস্তৃৃত বিবরণ দিতে। জীবিতদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কাছে থেকে দেখেছেন সিপাহি বিপ্লবের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে।

পীর হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আলাপচারিতায় ইনু ৭ নভেম্বর বিষয়ে অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু তিনি খুব কৌশলে এড়িয়ে গেছেন একটি বিষয়। যা কেবলমাত্র ৭ নভেম্বরের পরিকল্পনাকেই পাল্টে দেয়নি গোটা দেশের ইতিহাসকেই প্রবাহিত করেছে ভিন্ন স্রোতে। বিষয়টি হচ্ছে, জিয়াকে মুক্ত করার পর কর্নেল তাহের কেন তাকে সেনানিবাসের বাইরে আনতে চাইছিলেন? একপর্যায়ে তিনি জিয়াকে বাইরে আনার জন্য প্রবল চাপও সৃষ্টি করেন। নানা কৌশলও অবলম্বন করেন। কেন? জিয়া সেনানিবাস ছেড়ে বাইরে আসতে না চাইলে তাহেরের সঙ্গে তুমুল বাকবিতণ্ডাও হয়। তাহের চিৎকার করতে করতে ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, তাহের কি জিয়াকে বাইরে এনে বন্দি করতে চেয়েছিলেন?

জাসদ যখন অভ্যুত্থানের প্রস্ততি নিচ্ছিল তখন একটি কৌশলগত প্রশ্ন ওঠে- ‘কে এই বিপ্লবের নেতা? কার নামে স্লোগান দিয়ে বিপ্লবী সিপাহিরা সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসবে?’ দলীয় সিদ্ধান্ত হয়, কর্নেল তাহেরের নামেই জিন্দাবাদ ধ্বনি উঠবে। ৬ নভেম্বর যখন শেষ মিটিং চলছিল তখন সেখানে উপস্থিত একজন সৈনিক প্রশ্ন করেন, কে আমাদের বিপ্লবের নেতা? তাহের দলীয় সিদ্ধান্ত সরাসরি উপস্থাপন না করে বলেন, আপনারাই ঠিক করুন কে আপনাদের নেতা। সৈনিকদের একজন বলে ওঠেন, জিয়াউর রহমান আমাদের নেতা। উপস্থিত অন্য সৈনিকরাও বলেন, হ্যাঁ, জিয়াউর রহমানই আমাদের নেতা। তাহের সৈনিকদের আবেগকে সমর্থন করলেও বুঝতে পারেন নেতৃত্ব ক্যান্টনমেন্টেই থেকে যাচ্ছে। দূরদর্শী তাহেরের বুঝতে বাকি থাকে না যে, জাসদের পরিকল্পিত বিপ্লবের সকল সুফল ভোগ করতে যাচ্ছে জিয়া। তাকে ‘মাইনাস’ করতে না পারলে জাসদের পরিকল্পনা সফল হবে না।

তাহের জিয়াকে মুক্ত করে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে নিয়ে আসার জন্য তার বিশ্বস্ত টু ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির মেজর মহিউদ্দিন, মেজর মোস্তফা ও সুবেদার মেজর আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি বিশেষ স্কোয়াড গঠন করেন। এরাই জিয়ার বাসভবনে গিয়ে জিয়াকে মুক্ত করেন। তখন সেখানে সাধারণ সিপাহিরা উপস্থিত হয়ে জিয়াকে কাঁধে তুলে স্লোগান দিতে থাকেন- আল্লাহু আকবর, জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ। মেজর মহিউদ্দিন জিয়াকে বলেন, স্যার, আপনাকে কর্নেল তােেহরর কাছে যেতে হবে। পুরো পরিস্থিতি উপলব্ধি করে জিয়া বলেন, আমি টু ফিল্ডে যাচ্ছি। তাহেরকে সেখানে নিয়ে আস।

রাত ১টায় এলিফ্যান্ট রোডে নির্ধারিত বাসায় উপস্থিত হয়ে বিপ্লবী সেনা সংস্থার নেতা নায়েক সিদ্দিক তাহেরকে বলেন, স্যার, জিয়াউর রহমান আপনাকে টু ফিল্ডে যেতে বলেছেন। তাহের তখন বলে ওঠেন ডব ধৎব ফবধভবধঃবফ.

কর্নেল তাহের আরো ২ বার চেষ্টা করেন কৌশলে জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে নিয়ে আসতে। ৬ নভেম্বর রাত ২টা ৩০ মিনিটে টু ফিল্ডে জিয়ার রুমে ঢুকে তাহের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল- সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে জনতার উদ্দেশ্যে তাহের ও জিয়া ভাষণ দেবেন। জিয়া এই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে তাহেরকে বলেন, তুমি তো সিভিলিয়ান তোমার কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু আমি এখনো ইউনিফর্ম পরা। প্লিজ তাহের, মিটিংয়ের ব্যাপারটা তুমি দেখো।’ তাহেরের ২য় পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। ওই সময়ই তাহের জিয়াকে আরেকটি প্রস্তাব দেন। বলেন, আপনি রেডিও স্টেশনে গিয়ে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দেন। তাতেও রাজি হন না জিয়া। তখন তাহের খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে চিৎকার করতে থাকেন। উপস্থিত কর্নেল আমিন, মুনীর ও সুবেদার আনিস জিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, জিয়াকে বাইরে যেতে দেয়া হবে না। তার ভাষণ এখানেই রেকর্ড করা হোক। কর্নেল তাহের তার ভাই আবু ইউসুফ ও অন্যদের নিয়ে রাগে চিৎকার করতে করতে টু ফিল্ড ত্যাগ করেন। জিয়া টু ফিল্ডে বসেই বেতার ভাষণ দেন।

খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহের বারবার কেন জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আনার জন্য চেষ্টা করছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব সম্ভবত একমাত্র হাসানুল হক ইনুই দিতে পারবেন। কারণ তিনিই ছিলেন ওই ঐতিহাসিক কালপর্বের অন্যতম স্রষ্টা।

আকিদুল ইসলাম
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৫৫
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভ্রমণ স্মৃতি - ছাংশা, হুনান প্রদেশ, চীন ২০১৮ সাল

লিখেছেন নাঈম আহমেদ, ২৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৪২


জায়গাটির নাম ইউয়েলু শান বা 岳麓山 বা Yuelu Mountain. দক্ষিণ-মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা শহরে অবস্থিত। পাহারটি শহরের মাঝে বয়ে চলা শিয়াং নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত, ছবিতে আমার পেছনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সহেলিয়া তার নাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪১

সহেলিয়া তার নাম
ধাপারিয়া ছিল তার গ্রাম
আমার বাড়ির সামনে দিয়ে
আসতো যেতো প্রতিদিনই সে
জানালাটা খুলে আমি
তার দিকে চেয়ে তার
হেঁটে যাওয়া দেখতাম



মাথায় দুটি বেণি ছিল
দু পাশে দুটি লাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্যতার কলঙ্ক ইজরাইল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম তোরাহ। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদি এবং সকল একেশ্বরবাদীরা বিশ্বাস করে তোরাহ হচ্ছে প্রফেট Moses ( মুসা নবী ) এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক থেকে ভালোবাসার পথে: আমার এবং মীমের গল্প

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ২:৩৭

## প্রথম অধ্যায়: অনলাইন থেকে অফলাইনে

ফেসবুকের পাতায় একটি সাধারণ দিন। আমি তখন নিউইয়র্কের ব্যস্ত শহরে বসে থাকি, চারপাশে মানুষের কোলাহল আর কাজের চাপ। হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি পোস্টে কমেন্ট করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মোছাব্বিরুল হক, ৩০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫৮



শত মমতার গল্প গাঁথুনি পৃথিবীর ভাঁজে ভাঁজে
কিছু নয় তার মাতৃতুল্য মা তাঁর তুলনা নিজে।
কত প্রিয়জন বন্ধু-স্বজন প্রাণপ্রিয় সন্তান
হতে পারে পর এলে কভু ঝড়
ভুলে শত অবদান।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×