somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের ঈদে

১০ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উনিশে নভেম্বর উনিশশ একাত্তর।
ঋতুর হিসেবে এখন হেমন্ত ঋতু। কিন্তু বেশ ভালো শীত পড়ছে ক'দিন ধরে। বিকেলেই ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে। চাইনিজ রাইফেলটা পরিস্কার করছিলো জয়নাল। রাইফেল পরিস্কার করতে করতেই নদীর দিকে তাকালো সে। একবার চোখ বুলিয়ে নিলো বুড়িগঙ্গায়। না সন্দেহজনক কিছু নেই।
চরের নাম ডিক্রির চর। পূবে আর উত্তরে বুড়িগঙ্গা নদী। *১ দক্ষিনে ধলেশ্বরী। পশ্চিমে ধলেশ্বরীর খাল। নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে খুব কাছে এ চর। কিন্তু নদী বেষ্টিত হওয়ায় পাকিস্থানীদের কাছে দূর্গম। বাঙ্গালীদের কাছে নদী চির আপনজন। পাকিস্থানীদের কাছে নদী অঘটনের স্থান।
রাইফেল পরিস্কার করতে করতে চোখ বেয়ে পানি নেমে এলো জয়নালের। মা'র কথা মনে পড়ছে। কতদিন মা'র সাথে দেখা হয় না।
'কিরে চোকখে পানি কে?' কমান্ডার নুরু মিয়া চৌধুরী বাচ্চু জিজ্ঞেস করলো।
জয়নাল চোখ মুছলো। 'কিচ্ছু না। '
কমান্ডার আর কিছু জিজ্ঞেস না করে ছনের ঘরটায় গিয়ে বসলেন। সিগারেট টানতে লাগলেন।
জয়নাল এগিয়ে এলো তার কাছে।
'রোজা রাখছস্?' কমান্ডার বাচ্চু জিজ্ঞেস করলো।
'হ, রাখছি।' জয়নাল উত্তর দিলো।
'আমি রাখতে পারি নাই। তুই তো অপারেশন কইরাও সবগিলি রোজা করলি।'
'হ, কইরা ফালাইছি।'
'কিছু কবি?'
'আমি মা'র লগে দেহা করতে যামু।'
'কবে?'
'ঈদের দিন সকালে।'
'আজকা চাঁন দেহা গেলে তো কালকা ঈদ। যা। অসুবিধা কি? কালকা, পরশু তো আর কোন অপারেশন নাই। তয় যাবি কেমনে?'
'কে, আইট্টা।'
'আইট্টা তো যাবি বুঝলাম। কি বেশে?'
'কি বেশে যামু তুই কইয়া দে।'
'দুধ বেচঁতে যা। এদিকথে প্রত্যেক দিন অনেকে দুধ বেঁচতে যায়। আর্মিগো সন্দেহ অইতো না।'
'ঠিক আছে।'
সন্ধায় চাঁদ দেখা গেলো। অন্যবার চাঁদ দেখা গেলে বাড়িঘরে হৈ চৈ পড়ে যায়। বাচ্চারা মিছিল করে ছড়া কাটে, 'এক দুই সাড়ে তিন। রাইত পোহাইলে ঈদের দিন।' এখন দিন অন্যরকম। কে ছড়া কাঁটবে। মা-বাবারা সন্ধার পর বাচ্চাদের বাইরে একেবারেই বের হতে দেন না। কখন কোথায় গোলাগুলি শুরু হয়ে যায় তার ঠিক নেই।
জয়নাল রাতেই গ্রামের এক রাখালকে ঠিক করে রাখলো। সকালে তাকে এক 'কাইরা' (দুধ নেয়ার বিশেষ পাত্র) দুধ দেবে। এক কাইরায় সাত কেজি দুধ জায়গা হয়। ডিক্রির চরে সাত কেজি দুধের দাম চৌদ্দ আনা। শহরে সাত কেজি দুধের দাম বেয়ালি্লশ আনা। এক কাইরা দুধ বিক্রি করতে পারলে আটাশ আনা লাভ।



জয়নাল যখন রাখালকে গরুর দুধের জন্য ঠিক করছে তখন নারায়ণগঞ্জেরই আরেক প্রানত্দে বন্দরের হাজরাদি-চাঁনপুর গ্রামে আফতাব উদ্দিনের বাড়িতে বৈঠক করছিলো অন্য আরেকদল মুক্তিযোদ্ধা। এ দলের কমান্ডারের নাম আশাবুদ্দিন।
'বাই রাজাকার সুলতানরে কিছু করন দরকার। আর্মিগো লগে থাইক্কা অনেক অত্যাচার করতাছে।'
কমান্ডার আশাবুদ্দিন কথা কম বলেন। শোনেন বেশি। আজিম, সুলতান রাজাকারের প্রসঙ্গ তুলতেই সুলতানের অত্যাচারের ঘটনাগুলি এক লহমায় মনে পড়ে গেলো কমান্ডারের। বন্দরে পাকিস্থানী আর্মিরা আসার পর থেকেই সুলতান রাজাকার তাদের পথ দেখিয়ে বাড়ি বাড়ি নিয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামীলীগ আর হিন্দুদের বাড়িতে বাড়িতে আগুন দিয়েছে। মুসলিম লীগের মধ্যে যারা আর্মিদের সহায়তা না করে নিরব ছিলো তাদের উপরও সে হামলা চালিয়েছে। মুসলিম লীগের নেতা চেয়ারম্যান নুরুল হকের রেশন শপে আগুন দিয়েছে। মদনগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পাশে চিত্তবাবুর বাড়িতে নিয়ে গেছে পাকিস্থানী বাহিনীকে। পাকিস্থানীরা চিত্তবাবুকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে সোনাকান্দা ব্রীজের উপর। হামলার সময় এ পরিবারের এক মা কোলের বাচ্চাকে নিয়ে পাশের জঙ্গলে পালায়। মা বাচ্চার মুখ চেপে ধরে ছিলো। কিন্তু এক সময় বাচ্চাটি কেঁদে উঠলে আর্মিরা মাকে জঙ্গলে খুঁজে বের করে। মা'র সামনে শিশুকে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। পরে মাকেও হত্যা করে।
'সুলতানরে পামু কই।' কমান্ডার জিজ্ঞেস করলো।
'বাই কালকা সুলতান ঈদের নামাজ পড়তে আইবো সোনাকান্দা মসজিদে। ওহেনে ওরে ধরমু।' কাদির উত্তর দিলো।
'ঠিক আছে।' কমান্ডার অনুমোদন দিলেন।



ভোরের আজানের সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেলো জয়নালের। নদীতে কোন বড় নৌকা বোধ হয় যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি বৈঠার পানি কাটার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। জয়নাল বাইরে এসে দাড়ালো। নদী দিয়ে একটা সাম্পান যাচ্ছে। রাজাকারদের লুটপাটের ভয়ে অনেক মহাজনি নৌকা-ই এখন ভোরে চলাচল করে।
নামাজ পড়ে জয়নাল অপেক্ষা করতে লাগলো। সূর্য উঠলে রাখালের বাড়ি যাবে। কুয়াশা কম দু'দিন ধরে। শীত বেশি। কয়েকদিনে একটা জিনিস বুঝেছে জয়নাল। কুয়াশা বেশি হলে শীত কম থাকে। আর শীত বেশি হলে কুয়াশা কম থাকে। বিশেষ করে ঠান্ডা বাতাস থাকলে কুয়াশা থাকে অনেক কম।
আসত্দে আসত্দে আকাশ পরিস্কার হয়ে আসছে। জয়নাল ক্ষেতের আল দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জুনু রাখালের বাড়ি গেলো। দুধ দুইয়ে কাইরা ভরে রেখেছে জুনু। পয়সা শোধ করে কাইরা নিয়ে বের হলো জয়নাল। হাঁটতে হাঁটতে আবার ক্যাম্পে ফিরে এলো। ওদের কমান্ডার বাচ্চু ঘুম থেকে উঠেছে।
'আমি যাই তাইলে।'
'খাড়া।'
নিজের কোমড় থেকে জয়নালকে একটা রিভলবার দিলো কমান্ডার বাচ্চু। জয়নাল সেটি নাভির নিচে লুঙ্গির বাঁধনে গুঁজে নিলো।
'যদি আর্মি ধইরা ফালায়?' কমান্ডার প্রশ্ন করলো।
'মাইরা তারপর মরমু। ধরা পড়তাম না।'
'ইনশাল্লাহ। জয় বাংলা।'
'জয় বাংলা।'
দুধ নিয়ে হাঁটতে থাকলো জয়নাল। ক্ষেতের আইল দিয়ে। আইলের ঘাস শিশিরে ভিজে আছে। দু'পাশে শর্ষার ক্ষেত। এখনও শর্ষা ফুল ফোটার সময় হয়নি। ফুল ফুটলে আরো মোহময় হয়ে উঠবে এ পথ প্রানত্দর।
বুড়িগঙ্গা পার হলো জয়নাল। নৌকার মাঝি এক আনা নিলো পার করে দিতে। ঘাটের পাশে তিনজন রাজাকার দাঁড়িয়ে আছে। দু'জনের হাতে বন্দুক। তাবে তারা কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করছে না।
হেঁটে খানপুর যেতে কমপক্ষে এক ঘন্টা লাগবে। তবে জিমখানায় গেলেই দুধ বিক্রি করা যাবে। দুধ বিক্রি করলে হাটার গতি বাড়বে।
জয়নাল হাঁটতে হাঁটতে পাইকপাড়া কবরস্থানের সামনে এলো। ক্ষেতের আইল থেকে পৌরসভার রাসত্দায় ওঠার পর দেখতে পেলো আর্মির একটা জীপ। এখন পেছন ফেরাও সম্ভব না। পেছন ফিরলে পাকিস্থানীদের সন্দেহ হবে। জয়নাল হাঁটতে লাগলো।
'এ, ইদার আও।'
(এই, এখানে এসো।)
খুব সুন্দর করে ডাক দিলো এক আর্মি অফিসার।
জয়নাল এগিয়ে গেলো। সে কাজ চালানোর মতো উদর্ু ভালোই জানে। খানপুরে ওদের মহল্লার পাশে অনেক মারোয়ারি থাকে। ওদের সাথে কথা বলতে বলতে শিখেছে।
'আসসালামু আলাইকুম সাহাব।' জয়নাল সালাম দিলো।
'ঠিক হে, ঠিক হে। ইসমে কেয়া হে?'
(ঠিক আছে। ঠিক আছে। এটার ভেতরে কি?)
'ইসমে দুধ হে সাহাব।'
(এটার ভিতরে দুধ সাহেব।)
'দুধ কি আন্দার কেয়া হে?'
(দুধের ভিতরে কি?)
'দুধ কি আন্দার কেয়া? কুছ নেহী।'
(দুধের ভিতরে কি থাকবে? কিছু না।)
'থোরা হামভি তো দেখে, ইসকি আন্দার কুছ হে ইয়া নেহী।'
(একটু আমাকেও দেখতে দাও এর ভেতরে কিছু আছে কি নেই।)
একজন অফিসার বললো। তারপর অফিসারটি এগিয়ে এসে জয়নালের হাত থেকে দুধের পাত্র নিয়ে রাসত্দার কিনারে পুরো দুধ ঢেলে দিলো।
'আরে সালা, কুছ ভি তো নেহী। ইয়ে তো ইমানদার আদমী হে।'
(আরে শালা, কিছুই তো নেই, এ তো দেখছি ঈমানদার মানুষ।)
ওর কথায় অন্য সৈন্যরাও হেসে উঠলো।
চরম অপমানিত বোধ করলো জয়নাল। কিন্তু এ মূহূর্তে কিছু বলা যাবেনা। দুধ গেছে যাক। ওরা ওকে ছেড়ে দিলে ঝামেলা এড়ানো যাবে। জয়নাল মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছে।
সৈন্যটি দুধের পাত্র জয়নালের দিকে এগিয়ে দিলো।
'লে যাও ভাই। ইসমে হামকো কোই দিলচাসবি নেহী।'
(নিয়ে যাও ভাই। এটার প্রতি আমাদের কোন আগ্রহ নেই।'
জয়নাল কোন কথা না বলে দুধের পাত্র নিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। অল্পদূরে যেতেই অফিসারটি আবার ডাকলো।
'এ সোনো।'
(এই শোনো।)
জয়নালের বুক ধ্বক করে উঠলো। ওরা কি আগে থেকেই খবর পেয়ে গেছে? ও এ পথ দিয়ে আসবে? ওর কাছে অস্ত্র আছে? অফিসারটি এগিয়ে আসছে। কি করতে হবে হিসাব করে ফেললো জয়নাল। প্রথম সূযোগেই গুলি করে দিতে হবে। আর লাশটাকে ধরে রাখতে হবে নিজের শরিরের উপর। এ সূযোগ নিয়ে অন্যদের উপর গুলি চালাতে হবে।
অফিসারটি অস্ত্র তাক করে আসেনি। অন্যরাও অস্ত্র তাক করে নেই। তবে অস্ত্র সবারই হাতে। অফিসারটির হাতে একটি লাঠি। লাঠি দিয়ে জয়নালের কোমড়ের দু'পাশে খোঁচা দিলো সে। বুকে খোঁচা দিলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, 'তুমহারা নাম কেয়া হে?'
(তোমার নাম কি?)
'জয়নাল। জয়নাল আবেদীন।'
'কিধারসে আয়ে হো।
(কোত্থেকে এসেছো।)
'আজ ঈদকা দিন হে ভাই। দুধ বেঁচতা হু মে। লোগ ইয়ে লেতাহে সেমাই বানানে কে লিয়ে। তুম তো ও গিরা দিয়া। আব ভাই ঈদকা নামাজ পড়না হে। আবভি তো জানে দো।'
(আজ ঈদের দিন রে ভাই। আমি দুধ বিক্রি করি। মানুষ এটা কিনে সেমাই বানাতে। তুমি তো এটা ফেলে দিলে। এখন ভাই ঈদের নামাজ পড়তে হবে। এখন তো যেতে দাও।)
এবার জয়নালের কন্ঠে একটু ঝাঁজ ছিলো। সৈন্যরা এবার তাকে আটকালো না। জয়নাল হাঁটতে লাগলো।
অনেকেই যে দূর থেকে তাকে দেখছিলো এখন টের পেলো জয়নাল। কেউ কেউ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,'ভাই কি হয়েছিলো। কি বললো।'
ছুটে এলো ওর বন্ধু রতনের মা। রতনও যুদ্ধে গেছে। তাড়াতাড়ি জয়নালকে বাসায় নিয়ে গেলো। এখন কিছুতেই বাসায় যেতে দেবে না রতনের মা। তার ধারণা কেউ জয়নালের খবর আর্মিকে দিয়েছে। তাই আর্মি তাকে এতক্ষন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলো। এখন ছাড়লেও সামনে ধরতে পারে।
কিন্তু জয়নালের তো যেতেই হবে। মা'র সাথে দেখা করার জন্য তার মনটা কেমন কেমন করছে। শেষে বুদ্ধি বের করলেন রতেনের বড় ভাই এনায়েত। তিনি নাপিত ডেকে এনে দাড়ি পুরো কামিয়ে ফেললেন জয়নালের। চুল কেটে ফেললো। তারপর এনায়েতের পাঞ্জাবী পড়িয়ে দিলো। কেউ খবর দিয়ে থাকলেও এখন বর্ননায় মিল পাবে না। পরিচিত এক রিকশা চালককে ডেকে এনে জয়নালকে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হলো।
খানপুরের বাসায় পৌছে মা'র বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো জয়নাল। একাত্তরের ঈদ সত্যিই করতে পারবে ভাবতে পারেনি সে।



বিশে নভেম্বর উনিশশ একাত্তর । ঈদ-উল-ফিতর। অন্যবার ঈদে বন্দরের সোনাকান্দা মসজিদ ভরে মানুষ রাস্তায় চলে যায়। আজ মসজিদে চার রাকাত মানুষই হয়নি। ইমাম সাহেব আরবী খুতবা শেষ করেও কিছুক্ষন দোয়া-দুরুদ পড়লেন মানুষের অপেক্ষায়। কিন্তু মসজিদ ভরলো না। মানুষ প্রাণ নিয়ে ছুটছে। নামাজ পড়তে এসে আবার কোন বিপদে পড়ে এ আশঙ্কায় মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা কম। মসজিদে নামাজ পড়তে দলবল নিয়ে এসেছে সুলতান রাজাকার। তার লোকজন তাকে ঘিরে বসেছে মসজিদে। তবে অল্প অল্প করে ঠিক সুলতানের পাশে গিয়ে বসেছে আব্দুল কাদির। তার কোমড়ে ষ্টেনগান। পেছনে সালাউদ্দিন লরিঙ্গা আর কালাম। রাজকারদের ঘিরে আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।
'আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর...।' মুয়াজ্জিন একামত দিতে লাগলো। নামাজ শুরু হলো। ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতে সুরা ইয়াসিন পুরোটা পড়লেন। মুসলি্লরা এত লম্বা সুরা পড়ার কারন খুঁজতে লাগলেন মনে মনে। ইমাম কি আশা করছেন আরো মুসলি্ল আসতে পারে। তাই রাকাত দীর্ঘ করে মুসলি্লর জন্য অপেক্ষা। নাকি রাজাকারদের কাছে নিজেকে ভালো ইমাম প্রমানের চেষ্টা!
দ্বিতীয় রাকাতে তাকবির দেয়ার সময় রাজাকার সুলতানের হাত গিয়ে পড়লো কাদিরের ষ্টেনগানে। মূহূর্তে সুলতান বুঝে নিলো অবস্থাটা কি। চিৎকার করে বললো,'সবতে বাইরো, মসজিদের বিতরে মুক্তিযোদ্ধা।'
ওর চিৎকার আর দৌড়ে নামাজ লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। ওর পিছনে ছুটলো কাদিরও। ষ্টেনগান নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো ওর উপর। কিন্তু ষ্টেগানের লক খুলছিলো না। মসজিদের ভেতর দু'পক্ষের মধ্যে তুমুল মল্লযুদ্ধ শুরু হলো। কাদিরের বজ্রমুঠির একের পর এক ঘুষিতে মদ্যপায়ী সুলতানের নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। এ মূহূর্তে এক রাজাকার দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। কাদির বুঝলো তাদের দ্রুত সড়ে পড়া দরকার। পাকিস্থানী আর্মিরা খবর পেয়ে গেলে ওরা হয়তো ফিরে যেতে পারবে না। অল্প দূরেই আর্মি ক্যাম্প। রাজাকারটা গিয়ে খবর দিয়ে দিতে পারে। কাদির ষ্টেনগান দিয়ে সুলতানের মাথায় প্রচন্ড আঘাত করলো। সুলতান অচেতন হয়ে গেলো। কাদিরের ইশারায় তাড়াতাড়ি মসজিদ ত্যাগ করলো মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি।
সেদিনের অভিযান ব্যার্থ হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের এ অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লো এলাকার মানুষের মুখে মুখে। ভয় ধরে গেলো বন্দরের রাজাকারদের মনে। পরে আরেক অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধা রতনের নেতৃত্বে দিনের বেলা রাজাকার সুলতানকে গুলি করে হত্যা করা হয়।#

*১ পূবের বুড়িগঙ্গা এখন গতিপথ পরিবর্তন করে মরা খাল। ডিক্রিরচরের পশ্চিমদিকে এখন বুড়িগঙ্গা।
*২ মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন টুলু ও মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম আজিম এর বর্ননা অনুযায়ী সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আমার অন্য গল্পগুলি পড়তে ক্লিক করুন:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

শরীফ উদ্দিন সবুজ
৭-১১-২০১০
০১৯১৩৩৯৮২২০




সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:২৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×