somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তসলিমা নাসরিনের নির্বাসন এবং অধমের দুটি কথা..........

১০ ই নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তসলিমা নাসরিন অনেকগুলো কারণে এদেশে আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিত । এ কথা নতুন করে আর বলার কিছু নেই। তসলিমা তার লেখার কারণে বিতর্কিত। লেখা ছাড়া তার অন্য কোন দোষ নেই যে তাকে কেউ হাত উচিয়ে কথা বলতে পারে। এদেশের হাজার বছরের সমাজ বাস্তবতাকে উপজীব্য করে ‘লজ্জা’ নামের একটি বই লেখার অপরাধে তাকে ধর্মেরষাড়রা দেশ ত্যাগে বাধ্য করে। তার অপরাধ সে নারীদের অধিকার চেয়েছেন। এদেশে আওয়ামীলীগ বিএনপি ও জামাত ছাড়া আসলে আর কারো কোন কিছু চাওয়া থাকতে নেই। এ কথা ভুলে যাওয়া তার একটা অপরাধ।

নির্বাসিত হয়ে এরপর থেকে তসলিমা উদ্বাস্তু মানুষের মত বিভিন্ন দেশে থেকেছেন। এদেশের ধর্মব্যবসায়ীদের মত হলো তসলিমা তার লেখনির মধ্যদিয়ে আমাদের সমাজের প্রতিষ্ঠিত ধর্মকে আঘাত করেছে। তসলিমা কেন প্রতিষ্ঠিত মতাদর্শের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তার কারণ বের করতে গেলে ইতিহাসের পেছনের পাতার দিকে আমাদের একটু ফিরে তাকাতে হয়।

ইতিহাস বলে বাঙালি জাতির হতদরিদ্র অবস্থার পেছনের কারণ হলো, ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের যত্রতত্র ধর্মকে টেনে আনার অতিরিক্ত প্রবণতা। ধর্মের অতিরিক্ত টানাটানির কারণেই এদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির এ বেহাল দশা। এটা আমার বানানো মুখের কথা নয়। বিভিন্ন গবেষণার মধ্য দিয়ে উঠে আসা সামাজিক বাস্তবতা। কথায় আছে, ‘বাঙালি সবকিছু বিচারে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।’ তাইতো আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে অবদান সত্যিই হাস্যকর। অন্যরা যখন সৃষ্টিতত্ত্বের রহস্য খুঁজে বের করার জন্য হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গবেষণা করে সহস্র রজনী বিনিদ্র রাত কাটায় আমরা সেখানে ধর্মগ্রন্থের কোন এক লাইনকে আশ্রয় ধরে পেয়েছি পেয়েছি বলে আনন্দের ঢেকুর তুলি। সেই সঙ্গে মুর্খ আদম সন্তান নির্মাণের হিড়িক তুলি। একজন নারী হয়ে তসলিমা আমাদের সেই দূর্বলতার ক্ষতটি ধরতে পেরেছে বলেই সামাজিক দায়িত্ব থেকে তিনি লেখনিতে নাম লিখিয়েছেন। লিখেছেন বাঙালির হাজার বছরের শত শত অনুচ্চারিত দুর্বলতাগুলো। এটাই তার অপরাধ ছিল।


সেই লেখনিই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনিময়ে হারাতে হয়েছে মাতৃভুমিতে বসবাসের অধিকার। মা বাবাসহ আত্মীয় স্বজনের সান্নিধ্যে থাকার অধিকার । দেশের আবহাওয়া ভোগের অধিকার। ধর্ম ব্যবসায়ীরা তার সে অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

এদেশে অনেক বড় পাপ করেও অনেকে ফুলের মালা নিচ্ছে। আবার অনেকে দু চারটি ভাল কথা বলে সবকিছু হারাচ্ছে। হারানোদেও তালিকায় তসলিমা অন্যতম। তার হারানোর পাল্লাটি ভারি। তসলিমার আজকের পরিণতির জন্য এদেশের অনেত বড় বড় সাহিত্যিক, কবি, সমালোচক, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা বহুলাংশে দায়ী। টিভি খুললেই এখন যে বুদ্ধিজীবীদের মাশাল্লাহ মার্কা চেহারা মোবারক দেখতে পাওয়া যায়। দু একজন আবার প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছেও ঘেষে গেছে। তসলিমা ছিল সাধারণ পরিবারের একটি মেধাবী মেয়ে। এ সকল ভন্ড বুদ্ধিজীবীরা তাকে ফাঁপিয়ে ফুলিয়ে তথাকাথিত ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে তাকে প্ররোচণা দিয়েছে। তসলিমার লেখার মধ্য দিয়ে তিনি যতটা না আলোচিত হয়েছে এসকল ভন্ড বুদ্ধিজীবী এরচেয়ে ঢের লাভবান হয়েছে। আর মৌলবাদীরা যখন তার বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে মাঠে নামল। তখন এরা ছিল নিরব দর্শক। তসলিমা বিতর্ককে কাজে লাগিয়ে এদেশের একচ্ছত্র মালিক বলে পরিচিত উভয় দলই বেশ রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েছিল এটা কার না জানা।
ধর্মাবাজদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে এরা তসলিমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নিরব থাকছে। উভয় দিক থেকেই এরা লাভবান। অথচ উভয় দলের প্রধানই হতভাগ্য তসলিমার মতই এক একজন
নারী।

নিজ দলের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কয়েক মাস পর পর দেশে রাজনৈতিক গৃহযুদ্ধ বাধানো, স্বাধীনতার সময় গোলাম আজম, নিজামি, সাইদিদের ভুমিকা, রাজনীতিবিদদের দেশবিরোধী কর্মকান্ড, বুদ্ধিজীবী নামধারী ভন্ডরা মিথ্যা চাপাবাজির কথা কার না জানা। এসব ধোয়া ধোয়া তুলসিপাতারা নানা অপকর্ম করেও সসম্মানে এবং দাপটের সঙ্গেই দেশে থাকছে। কিন্তু সামান্য কিছু সত্য কথা লেখার কারণে তসলিমার মত একজন নারীকে নির্বাসনে থাকতে হচ্ছে। এটাকি পুরো জাতির জন্য সত্যিই দু:খজনক নয়।

এদেশে যুদ্ধাপরাধীরা গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে জাতির নেতৃত্ব দিতে পারে। সন্ত্রাসীরা ক্ষমতা নিয়ে থাকতে পারে। সেনাশাসকরা দেশশাসনে অংশগ্রহণ করতে পারে। মোল্লারা পুরো জাতিকে ভুল পথে পরিচালিত করেও বুক ফুলিয়ে হাটতে পারে। দুই নেত্রী দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়েও কোটি কোটি ভোট পেয়ে একের পর এক প্রধানমন্ত্রী হতে পারে। তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণকারী মসজিদে গিয়ে সবার সঙ্গে একই কাতারে দাড়িয়ে নামাজ পড়তে পারে। অন্যের ডিগ্রি নিজের নামে চালিয়ে দিতে পারে। যে কেই যে কোন সময় দিনকে রাত রাতকে দিন করতে পারে। এই অসম্ভব সম্ভবের দেশে সবাই সব পারে। শুধু সম্ভব না তসলিমা নামের এক নির্বাসিত নারীকে দেশে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি করে দিতে।

কেন সম্ভব না তা আমার জানা নেই। আপনাদের কারো জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন। আর একই সঙ্গে জানাবেন.. তসলিমাকে দেশে ফিরতে সুযোগ দেয়া কী আমাদের অনুচিৎ! অনুচিৎ হলে কেন? দয়া করে তা জানাতে এগিয়ে আসবেন আশা করছি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×