somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক তাবলীগি ভাই এর আত্মপোলব্ধি (১ম উসুল: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ -পর্ব ১)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর যে তিনি আমাকে তাঁর দ্বীন শিক্ষা দিয়েছেন এবং আমাকে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত বানিয়েছেন। আমিতো এক সাধারণ মানুষ ছিলাম, হয়তো অন্য অনেকের মতো এই দুনিয়ায় লিপ্ত থেকে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনকে না জেনেই মারা যেতে পারতাম। আল্লাহ তা থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ।

বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের যে মেহনত চলছে, তার মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে হেদায়েতের রাস্তা চিনিয়েছেন। আল্লাহ ঐ ভাইদেরকে কবুল করুন। অন্য কেউ স্বীকার করবে কিনা জানিনা, দাওয়াতের মেহনতের সাথে লেগে থাকা ভাইদের আন্তরিকতা, পরিশ্রম ও ইখলাস বা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য কাজ করার গুনটা যে কতটা গভীর, তা আল্লাহই জানেন। তারা টাকা-পয়সার অহঙ্কার ভুলে এক মুসলিম ভাই অন্য মুসলিম ভাইদের ইকরাম করছেন। এক্ষেত্রে কোন বংশ, আভিযাত্য বা অন্য কোন দুনিয়াবী স্ট্যাটাস বাধাঁ সৃস্টি করতে পারেনি। আল্লাহ তাদেরকে কবুল করুন। আমীন।

আমলদার ব্যাক্তি যখন কাউকে দাওয়াত দেয়, তখন যাকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তার উপর তাছীর অনেক বেশী হয়। তাছাড়া নিজে আমল না শুধু করে অন্যকে দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারে কুরয়ানে এসেছে,

“হে মুমিনগণ, তোমরা যা করো না, তা কেন বলো? তোমরা যা করোনা, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।” – সুরা সফঃ ২-৩

ভেবে দেখলাম, আমি মানুষকে যে দাওয়াত দিচ্ছি, তার উপর আমল না করলে, আমি আলাহর দরবারে অপরাধী হয়ে যাবো। খেয়াল করে দেখলাম, ৩য় উসুল “ইলম ও জিকির” এর ব্যাপারে আমি বেশ উদাসীন। বিশেষতঃ শুধুমাত্র দুই বেলা “ফাজায়েলে আমল” অধ্যয়ন ছাড়া তেমন কোন ইলম চর্চা হচ্ছে না। তাই আমি দাওয়াতের মেহনতের পাশাপাশি ইলম চর্চার কথা চিন্তা করলাম। তাছাড়া ইলম চর্চার অসংখ্য ফজীলত আমি নিজেই বয়ান করেছি, পাঠকরা ইলম এর ফজীলত যথেস্ট জানেন বলে, আমি সেদিকে যাচ্ছি না।

ছয় উসুলের প্রথম উসুল “কলিমা শাহাদাত – আশহাদুআল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু” সমপর্কে ইলম হাসিল করতে গিয়ে আমি নিম্ন লিখিত কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। অন্যান্য দ্বীনি ভাই-বোনরা যাতে ঐ প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করেন এবং তা হতে কিছু উপকৃত হতে পারেন, তাই তাদের সামনে সেগুলি তুলে ধরলামঃ

আমি চিন্তা করে দেখলাম, আমাকে যদি ইলম হাসিল করতে হয়, তবে অবশ্যই কুরাআন-হাদীস ভিত্তিক ইলম হাসিল করতে হবে কারণ রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা আকড়ে ধরো, তবে তোমরা পথভ্রস্ট হবেন – তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর (সাঃ) সুন্নাহ”।

তাছাড়া মুরব্বীদের মুখে একটি আয়াত শুনেছি, “অতএব জ্ঞানীদেরকে (আহলে জিকির) জিজ্ঞেস করো, যদি তোমাদের জানা না থাকে”। – আন নাহলঃ ৪৩।

তাই যে কোন ব্যাপারে না জানলে, আল্লাহ আহলে জিকিরকে অর্থাৎ যারা জিকিরের বা কোরয়ান-হাদীসের জ্ঞান রাখেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে বলেছেন। তাই আমি কোরয়ান-হাদীস অনুযায়ী ছয় উসুল এর উপর জ্ঞান অর্জন করার নিয়্যত করলাম।

১। ১ম উসুল: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (পর্ব ১)।

কলিমা সম্পর্কে ইলম হাসিল করতে গিয়ে দেখলাম বদরের যুদ্ধের আগে নাকি আবু জেহেল কেঁদে কেটে আল্লাহর কাছে দুয়া করেছিলো, হে আল্লাহ আমাদের এবং তাদের মাঝে যারা সত্যের উপর আছে, তাদের তুমি বিজয় দান করো। মক্কার মুশরিকরা
নাকি আল্লাহর উপরও কিছু কিছু ব্যাপারে ঈমান রাখতো। পবিত্র কুরয়ানে এসেছে,

“যদি তাদেরকে প্রশ্ন করো, কে তাদের সৃস্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে – আল্লাহ”। – সূরা যুখরুফঃ ৮৭।

“তুমি জিজ্ঞাসা করো, কে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও জমিন থেকে রুযী দান করেন, কিংবা কে তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির মালিক ? তাছাড়া কে জীবিতকে মৄতের ভিতর থেকে বের করেন এবং কেইবা মৄতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন ? কে করেন কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থা ? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ। তখন তুমি বলো, তারপরেও তোমরা ভয় করছো না ?” – সুরা ইউনুস ১০: ৩১

” তুমি বলো এ পৄথিবী এবং এতে যা কিছু আছে এসব কার ? যদি তোমরা জানো। তারা বলবে, আল্লাহর। বলো, তবে তোমরা কেন স্বরণ রাখোনা ? বলো, কে সাত আসমানের মালিক এবং কে আরশের মালিক ? তারা সাথে সাথে বলবে, আল্লাহ। বলো, তবে কেন তোমরা মেনে চলোনা ? বলো, কে তিনি, যার হাতে সবকিছুর কতৃত্ব রয়েছে, আর কে নিরাপত্তা প্রদান করেন অথচ যাকে নিরপত্তা পেতে হয় না, যদি তোমরা জানো ? তারা সাথে সাথে বলবে, আল্লাহ। বলো, তবে কেমন করে তোমাদের সম্মোহন করা হয়েছে ?” – সুরা আল মুমিনুন ২৩ : ৮৪-৮৯

চিন্তা – ১। তাই আমি চিন্তা করেছি, এখন থেকে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার সময় মক্কার কাফিরদের এ ধরনের ঈমান থাকার কথা জানাবো যাতে তারা বুঝতে পারেন, আল্লাহকে শুধু রিযিকদাতা, পালনকর্তা মানলেই যথেস্ট হবেনা বরং এ ধরনের ঈমান মক্কার কাফিরদের ও ছিলো ।

আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে পাঠিয়ে একই দাওয়াত দিয়েছেন, তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহর ইবাদত করো আর সকল মিথ্যা মাবুদদের কে অস্বীকার করো। তাইতো মক্কার কাফিররা রাসুল (সাঃ) এর উপর এতো ক্ষেপে গিয়েছিলো।

“তোমাদের পূর্বে যত রাসুলদের আমি পাঠিয়েছি তাদের সকলকে ওহী মারফত জানিয়েছি যে, আমি ছাড়া সত্যিকার কোন উপাস্য নেই, তাই তোমরা সকলে একমাত্র আমারই ইবাদত করো”। – সূরা আম্বিয়াঃ ২৫।

কাফিররা বলেছিলো, এই লোক কি আমাদের সকল মাবুদদেরকে বাদ দিতে বলছে আর একমাত্র তার ইলাহকে মেনে নিতে বলছে? কুরয়ানে এসেছে,

“সে কি আমাদের সমস্ত মাবুদদের এক মাবুদ বানিয়ে ফেলতে চায়, এ তো বড়ই অবাক হওয়ার কথা।” – সূরা ছোয়াদঃ ৪-৫।

“হে আমার জেলের সাথীদ্বয় ! ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপালক ভালো, না কি এক আল্লাহ যিনি একক ও প্রচন্ড শক্তিধর? তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যে সমস্ত জিনিসের ইবাদত করছো তারা শুধু নাম মাত্র, যাদেরকে তোমরা আর তোমাদের বাপ-দাদারা নামকরণ করেছো।” সূরা ইউসুফঃ ৩৯-৪০।

চিন্তা – ২। তাই আমি চিন্তা করেছি, এখন থেকে মানুষকে আল্লাহ ছাড়া সকল মিথ্যা উপাস্যদেরকে অস্বীকার ও পরিত্যাগ করতে বলবো। এছাড়া নিজের মনগড়া ভাবে এসব মিথ্যা মাবুদের বর্ণনা দিবোনা, বরং কুরান-হাদীস হতে এসব মিথ্যা মাবুদদের বর্ণনা দিবো। আর তাদের অস্বীকার করার উপায় খুঁজবো।

আমি দেখলাম রাসুল (সাঃ) এর জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে প্রথম উসুল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর দাওয়াত দিয়ে অর্থাৎ মিথ্যা মাবুদদের অস্বীকার করা আর এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার উপর দাওয়াত দিয়ে।

চিন্তা – ৩। তাই আমি চিন্তা করেছি, মিথ্যা মাবুদদেরকে অস্বীকার করার পর সবাইকে কুরয়ান-হাদীস অনুযায়ী আল্লাহর উপর ঈমান আনতে বলবো। নিজেদের মনগড়া ভাবে নয়।

কুরয়ানের কোন কোন আয়াতে দেখলাম, “যারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখে …” এই কথা বলে শুরু হয়েছে। আলিমদের থেকে বুঝলাম, ওযু, গোসল, নামাযের যেভাবে পূর্বশর্ত আছে, তেমনি ঈমান আনারও কিছু পূর্বশর্ত আছে। যেভাবে বিভিন্ন কারণে ওযু, গোসল নস্ট হয়, সেভাবে ঈমানও নস্ট হয়, তাই ঈমান নস্ট হওয়ার কারণগুলি ভালোভাবে জানবো ও সবাইকে জানাবো।

চিন্তা – ৪। তাই আমি চিন্তা করেছি, ঈমান আনার পূর্বশর্তগুলি ও ঈমান নস্ট হওয়ার কারণগুলি কুরান-হাদীস থেকে জানবো ও সবাইকে জানানোর চেস্টা করবো।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×