somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রশ্নবিদ্ধ মিডিয়া তথা সাংবাদিকতা

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সর্বশেষ রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায়ে ফাঁসির আদেশ না হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়াতে অসন্তোষ প্রকাশ করে অনলাইন ব্লগার এ্যাক্টিভিস্ট নামে একদল তরুণের আহ্বানে যুদ্ধাপরাধিদের ফাসীর রায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় রাজধানীর শাহাবাগে অবস্থান কর্মসূচীর আয়োজন করে। প্রথমত এটি গুটি কয়েক ব্লগারের সমাবেশ হলেও আমাদের দেশের সবগুলি মিডিয়া একযোগে এই সমাবেশকে প্রমোট করায় তা বিশাল আকার ধারণ করে। সারা দেশ জুড়ে এর পক্ষে ব্যাপক ‘গণজাগরণে’র সৃষ্টি হয়। শাহাবাগ মোড়ের এই চত্বরের নাম হয়ে যায় প্রজন্ম চত্বর। এর আদলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরী হয় নতুন নতুন প্রজন্ম চত্বর। কিন্তু কয়েক দিন না যেতেই রাজিব হায়দার নামে উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন ব্লগার খুন হলে এই আন্দোলনের গতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। তার খুনের ব্যাপারে দায়ী করা হয় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামীকে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজীবের ব্লগীয় পোষ্টগুলো মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তাতে দেখা যায় রাজীব ছিলো একজন চরম পর্যায়ের নাস্তিক। তার লেখাগুলো পড়ে দেশের আপামর ধর্মপ্রাণ জনতা দারুণভাবে মর্মাহত হন। রাজীব তার লেখাগুলোতে আল্লাহ, রসুল এবং ইসলামের ব্যাপারে ব্যাপক বিষেদাগার করে এবং ইসলামের বিভিন্ন আমলগুলো নিয়ে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ গল্প লেখার মতো ধৃষ্টতা দেখায়। প্রথমত এই আন্দোলন যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের শ্লোগান উচ্চারিত হওয়া শুরু করলে সাধারণ জনতা এই আন্দোলনের নেপথ্য নায়কদের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে সন্ধিহান হয়ে পড়ে। একথা সত্য যে এই আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলো কট্টর নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষী। সুতরাং এদেশের শতকরা নব্বই শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হওয়ায় তারা এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ফুসে উঠে। কিন্তু বর্তমান সরকার সাধারণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শাহবাগ কেন্দ্রীক এই আন্দোলনকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন দিয়ে যায়। ইতিমধ্যে তারা এই আন্দোলনের দাবীর প্রতি নমনীয়তা দেখিয়ে সংসদে যুদ্ধাপরাধের আইনে সংশোধনীও আনে। পাশাপাশি এই আন্দোলনের নাস্তিক ব্লগার উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা বিধান করে জনমতকে আরো বেশী খেপিয়ে তোলে। তবে সবচাইতে বিতর্কিত ভুমিকাটি পালন করে এই দেশের সবধরণের প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়া এবং তাদের কর্মীবৃন্দ। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ তাতে করে তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষের যে অভিযোগ আনয়ন করে তার সত্যতার প্রমাণ পায়। তাছাড়া সংবাদ মাধ্যমের কর্মীগন নাস্তিক, বামপন্থী ব্লগারদের অপতৎপরতা সম্বন্ধে যে অনবিহত তাও নয়। তাদের মধ্যে অনেকে নিজেরাই ব্লগে নিয়মিত লেখালেখিতে নিয়োজিত। জেনে শুনে দেশের গুটি কয়েক নাস্তিকদের আয়োজনে করা এই আন্দোলনকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করায় তারা আজ নিজেরাই প্রশ্নবিদ্ধ।
মিডিয়া হচ্ছে একটা দেশের আয়না। মিডিয়ার কোন দল থাকে না, থাকতে পারে না। বাস্তবে যা ঘটে তা তুলে আনাই তাদের প্রধান কাজ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। নির্লজ্জভাবে মিডিয়া সরকার সমর্থিত নীতিভ্রষ্ট ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের এই আন্দোলনকে জাতির চাওয়া আখ্যা দিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে নিরপেক্ষতার মৃত্যু ঘটিয়েছে। যেন মিডিয়া কর্মীদের নিজেদেরই এই চাওয়া। এই আন্দোলনে বিরোধী পক্ষের কোন কথাই মিডিয়ায় স্থান পায়নি এবং ভিন্নমতের মিডিয়াকর্মীদেরকে ঐ স্থান থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। অথচ আমরা দেখতে পেয়েছি মিডিয়া কতটা একতরফাভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা শাহবাগ চত্ত্বর থেকে সরাসরি সংবাদ প্রচার করেছে, সেখানকার নেতা কর্মীদেরকে স্টুডিওতে ডেকে এনে টকশো করিয়েছে, তাদেরকে বীরোচিত সম্মান করে রাতারাতি ষ্টার বানিয়ে দিয়েছে। এই আন্দোলনকে এতই উচ্চ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে যে মিডিয়া থেকে বার বার এই আন্দোলনকে একাত্তরের সংগ্রামের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এই আন্দোলনকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনে সংবাদ মাধ্যমের ভুমিকাই প্রধান যা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে এড়ায় নি।
গত শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সংগঠিত বিক্ষোভ মিছিলে তাদের এই পক্ষপাতি আচরণের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পুলিসের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও ছিলেন শুক্রবারের সংঘর্ষের অন্যতম টার্গেট। ঐদিনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে ঢাকায় ৭ জন ও চট্টগ্রামে ৫ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজী টিভির সাংবাদিক মাসুদুর রহমান, একাত্তর টিভির আরিফুজ্জামান পিয়াস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ক্যামেরাম্যান নুরুল ইসলাম, আমার দেশের চিফ ফটোগ্রাফার মীর আহমেদ মীরু, বিটিভির একজন ক্যামেরাম্যানসহ মোট সাতজন সংবাদ কাভার করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একই সময় বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের সময় জামায়াত-শিবির ও সাধারণ মুসুল্লিদের হামলায় আহত হন মাছরাঙা টিভির সাংবাদিক আবদুল্লাহ তুহিন।
এদিকে চট্টগ্রামের আন্দারকিল্লা এলাকায় জুমার নামাজের পর জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে সাধারণ মুসুল্লিদের মিছিল বের হয়েই পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়। এতে ৫ সাংবাদিক আহত হন ।
সার্বিক পরিস্থিতি সংবাদ মাধ্যম এবং সংবাদ কর্মীদের পেশাগত কর্র্মকাণ্ডকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। আর এর জন্য তাদের একপেশে নীতিই দায়ী বলে মনে হচ্ছে।
একটা কথা ভুললে চলবে না, মানুষের ধর্মবিশ্বাস এমনই এক স্পর্শকাতর বিষয় যে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশই এই বিষয়টি সতর্কতার সাথে যধহফষব করে থাকে। যতকিছুই করা হোক মানুষের মনের গভীরে ধর্মবিশ্বাস চেতন বা অবচেতনভাবে গেঁড়ে আছে। তাই বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে গুটিকয় ধর্মবিরোধীদের মতামত সহ্য করা হলেও বিদ্বেষ বা শত্র“তা পোষণ বা বিষেদাগার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হয়। দুনিয়ার বুকে যত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, যুদ্ধ ইত্যাদির মূলে ঐ ধর্মীয় চেতনাই প্রধান। তাই এই ইস্যুতে সরকার এবং সংবাদ কর্মীদের খুবই সচেতন বা সতর্কতার সঙ্গে তাদের নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করা উচিৎ। নচেৎ এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হবে তখন তা আর কারো নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, সেটা আস্তিক কি- নাস্তিক কি, ধর্মভীরু নাকি ধর্মবিদ্বেষী, সাধারণ নাকি অসাধারণ, বুদ্ধিজীবি কি বুদ্ধিহীন, মিডিয়া কর্মী কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেউই নিরাপদ থাকতে পারবে না।
আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের ভেবে দেখা উচিৎ যে আমাদের পাশ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশ ভারতে অনেক ধর্মবিশ্বাসীদের বসবাস। এত ধর্মবিশ্বাসী ভাগ থাকা স্বত্ত্বেও শুধুমাত্র সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে আজও তারা একসাথে ‘এক ভারত’ হয়ে বসবাস করতে পারছে। কিন্তু তাদের রাষ্টীয় নীতি যদি একচোখা হতো তাহলে বিশ্বের বুকে ভারত নামে কোন কিছু থাকতো কি না বড় সন্দেহ। আমেরিকার মতো সেকুলার রাষ্ট্রও তাদের দেশের ধর্মগুলির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে ভয় পায়। অনেক দেশে ধর্মবিশ্বাসীদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাদের দাবী অনুযায়ী ধর্মীয় আইনকে রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃতি প্রদান করেছে। পরিশেষে আমি বলতে চাই, আমাদের এই হতদরিদ্র, গরীব, হাজারো সমস্যায় জর্জরিত দেশে ধর্মের মতো এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ের বিরুদ্ধে কারা প্রতিনিয়ত উস্কানীমূলক নীতি নির্ধারণ করছে, কার ইঙ্গিতে, কোন স্বার্থ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এই আত্মঘাতী সমস্যাকে, কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় জিইয়ে রাখছে তা বোঝা খুবই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রের স্থিতি এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখার স্বার্থে উচিৎ তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:৪৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!!

লিখেছেন অন্তর্জাল পরিব্রাজক, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:২১



দয়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে “বাঘ” বলা বন্ধ করুন!! X( এরা ছাগলের দলই ছিল, তাই আছে, তাই থাকবে :-B !! এরা যেমন ধারার খেলা খেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×