(আমার মাথায় সারাক্ষন নতুন নতুন চিন্তা আসে।সেটা বোধ হয় বেদনা থেকে সৃজনশীল কিংবা সুন্দর কিছু সৃষ্টিও সম্ভব।আমি সারাক্ষন গভীরভাবে ভাবতে থাকি।সময় ও চলে যায় দ্রুত।মজার ব্যাপার হলো বেশি ভাবি বলেই কিছু করতে পারি না।পোড়া কপাল আমার!)
রাত ৩ টায় হিমির সাথে কথা শেষ করে,ঘুমুতে গেলাম।বিছানায় কিছুক্ষনের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম এবং স্বপ্নে দেখালাম- আইনস্টাইন সাইকেলে চড়ে বিভিন্ন পথে,মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।পরক্ষনেই আবার দেখি,রম্যা-রোল্যা,ডারউইন,এলিয়ট,
চে,আইনস্টাইন একটা বটগাছের নীচে বসে,সেই সব পুরনো কথা বার্তা বলছেন।তাদের প্রত্যেকের হাতে কফি আর সিগারেট।আর মজার ব্যাপার হলো- বটগাছের উপরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন- লিউ নার্দো দা ভিঞ্চি,আর্কিমিডিস,নিউটন,নেপোলিয়ন,কার্ল মাকর্স,গ্যাটে।তাদের হাতে কফি বা সিগারেট নেই।আমাদের রবীন্দ্রনাথ এই সব গুনী ব্যাক্তিদের পুকুর ঘাটে বসে দেখছিলেন।আর সেই পুকুরে মনের সুখে সাঁতার কাটছিলেন আরজ আলী মাতব্বর।
দিনদিন হিমি যেন শরৎ চন্দ্রের নায়িকা মতো হয়ে উঠছে।নিঃশব্দে আর কোমল সৌন্দর্যে আমার রক্তের সাথে মিশে যাচ্ছে।হিমি এখন আমার জীবনের আত্মা।হিমিকে ছেড়ে আমি কি করে থাকব?প্রকৃতির নিয়মেই যেন প্রতিদিন হিমির আত্মাকে আমি একটু একটু করে আবিস্কার করি।খুব ঝড়ের মধ্যে এক জোড়া পাখি একটা আশ্রয় খুঁজে পেলে যেমন এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে পরস্পরকে আগলে ধরে তেমনি আমি আর হিমি পরস্পরকে গভীর মমতা দিয়ে জড়িয়ে থাকি।
সেদিন বিকেলে হিমির সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করলাম।একটু পরেই আমি খুব বুঝতে পারলাম- হিমির মন টা এক আকাশ দুঃখে ভারী হয়ে গেছে।এমনিতেই হিমির কষ্ট কিছু কম নেই।কেন যে আমি হঠাৎ করে এমন রেগে যাই!প্রতিবার হিমির সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর'ই বুকের মধ্যে এক আকাশ কষ্ট ওলট পালট জমে আমার কন্ঠ বন্ধ হয়ে আসে।কোন সাড়া শব্দ না,শুধু চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে।
একদিন হিমির চোখে জল দেখে,আমি হিমিকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে স্বাভাবিক করে তুলি।আমি হিমিকে বলি- মানুষকে পড়তে হয়।খোলা বইয়ের মতোন।পড়লেই মানুষের আপন হওয়া যায়।হিমি আমাকে প্রশ্ন করেছিল-'আচ্ছা,মায়ের সঙ্গে সন্তানের নাড়ীতে সম্পর্ক তো সরাসরি থাকে,বাবার সঙ্গে কী থাকে?আমি একটু হেসে উত্তর দেই,আরে বোকা মেয়ে শোনো-বাবার সঙ্গে মায়ের মানে নারীর সম্পর্ক থাকে এবং সেটি সন্তান পর্যন্ত লম্বা করতে হয়।এবং তাতেই পুরুষের জীবন সার্থক হয়।দুঃখ আসলে সেটাকে চেপে রেখে বদ করে রাখতে হয়,তাকে নিজের মধ্যে দিয়েই আবার ছেড়ে দিতে হয়।
"কত যুগে যুগে,কেহ নাহি জানে,
ভরিয়া ভরিয়া উঠেছে পরানে
কত সুখে দুঃখে কত প্রেমে গানে
অমৃতের কত রসবরষন।"
আইনস্টাইন অদৃশ্যভাবে হিমিকে বলেন- 'তোমার মহান পুরুষকে নিয়ে তুমি একটু বাইরে কোথাও ঘুরে আসো।একসাথে বসে জীবন বিনিময় না হলে জীবন সতেজ হয় না।নদীর রুপালী ঢেউগুলো ছোট্র ছোট্র হয়ে ভেঙ্গে পড়ে,তেমনি দু'টি সুন্দর জীবন চার চোখে চিক চিক করে উঠে।আইনস্টাইন সাহেব বিদায় নেওয়ার আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে ববললেন,সব সময় বয়স দিয়ে সম্পর্ক হয় না।সম্পর্কের ধরন মনের উপর নিভর করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১:০৭