somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারী এবং গৃহপালিত (পাবলিক-প্রাইভেট) কুত্তা বিষয়ক গু-বেষণা

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি হচ্ছি সরকারী পণ্য, ১৯৯৫ সালে এইসএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগে ভর্তি হই, পরে এক বছর লস দিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। (উদ্দেশ্য ছিল ডাক্তারি পড়া, পদার্থবিজ্ঞান নয়, তাই লস দিয়ে পরের বছর আবার মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা দেই, সাথে ঢাবিতেও।) যাইহোক, ওরা আমাকে মার্কেটে ছাড়ে ২০০৪ সালে, ছাগলের প্রতিকৃতি ওয়ালা দুই খানা সনদ পত্র দিয়ে। অর্থাৎ, ৯ বছর পর আমি বাজারে আসি। সাথে কোন স্পেশাল যোগ্যতা নাই, (পদার্থের কিছু জটিল ক্যালকুলেশন ছাড়া) না কোন ট্রেনিং, না কোন প্রজেক্ট ওয়ার্ক, না কোন বৃত্তিমূলক শিক্ষা, না কোন ইন্টার্নশিপ, বাংলাদেশের জব মার্কেটে যা যা দরকার তার কিছুই নাই। কাজেই জব মার্কেট আমার জন্য সীমিত, আমার অপশন শুধু বিসিএস অথবা অন্যকোন সরকারী চাকুরি। তার জন্য চাই আলাদা প্রিপারেশন, সাধারণ জ্ঞান। নিজে অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী বলে সাধারণ জ্ঞানকে খুব একটা পাত্তা দিলাম না(মেইনলি অলসতা)। আর তাছাড়া সরকারী চাকুরির বেতন দিয়ে চলতে পারব না, এই ভয়েই তেমন কোন প্রিপারেশন/চেষ্টা নেয়া হয় নাই (এগুলো ফালতু যুক্তি)। অনেকেই ব্যাঙ্ক/টেলিকম/আইটি সেক্টরে ঢুকে পড়ল, কেউ কেউ বিসিএস দিয়ে ঢুকে পড়ল সরকারী কলেজে বা অন্য কোন চাকরিতে। ব্যাঙ্কের চাকরির জন্য ঢাবি'তে পড়ার দরকার নেই, টেলিকম সেক্টরে ঢোকার মত পর্যাপ্ত স্মার্টনেস/চেহারা/রেফারেন্স নাই। যারা আইটি সেক্টরে গেল তারা বাইরে থেকে আইটি'র উপর কোর্স করে সে যোগ্যতা অর্জন করল। তার মানে ঢাবি আমাকে কিছুই দেয় নাই, দুই খানা সনদ আর কিছু হতাশা ছাড়া। মাঝখানে অতিরিক্ত ৪ বছরে আমি হারাইলাম মনোবল, লেখা-পড়া করার উদ্যমতা। অবশ্য, আমার এই হতাশার পরিমান আত্মহত্যা করার মত পর্যাপ্ত ছিল না, ঠিক যে পরিমাণ হতাশা ছিল জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির ঐ আত্মহত্যা করা ছেলেটির।

আমার ধারণা, সরকারী সব ইউনিভার্সিটিরই এই একই অবস্থা। জব ওরিয়েন্টেড শিক্ষা তারা দেয় না। অথচ এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই প্রাইভেট ইউনিভার্সিতে পড়ায়, জব ওরিয়েন্টেড সাব্জেক্ট খোলে, তাদের সিলেবাস/কারিকুলাম বানায়। কেমনে কি, মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। বাংলাদেশে যখন বিবিএ এবং কম্পিউটার সাইন্স এর জব মার্কেট এক্সপ্লোর হয়, তখন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ/কম্পিউটার সাইন্স নাই। আস্তে আস্তে খুলতে থাকে তাও অল্প সংখ্যক সীট, অথচ মান্ধাতার আমলের বিষয়গুলো এখনও পড়ানো হয়। শুধু তাই নয়, তাদের সিলেবাস এবং লেকচারগুলোও সেই মান্ধাতার আমলের, অনেক উদাহরণ আছে। গু-বেষণা তো নাই-ই, বিশ্ব যে কত এগিয়ে গেছে, নতুন নতুন কতকিছু নিয়ে গবেষণা করছে সেদিকে খেয়ালই নাই, অথচ এরা সবাই কিন্তু বিদেশে গিয়ে পিএইচডি করে আসে। বিদেশে গিয়ে আপ-টু-ডেইট জিনিষপত্র নিয়ে গবেষণা/পড়ালেখা করে আসছে।

সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা/দর্শণ/ইতিহাস/নৃবিজ্ঞান/মনোবিজ্ঞান/ইসলামের ইতিহাস/সংস্কৃত/পালি এবং আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলোর আর স্পেশালিষ্ট দরকার নাই, এই বিষয়গুলোতে আসন কমাইয়া অন্যান্য জব ওরিয়েন্টেড সাব্জেক্ট খোলা/আসন বাড়ানো হয় না কেন?

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কেন আসল
দেশে সরকারী বিশ্ব বিদ্যালয়ের সংখ্যা অপ্রতূল, ভর্তির জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা দিশেহারা, তাই ১৯৯৪ সালে (আমি ভুলও হতে পারি) তৎকালীন বিএনপি সরকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেয়। এটা নিঃসন্দেহে ভাল সিদ্ধান্ত। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয় তাহলে যেকোন ভাবেই মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। দূর্ণীতি করে টাকা কামাইয়া আমাদের নেতারা কারো কারো কাছে ফেরেস্তা হয়ে বসে আছে, আমরা এখনও আওয়ামী লীগ/বিএনপি/জাপা/জামাতের শিশ্ম ধরে টানাটানি করছি। অথচ টাকার বিনিময়ে কেউ শিক্ষাগ্রহণ করলে আমাদের গা জ্বলে, এই গা জ্বলার পেছনের কারণটা কি আসলে!!! আজকের প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীর বাবা-মা একসময় সরকারী ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন। ভবিষ্যতে আমার ছেলে-মেয়ে যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে না তার গ্যারান্টি কি?? অথবা আজকের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ার ছেলে-মেয়ে যে ভবিষ্যতে পাবলিকে পড়বে না তারই বা গ্যারান্টি কি??

তবে কথা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার নাম করে অনেকে ব্যবসা করছে, সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। স্কলারশিপ নাই, হোস্টেল নাই, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করছে না, নীতিমালা নাই, সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে না, ক্যাম্পাস নাই, ল্যাব নাই, গবেষণা নাই, সেদিকে কিন্তু কোন চুশীল/প্রচুদিশীল বা এই জাতীয় ব্লগারদের কোন খেয়াল নেই। আছে শুধু পাবলিক/প্রাইভেট বিতর্ক নিয়ে।

আমার মনে হয় পাবলিকের ছেলে-মেয়েরা নিজেদের মেধার গর্ব করেন। মেধা কি আপনাদের নিজেদের অর্জন নাকি সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন?? সৃষ্টিকর্তাই যদি দিয়ে থাকেন তাহলে সেই দান হিসেবে পাওয়া ধণ নিয়ে এত্ত গর্ব কেন?? অনেক ছেলে-মেয়েই তো আছে যারা ঢাকার বাইরে পড়ার চেয়ে নর্থ-সাউথে পড়ছে, অনেকে হয়ত ঢাবি ছেড়ে নর্থ-সাউথে পড়ছে, তাদের ব্যাপারে কি বলবেন?? আইইউটি'তে ভর্তির আবেদন এর যোগ্যতা জানেন??

যোগ্যতমের জয়, ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই দেয়। কোম্পানী জব গুলোতে কিন্তু প্রাইভেটের ছেলে-মেয়েরাই এগিয়ে, এই বিষয়টা সবার মাথায় থাকা উচিৎ। তারা জবলেস বাংলাদেশে খন্ডকালীন চাকরিও করে, এটা ভাবা যায়?? আইইউটি'র সাথে ঢাবি'র দূরত্ব কেমন জানি না (আমার মনে হয় আইইউটি ভাল ঢাবি'র চেয়ে), তবে অদূর ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড রাংকিং এ নর্থ-সাউথ ঢাবি'কে পেছনে ফেলে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

প্রাইভেটের ছেলে-মেয়েরা শো্নো
তুমি যে টাকায় পড়ছ সেই টাকা তোমার বাপের, তোমার না। এটা কি পরের ধণে পোদ্দারি নয়!!! কপালগুণে ধনীর ঘরে জন্ম নেয়া তো গর্বের কিছু না, যে জন্মে তোমার কোন হাতই নেই। তোমাদের বাবা-মা একসময় পাবলিকে পড়ছে, তোমরা যে টাকায় পড়ো সে টাকা তোমার বাবা-মা'র দূর্ণীতি করা টাকা, বাংলাদেশের অর্থনীতির ুটকি মেরে যে টাকা আয় করেছে সেই টাকা দিয়ে তোমরা পড়ালেখা করছ, কাজেই ভাব নিও না। যে ছেঁড়া আর ময়লা প্যান্ট পড়ে স্মার্টনেস দেখাইতে আসছ সেই টাকা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা, কারণ তোমার বাবা-সরকারী অফিসে চাকুরি করে অথবা দূর্ণীতিবাজ ব্যবসায়ী।
আমি দূঃখিত, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য। আমার পরিচিত অনেকেই আছে যারা গ্রামের মধ্যবিত্ত/কৃষক পরিবার থেকে এসে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, তাদের জন্য স্যরি।
পুনশ্চঃ
মসজিদ/মন্দির/গীর্জায় ঢুকে কেউ কাউকে ুটকি মারলে সেটা মসজিদ/মন্দির/গীর্জার দোষ নয়, যে মারছে তার দোষ। সরকারী ভার্সিটি'র রাজনীতি/চাঁদাবাজী সেটা সরকারী ভার্সিটির দোষ নয়, আবার প্রাইভেট ভার্সিটির কেউ সেক্স ভিডিও বানাইলে সেটা ঐ কাল্প্রিটের দোষ, ভার্সিটির দোষ দেয়া যায় না। ভার্সিটি হচ্ছে পবিত্র জায়গা, যেখানে মানুষ গড়া হয়।

ধন্যবাদ সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১:৪৪
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্কুলের বাচ্চাদের ভয় দেখানো উচিত হয় নাই

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

ফরিদপুরে একটা গার্লস স্কুলের ১৫ থেকে ২০ জন মেয়েকে দিনে দুপুরে এক বা একাধিক ভুত এসে ভয় দেখিয়ে গেছে। আমার মতে ভুতেরা এই কাজটা ঠিক করে নাই। ক্লাস সিক্স থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

লাডাইটসঃ প্রযুক্তি যাদের চাকরি কেড়ে নিয়েছিল

লিখেছেন অপু তানভীর, ২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:০২



কর্মক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি আর প্রযুক্তির ব্যবহারের একটা অর্থ হচ্ছে কিভাবে আরো কম লোকবল ব্যবহার করে আরো বেশি পরিমান কাজ করানো যায় ! আর এআই এর বেলাতে এই লোকবলের সংখ্যা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাত্র ৯৭ রানের জন্য প্রথম টি-টুয়েন্টি সেঞ্চুরি মিস করলো শান্ত!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২২ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০২



বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন লর্ড শান্ত'র ব্যাডলাকের ভাগ্য খারাপ। চমৎকার খেলছিল। ১১ বলে ৩ রান করার পর হঠাৎই ছন্দ পতন। এতো কাছে গিয়েও সেঞ্চুরি মিস। কি আর করা.........আসলে শান্তর... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×