somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাস গড়লেন হেনসেন হাশিম ক্লার্ক, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বাংলাদেশীর সন্তান

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এবার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশীর সন্তান হেনসেন হাশিম ক্লার্ক। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে মিশিগান অঙ্গরাজ্য থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থীকে পরাজিত করে ৫৩ বছর বয়সী ডেমোক্রেট ক্লার্ক শতকরা ৭৯ ভাগ ভোট পেয়ে কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তার এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্যাপিটাল হিলে তথা যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বাংলাদেশের ভিত আরও মজবুত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার এই ঐতিহাসিক বিজয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশী অধ্যুষিত মিশিগানসহ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে আনন্দের বন্যা বইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর মধ্যে মিশিগানের রয়েছে এক আলাদা বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা। বিশ্বের মোটর গাড়ির রাজধানী ও গ্রেট লেক খ্যাত মিশিগান হচ্ছে শিল্প সমৃদ্ধ স্টেট।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত হেনসেন হাশিম ক্লার্ক যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে নির্বাচিত হচ্ছেন সেপ্টেম্বরের প্রাইমারির পরই এমন আভাস ছিল প্রায় স্পষ্ট। কিনু্ত তারপরও স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা হ্রাস ও দেশজুড়ে ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের নানা প্রকার প্রচার-প্রপাগাণ্ডার ফলে আমেরিকান ভোটারদের মতি গতি নিশ্চিত হয়ে বোঝা যাচ্ছিল না।
সিলেটের বিয়ানীবাজারের শ্রীধরা গ্রামের অভিবাসী আবদুল হাশিমের সন্তান হেনসেন হাশিম ক্লার্ক। তার মা আফ্রিকান-আমেরিকান তেলমা হাশেম। হাশিম ক্লার্ক মাত্র ৮ বছর বয়সেই বাবাকে হারান। মা-তেলমা হাশেম জীবনযুদ্ধে হার মানেননি। অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে সামান্য গার্ডের চাকরি করেও ছেলেকে ভাল স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করান। কিন্তু তিনি সেই মাকেও হারিয়ে ফেলেন মাঝপথে। ছেলে বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছে মা তা দেখে য়েতে পারেননি। সেই দুঃখ হেনসেনকে সবসময় তাড়া করে ফেরে। তিনি নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইন আর্টসের ওপর গ্র্যাজুয়েশন করেন। এরপর বিশ্বখ্যাত জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ল স্কুল থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি নেন ১৯৮৪ সালে। লেখাপড়া শেষে জন্মস্থান ডেট্রয়েট শহরে চলে আসেন। শুরু করেন আইন ব্যবসা।
কিন্তু মানবতাবাদী হেনসেন মানুষের ভালোবাসার টানে আইন পেশা ছেড়ে যোগ দেন রাজনীতিতে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে ১৯৯০ সালে মিশিগান স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ পদে তার প্রথম অভিষেক ঘটে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। নির্বাচিত হন স্টেটের উচ্চ কক্ষ সিনেটে। প্রায় দু’দশক দাপটের সঙ্গে মিশিগান স্টেটের রাজনীতিতে বিচরণ করেন। বর্তমানে তিনি মিশিগান স্টেটের স্টেট সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডেমোক্রেট পার্টিতেও রয়েছে তার যথেষ্ট প্রভাব।
এছাড়াও হেনসেন কর্নেল ইউনিভার্সিটির কাউন্সিল মেম্বার, মিশিগান আইন রিভিশন কমিশনের মেম্বার এবং মিশিগান লেজিসলেটিভ ব্ল্যাক ককাসের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহরগুলোর অন্যতম ডেট্রয়েট শহরের পূর্ব এলাকা ও আশপাশের ছোট কয়েকটি শহর কেন্দ্রিক ডিস্ট্রিক্ট ১৩ থেকে হেনসেন হাশিম ক্লার্ক এবার ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে ৪৩৫ আসনের যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বিজয়ী হয়ে নিজের পাশাপাশি পিতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনলেন বিরল সম্মান। তার মেয়াদকাল হচ্ছে ২ বছর।
হেনসেন তার ক্যাম্পেইনে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ট্যুরিজম, শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি,স্থানীয় সরকারের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
হেনসেনের প্রাপ্ত মোট ভোট হচ্ছে ১ লাখ ৫০৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান জন হেলার পেয়েছেন ২৩ হাজার ৪৫২ ভোট। দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশী অধ্যুষিত মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ১৩ ডিস্ট্রিক্টে প্রায় সহস্রাধিক বাংলাদেশী-আমেরিকান ভোটার রয়েছেন।
তার মোট ভোটারের মধ্যে শতকরা ৬১ ভাগ কালো, ৩২ ভাগ শ্বেতাঙ্গ ও ৮ ভাগ হিসপানিকসহ বহু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে।
হেনসেন বিগত ২০০৭ সালে ঘুরে এসেছেন পিতৃভূমি বাংলাদেশ। গিয়েছিলেন পিতার ভিটায়। স্বদেশের আতিথিয়েতায় মুগ্ধ অভিভূত হেনসেন, প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। চই প্লাম কোহানকে নিয়ে সংসার করছেন।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×