somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তানভীর মোকাম্মেল কি পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী? না কি উনি সিপিএম করেন?

০২ রা নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তানভীর মোকাম্মেল কি পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী? না কি উনি সিপিএম করেন?



আমাদের কিছু জ্ঞানীগুণী লোকেরা কলকাতার ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর। তাদের সমস্ত অনুকরনের মূল বিন্দুই হলো কলকাতা। আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা, তাদের চোখে, বাঙ্গালীর আদর্শ। তারা [ ভারতীয়রা ] যে বাংলাদেশের মানুষদের পছন্দ করে না, এইটা এই সব ‘সুশীল’-দের বললে এরা সে কথা বিশ্বাসই করবে না। হয়তো সেইটাই তাদের স্বরূপ, আমাদের যা দেখান, তা মেকি কোন ভেক!

তানভীর মোকাম্মেলের লেখা ‘সিপিএম ও কিছু পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক লেখাটি [ প্রথম আলো, ১০ অক্টোবর ২০১০ ] পড়ে আমার এই প্রতিক্রিয়া। লেখাটি আপনারা প্রদত্ত লিংক থেকে পড়তে পারবেন। [ Click This Link ]

এই লেখাটি পড়ে প্রথমেই প্রশ্ন জাগে যে, পশ্চিমবাংলায় সিপিএম নিয়ে লেখকের এতো মমত্ব আর হাহাকার কেন? আর তা প্রকাশের জায়গা তো এই দেশের পত্রিকা হওয়া উচিৎ ছিল না। এই লেখাটি বরং পশ্চিমবাংলার কোন সিপিএম সমর্থক পত্রিকাতে ছাপা হলে ভাল কাজে দিত। উনার সিপিএম-প্রিয়তা আমাদের দেশে জাহির করে কি কোন লাভ আছে, না কোন ফায়দা আছে?

নাকি প্রথম আলো-র সম্পাদক পুরাতন কম্যুনিষ্ট বলেই কি লেখাটি এই পত্রিকায় ছাপা হয়েছে? নাকি এক কমরেড আরেক কমরেডের কাছে কোন কৃতজ্ঞতা দেখাতে এই লেখা লেখির উদ্ভব হয়েছে।

সিপিএম যা যা করেছে, তার ফিরিস্তি আমাদের কাছে অজানা, তাই এই ব্যাপারে লেখকের এক-দেশদর্শী বয়ানের উপরেই নির্ভর করতে হয়েছে। উনি ভাল করে সে রাজ্যের বিষয়গুলো হয়তো জানেন, তাই তার মত করে বিস্তারিত লিখে গেছেন। তবে মাঝে মাঝে যে সব সিপিএম-এর খবর আমাদের দেশের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, যতদূর মনে পড়ে, সেগুলো সিপিএম-এর বিবিধ গুণ-কীর্তি বিষয়ক। তারা ক্ষমতায় থেকেও ‘বন্‌ধ’ পালন করে, ‘নিজেদের লোকদের’ তাদের প্রয়োজন মত পদে নিয়োগ দেয়, পঞ্চায়েত-শিক্ষক নিয়োগ-শশ্মান কমিটি-বিচার-সালিশ সব জায়গাতেই সিপিএম-এর ‘আপ্‌না লোক’ থাকবেই, বিরোধী দল কোন কর্মসূচী দিলে তারা মারমুখী হয়ে ওঠে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব ঘটনা পড়ে মনে হয় যে আমাদের দেশের যে কোন ক্ষমতাসীন দল আর সিপিএম-এর ভেতরে পার্থক্য নেই তেমন একটা।

লেখকের মনে হয়েছে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত সিপিএম নেতাদের পাশে ‘স্নিকার্স পরা জর্জ ক্লুনির মত তিন দিনের খোঁচা খোঁচা দাড়িসহ সুদর্শন রাহুল গান্ধীর’ আলাদা একটা আবেদন তৈরী হচ্ছে তরুন সমাজের ভেতরে। ভোটের রাজনীতিতে প্রদর্শনটাই প্রচার, সেটা সিপিএম-কেও করতে হয় ভোটের আগে। তারাও ভোট টানার জন্যে বাংলা ছবির নায়ক-নায়িকাদের মাঠে নামায়। লেখকের কথায় মনে হচ্ছে, রাহুল গান্ধীর পশ্চিমবাংলা সফরকে তিনি খুবই অপছন্দ করছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, রাহুল গান্ধী পশ্চিম বাংলায় বিরোধী দলের হয়ে প্রচার চালাতে এসেছিলেন, এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। প্রকাশ কারাত নামের এক সিপিএম নেতা কি গেল নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে ভোট উপলক্ষে সফর করেন নাই? বাংলাদেশে বসে নিশ্চয়ই লেখক পশ্চিমবাংলায় রাহুল গান্ধীর আসা ঠেকাতে পারবেন না।

লেখকের জবানিতে আরো জানা গেল যে একদা যে সব বুদ্ধিজীবিরা সিপিএম-কে সমর্থন করতেন, তাদের অনেকে সিপিএম-কে ছেড়ে বিরোধী দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এর জন্যে তিনি দায়ী করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকা-কে। সিপিএম নেতাদের মতে এই পত্রিকাটি ‘অনেক মিথ্যা ও অর্ধসত্য খবর ছাপে’। এ প্রসঙ্গে তিনি সিপিএম-এর চালুকৃত একটি কৌতুকের কথা লিখেছেন। যতদূর মনে পড়ে, এ কৌতুকটি এক সময়ে এ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও সাধুভাষায় সংবাদ পরিবেশনকারী পত্রিকার নামে চালু ছিল। সিপিএম আমাদের সেই কৌতুকটিকে ‘টুকলিফাই’ করেছে।

সিপিএম-এর পক্ষে ঝান্ডা তোলার জন্যে সে দেশের ‘শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ আর কোন কারন খুঁজে পাচ্ছেন না’। সেটা জানা গেল লেখকের বিশ্লেষণ থেকে। সে দেশে চলমান ‘অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত’ আজকে তাদের অবস্থান আর আগামীতে তারা কি করতে পারবেন, তা মোটা দাগে হলেও বুঝে গেছেন। ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে ‘অন্যান্য অঞ্চলের মত পশ্চিমবঙ্গেও সচ্ছল মধ্যবিত্তের সংখ্যা’ বেড়ে গেছে, যারা কিনা ‘ষাট ও সত্তরের দশকের ত্যাগ ও সংগ্রামের মানসিকতা’ পোষণ করেন না।

মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই তো গুণ! সিপিএম কি ভারতে কোন রাষ্ট্রীয় নীতি ত্যাগ করে কিউবা বা উত্তর কোরিয়ার মত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করেছিল? না চালু করার চেষ্টা করেছিল? আমাদের জানা মতে তা তারা করে নাই। তারা চিনাদের মত তথাকথিত বাজার অর্থনীতির একটা পথে থাকার চেষ্টা করেছে। যাতে তাদের আমও থাকে, ছালাটিও না হারায়। এসবই তারা করেছিল যেন পশ্চিমবাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা তাদের পক্ষে থাকে। কিন্তু লেখকের লেখাটি পড়ে হতাশার সুরটিই শোনা গেল।

নিপীড়িত, বঞ্চিতদের কথা বলার জন্য, তাদের পক্ষে ধুয়া তুলে যে সিপিএম এককালে মেঠো রাজনীতি করেছে, প্রচুর রক্ত ঝরিয়েছে, তারাই ক্ষমতাসীন হয়ে প্রান্তিক আদিবাসীদের দাবী ও অধিকারের প্রতি নজর দেয় নি। তারা সে সব প্রান্তিকজনদের প্রতি ছুঁড়ে দিয়েছে ক্ষমতার বিষ-অস্ত্র। ফলে রক্তাক্ত হয়েছে সে সব জনপদ। আর সে সুযোগে চিনপন্থী সে সব বিদ্রোহীদের সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন শক্তি, যাদের পরিচয় নিয়ে ধন্ধ আছে। আর এই দুর্বল জায়গাতে অলোচনার সুত্রপাত ঘটাতে চাচ্ছেন সিপিএম-এর বিরোধীরা। সেটাকে লেখকের মনে হয়েছে ‘আগুন নিয়ে খেলা’।

লেখার শেষে তিনি অনেকটা নিজের প্রশান্তির জন্য সম্প্রতি কালে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র নির্বাচনে সিপিএম-পন্থীদের বিজয়কে খড়কুটোর আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন। তাতেই তিনি প্রমাণ পেয়ে গেলেন যে এই পড়তি বেলাতেও ‘সুশিক্ষিত তরুণদের কাছে সিপিএময়ের আবেদন খুব কমেনি’। লেখকের আশা, হয়তো শেষ বেলায় এসে সিপিএম-এর মত একটি বিশাল দল সব দিক সামলিয়ে উঠবে। তার এই আশাবাদী কথাগুলো যদি সিপিএম-এর দাদাদের হাতে পৌছাতে পারত! সে জন্য বলতে বাধ্য হচ্ছি লেখাটি অসময়ে, অজায়গায় ছাপা হয়েছে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×