somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে গল্পের শেষ নেই...

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোটবেলায় বাবার কাধে কম বেশি সবাই চড়েছি।আব্বা যখন আমাকে কাধে নিয়ে জমির দিকে যেত, মনে হত একলাফে আমি অনেক বড় হয়ে গেছি।জমির আইলে বসিয়ে ধান ক্ষেতে নিড় দিত।আর আমাকে শিখাত ২ এর ঘরের নামতা....দুই এক্কে দুই।দুই দু গুনে চার।

আমি পানির জগ হাতে বসে থাকতাম।আর মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে তাকে পানি খাওয়াতাম।হঠাৎ করে বাবা বলতো বলতো দশ এগার কত হয়?
চট করে বলে ফেলতাম একশ দশ।বাবা বলত গুড।তখন আবার মনে হত আমি আবার বড় হয়ে গেছি।



গ্রাম থেকে আব্বা মাঝে মাঝে শহরে যেত।কোন কোন দিন যাবার সময় আমাকে বোলত কি হাওলাদার সাহেব আপনি কি আমার সাথে যাবেন,নাকি? আমি দৌড় দিতাম আম্মার কাছ।আম্মা যদি বলতো যা।আমার মনে হত ,আব্বার সাথে শহরে না,আসমান দেখতে যাব।

গাড়ীতে উঠে আমাকে জানালার পাশে একটা সিটে বসিয়ে আমার হাতে একটা টিকিট দিয়ে বলতো এইটা তোমার সিট।আসে পাশে পিচ্চিরা যেত ওদের বাবা-মার কোলে চড়ে।আর আমি একা বড়দের সিটে করে যাচ্ছি।আমার তখন আবার মনে হত আমি বড় হয়ে গেছি।



প্রায়ই আমাকে তার সাথে বাজারে নিয়ে যেত।আমার হাতে বাজারের খালই টা দিত।শুরু হত আমার প্রশ্নের পালা।আব্বা সরকার কি?সরকার কেন অনেক টাকা ছাপায় না?আমাদের লাল গাই টা এইবার কি ছেলে বাছুর দিবে নাকি মেয়ে বাছুর?

পথে মাঝে মাঝে আইসক্রিম ওয়ালার দেখা পেয়ে গেলে,আমি দাড়িয়ে যেতাম।আইসক্রিম খাব।আব্বা এক টাকা দিয়ে একটা আইসক্রিম কিনে দিয়ে বলত তোর মাকে বলিস না। আমি কিছু একটা বুঝে গেছি এমন ভাব করে বলতাম আইচ্ছা।বলত ইলিশ মাছের সাথে কি নেয়া যায়?আমি বলতাম আলু।আলু আমার প্রিয় ছিল কিনা তাই।
যখন দেখতাম মাছ কিনে নেয়ার পর বলত চল আলু কিনে আনি।তখন আমার মনে হত আমি বড় হয়ে গেছি।





ছেলেরা যখন মার্বেল খেলত।আমি পাশে বসে দেখতাম।আব্বাকে দেখলে ওরা ছুটে পালতো।পড়ে থাকা মার্বেল গুলো নিয়ে গেলে,ছেলেরা আমাকে বলত আব্বার কাছ থেকে ওদের মার্বেল গুলো এনে দিতে।আমি গিয়ে আব্বাকে বলতাম ওরা এমনি এমনি খেলে,টাকা দিয়ে নয়। তুমি ওদের মার্বেল দিয়ে দাও।আব্বা কি মনে করে মাঝে মাঝে দিয়ে দিত।ছেলেগুলো তখন বলতো তুই বলেছিস দেখে দিয়েছে।আমার তখন ও মনে হত আমি বড় হয়ে গেছি।





এমনি করে একটু একটু করে আমাকে বড় হওয়ার অনুভূতি আগ্রহ ইচ্ছা তৈরী করে দিয়ে ছিল আমার অজান্তেই।হাতে ধরে শিখিয়ে দিয়ে ছিল কি করে চলতে হয়,জীবনে বন্ধুর পথ।

আজ আমি বড় হয়ে গেছি ঠিকই।তবে এখন আর মনের মাঝে সেই অনুভূতি তৈরী হয় না।মাঝে মাঝে জীবনের কঠিন সময়ের মুখোমুখি দাড়িয়ে গেলে খুব মনে পড়ে,ছোটবেলার সেই সব দিন গুলোর কথা।
তখন মনে হয় জীবনে এই গল্পটা যেন কোন দিন শেষ না হয়ে যায়।


আমি এখন শহরে থাকি,আর বাবা গ্রামে।মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়।শুধু খোজখবর নেয়া।এখন আর আমাকে কেউ হঠাৎ হঠাৎ বলতে বলে না ......বলতো দুই এক্কে দুই কত হয়?


পৃথিবীর সকল বাবা যেন ভাল থাকে।সন্তানের জীবন শুরুর যে গল্প শুরু করে দেয় তা যেন কখনো শেষ হয়ে না যায়।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৫২
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×