খবরের সূত্র প্রথম আলোর ২৭ অক্টোবর শেষে পাতার একটি খবর, যার শিরোনাম ‘জামাতা-শাশুড়ির বিয়ে এবং একটি অনন্য সালিস’ [পুরো খবর: Click This Link ]
বিরাট খবর ছাপাইসে প্রথম আলো। সেখানে একটা খটকা লাগলো। যাদের বিয়ে নিয়ে কথা, তারা এক সময়ে জামাতা শ্বশুড়ি ছিলেন। সে সময়ে লোকটি তার স্ত্রীকে আর স্ত্রী-র মা একই সময়ে তার স্বামীকে তালাক দেন। প্রথম আলো-র তথ্য মোতাবেক লোকটি বিয়ে করে ২০০৩ সালের দিকে। লোকটি বিয়ের কিছু দিনের ভেতরে তার শ্বাশুড়ির সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এরই জের ধরে বিয়ের প্রায় ছয়-সাত মাস পরে স্ত্রীর সাথে লোকটির বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তার মানে দাড়াচ্ছে, ২০০৪-এর ভেতরে এই জামাই ‘এক্স-জামাই’-এ পরিণত হয়।
আরো জানা যাচ্ছে, প্রায় কাছাকাছি সময়ে শ্বাশুড়ি তার জামাই-এর থেকে তালাক নেয়। এর পরে ওই মহিলা আরেক লোকের সাথে হিল্লা বিয়েও করে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে তারা তো আর জামাই-শ্বাশুড়ি হিসাবে ছিলেন না। তাইলে মহিলাকে কেন হিল্লা বিয়ে করতে হল? তারা তো সরাসরি বিয়ে করলেই পারতেন, তাই না? এই ব্যাপারে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে জবাব পাব বলে আশা করছি।
তারা যাই করে থাকুক না কেন, সবশেষে তারা বিয়ে করেছে। এক সাথে থাকছেও। এখন সমস্যা হয়েছে মূল পরিবারগুলার। তারা খুব সম্ভবতঃ একই পাড়ার বাসিন্দা, একই সাথে বসবাস করে আসছিল এতোদিন। তাই, আগে যারা জামাই-শ্বাশুড়ি ছিল, তারা এখন স্বামী-স্ত্রী হয়ে বসবাস করলে তো পরিবারগুলোর সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। তাই মনে হয় বিচারের নামে ‘সালিস’ বসেছিল বা বসানো হয়েছিল।
ওই সালিসে হাজির হয়ে কয়েকজন মওলানা বলেছেন যে এই দুই পুরুষ ও নারী বিয়ের আগে ‘পরকীয়া’ সম্পর্কে লিপ্ত ছিল। সে জন্য তাদের সাজা হওয়া উচিৎ। এই কথাডা শুইন্যা জব্বর মজা পাইলাম। আমাদের ঢাকা শহরে প্লাস আর সব শহরে যতগুলান বিয়া এই মওলানারা দক্ষিণার বিনিময়ে পড়াইয়া আসতেছে, তার মধ্যে তাদের সংজ্ঞা মোতাবেক ‘হালাল’ পাত্র-পাত্রী কয়ডা আছে? সবগুলানরই তো বিয়ার আগে সম্পর্ক ছিল। কতগুলান সেই সম্পর্ক ভাইংগা বিয়া করে আরেক জনরে, আর কতকগুলা ভাল মাইষের মত বিয়া করে ‘মনে মানুষ’রে।
আর মওলানারা তো জানেন ব্যভিচার [ ইসলামের ভাষায় ‘জেনা’ ] প্রমাণ করতে হলে চার জন পুরুষ প্রতক্ষ্যদর্শী লাগবে। কোন কথা হাওয়ায় ভাসায়ে দিয়ে চলে গেলেই হয় না। ‘জেনা’-র অভিযোগ আনতে হলে আগে থেকে চার জন পুরুষ সাক্ষী হাজির করা লাগবে। তাইলে আমাদের দেশের অনেক আইনেই তাদের বিচার সম্ভব, উনাদের পাথর মারার সাজা দেওয়া লাগে না। তাই মওলানা ভাল ভাবেই জেনেশুনে কথার কথার কয়েকটি বয়ান করে চলে গেছেন।
এত কথা বলার পরে পাঠক দয়া করে ভাববেন না যে আমি এই জাতীয় ঘটনার পক্ষে। আমি যে কোন সামাজিক রীতি ভঙ্গকারীর বিপক্ষে। আমি প্রেম করার পক্ষে, আমি প্রেমিকা-প্রেমিকার ভেতরে বিয়ের পক্ষপাতি। কিন্তু রাজিব-প্রভা-অপূর্ব জাতীয় ‘চমক’ সৃষ্টির বিরুদ্ধে।
আমার লেখার উদ্দেশ্য এই ঘটনার ভেতরে কি কোন আইনি সমস্যা আছে যা ওই নতুন স্বামী-স্ত্রী-কে সংসার করার অধিকারচ্যূত করে?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৮