somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুদে এক কলম্বাসের গল্প

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই মধ্যযুগে ক্রিস্টোফার কলম্বাস, ভাস্কো-দা-গামারা কাঠের নৌযানে চড়ে অতল সমুদ্রে বেরিয়ে পড়েছেন নোনা হাওয়ার টানে।
২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর সেই একই টানে সমুদ্রে বেরিয়ে পড়েছিল এক কিশোর। ভাস্কো-দা-গামাদের মত নতুন ভূখন্ড সে আবিস্কার করতে পারেনি বটে; কিন্তু নিজের নামটা লিখিয়ে ফেলেছে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’র পাতায়।
মাত্র ১৭ বছর বয়সী সেই ব্রিটিশ কিশোর একা একটি নৌকা নিয়ে গোটা পৃথিবী চক্কর দিয়ে এসেছে। একালের সেই কিশোর ‘কলম্বাস’-এর নাম মাইকেল পেরহ্যাম।
ব্রিটেনের হের্টফোর্ডশায়ারের পেরহামকে বাবা-মা আদর করে ডাকেন—মাইক। মাইক এখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি। এরই মধ্যে দক্ষ নাবিক হিসেবে সে গোটা দুনিয়ায় হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে।
মাত্র সাত বছর বয়সে মাইকের নৌ-চালনায় হাতেখড়ি বাবা পিটার পেরহ্যামের কাছে। চৌদ্দতে পা রেখেই মাইক নৌকা নিয়ে প্রথম ভেসেছিল সমুদ্রে। ২৯ ফুট লম্বা চিকিমাঙ্কি নামের ছোট্ট সেই নৌকায় করে সে আটলান্টিক পাড়ি দেয়।
সেবারের সফর শেষে মাইক তার প্রিয় চিকিমাঙ্কি বেচে দেয়। সেই টাকায় কিনে ফেলে ৫০ ফুট দীর্ঘ হালকা নৌযান, ইয়ট। এবার লক্ষ বিশ্বজয়।
২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর। পোর্টসমাউথের গুনওয়ার্ফ কুয়েজ বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করল মাইকের ‘টোটালিমানি ডট কম’। পৃষ্ঠপোষক এই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকেই অভিযানের মূল টাকা পেয়েছিল বলে মাইক তার ইয়টের নাম রেখেছে প্রতিষ্ঠানটির নামে।
প্রথমটায় মাইক ধরে নিয়েছিল, সাড়ে চার মাসে সে বিশ্বভ্রমণ শেষ করতে পারবে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া তার সেই পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দিল। ৩০ হাজার মাইল পাড়ি দিতে তাকে টানা ২৮২ দিন নৌকায় কাটাতে হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট কর্নওয়ালের লিজার্ড পয়েন্ট অতিক্রম করল মাইকের ‘টোটালিমানি ডট কম’। সঙ্গে সঙ্গে তাকে অর্ভথ্যনা জানাতে ছুটে এল ব্রিটিশ রাজকীয় নৌ বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ও নৌযান। রীতিমত এসকর্ট করে বন্দরে নিয়ে আসা হল মাইকের ইয়টকে। বেজে উঠল বাজনা, ঝলসে উঠল ফ্লাস। শেষ হল মাইকের বিশ্ববিজয়। ১৬ বছর বয়সে যাত্রা শুরু করা ছেলেটি ১৭ বছর ১৬২ দিন বয়সে ইতি টানল তার এবারের যাত্রার।
ডাঙায় পা রেখেই মাইক তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বললো, ‘আমি পেরেছি, আমি আমার স্বপ্নকে সার্থক করতে পেরেছি।’
দীর্ঘ এই সফরে বেশ বড় বড় বিপদে পড়েছিল মাইক। নৌকার অটোপাইলটে একাধিকবার ত্রুটি দেখা দিয়েছে। সারাইয়ের কাজে তাকে পর্তুগাল, ক্যানরি দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় দু দুবার থামতে হয়েছে।
একবার অস্ট্রেলিয়া ও অ্যান্টার্কটিকার মাঝামাঝি জায়গায় বৈরী আবহাওয়া তাকে খুব কাবু করে ফেলেছিল। ৫০ ফুট উঁচু দৈত্যাকৃতির একেকটা ঢেউ আছড়ে পড়ছিল ইয়টের ডেকে। মাইকের বহু পেছনে অবশ্য একটি উদ্ধারকারী দল সর্বক্ষণই ছিল। কিন্তু তাতে কি আর ভয় কাটে!
বিশ্বজয়ের এই ভ্রমনে শারীরিক অনেক ‘চ্যালেঞ্জ’ও মোকাবেলা করতে হয়েছে মাইককে। দিনের পর দিন জলে ভাসতে হলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন। তাই প্রচুর পাস্তা ও ভাত খেয়েছে সে। শরীরটাকে চাঙা রাখতে ঘন্টায় ঘন্টায় কিছু না কিছু খেতে হয়েছে মাইককে। ঘুমানোর সময় ইয়টের দায়িত্ব থাকতো অটোপাইলটের ওপর।
ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে মাইকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল জ্যাক সুন্ডেরল্যাণ্ড নামে আরেক অভিযাত্রীর সঙ্গে। মাইকের মতোই নৌকা নিয়ে বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়েছিল। গত জুলাইয়ে জ্যাক ১৭ বছর সাত মাস বয়সে তার ভ্রমণ শেষ করেছিল। কিন্তু গিনেজ বুকে তার নাম স্থান পায়নি। কারণ সফরের মাঝামাঝি সময় সে ডাঙ্গায় উঠেছিল।
মাইকের রেকর্ডটি অবশ্য এরই মধ্যে ভাঙতে চেয়েছিল লরা ডেকার নামের এক কিশোরী। নিউজিল্যান্ড ও জার্মানের নাগরিক এই কিশোরীর বয়স মাত্র ১৩। কিন্তু বাধ সাধেন আদালত। এত অল্প বয়েসী একটি মেয়েকে এমন বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়া সমীচিন নয় বলে গত ২৮ আগস্ট আদালত রায় দেন।
আদালতের রায়ে আপাতত থেমে গেল লরার অভিযাত্রা। কিন্তু লরা-মাইকরা কি আর থামার পাত্র! তারা যে সেই কলম্বাসদের গোত্রের মানুষ।
—ওয়েবসাইট অবলম্বনে
সুত্র: প্রথম আলো। আবুল হাসনাত | তারিখ: ১১-০৯-২০০৯
আরো তথ্য জানুন http://digitalvillagebd.blogspot.com
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×