আমি তোমাতে করিব বাস
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমাদের ভালোবাসা ছিলো স্বচ্ছ- দিঘীর জলের মতো।
কেননা আমরা বিশ্বাস করতাম, ভালোবাসায় আড়াল দূরত্ব সৃষ্টি করে। এটা ভাবতে আমাদের খুব কষ্ট হতো, অবিশ্বাস লাগতো- আমাদের মাঝে কখনো ফারাক তৈরি হবে।
কিন্তু একদিন তাই হলো।
ওকে দোষ দেয়া যায় না।
সবাই যা চায়। ওতো এর বেশি কিছু চায়নি, কখনো।
হয়তো ও আমার পাশে থাকলে এই আমি অকর্মন্য কিছু একটা হতেও পারতাম। চলে যাওয়ায় আর সম্ভব হলো না একেবারেই।
ও যখন বুঝতে পেরেছিলো, আমাকে দিয়ে খুব বেশি কিছু আশা করা যায় না, তখন-ই অভিকের সাথে ওর পরিচয়- ইয়াহুতে।
ছেলেটা লন্ডনে থাকতো।
মিথ্যে বলবো না, অভিক যথেষ্ট সুন্দর ছিলো।
আমার মতো অলস নয়।
আমার মতো আবেগপ্রবণ নয়।
আর আমার মতো খাটোও নয়।
এসবই অবশ্য আমি জেনেছিলাম পরে- বিনুর সাথে বিয়ের পর।
যাই হোক, অভিক স্মার্ট আর বুদ্ধিমানও ছিলো। অন্তত আমার থেকে বেশি তো অবশ্যই।
সুতরাং বিনুর মতো মেধাবী, মায়াবতী মেয়ের তো ওকে ভালো লাগতেই পারে।
আর এটা যেহেতু বাংলা ছবি ছিলো না, বাস্তবতায় ভরপুর মধ্যবিত্তের শুদ্ধ ভালোবাসা ছিলো কিন্তু ভিলেন বলা যায় না অভিককে কস্মিনকালেও।
অতএব ও গেলো।
আমাকে একা থাকতেই হলো।
প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো।
এখন তেমন নয়।
তবে মাঝে মাঝে কেন যেন নিজেকে আর ধরে রাখা যায় না। ওকে দেখতে খুব খুব মন চায়।
আজন্ম আবেগপ্রবণ ছেলে আমি। আবেগের জন্যই সব গেলো।
খুব কষ্ট হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে কোথাও একটা আড়াল নিয়ে বসে থাকি- ওকে দেখার জন্য।
আর যাই হোক, ও অন্তত আমার এই চাওয়াটা বাস্তবায়ন করেছে। ওর সাথে যখন সম্পর্ক হয়, ও তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। ওর স্বপ্ন ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার। সাথে আমি যোগ করেছিলাম যথেষ্ট দাবি নিয়ে- তুমি অবশ্যই ওখানের একজন টিচার হবে।
ও কথা রেখেছে।
অতএব ও কথা রাখেনি এই অপবাদ ওকে দেয়া যায় না। হোক, সে আমার সাথে জীবন-মরণের সন্ধিতে থাকার ওয়াদাবদ্ধ।
মাঝে মাঝে যখন ওকে দেখতে কলা ভবনে যাই গর্ব, আবেগ আর ওর প্রতি আমার স্বচ্ছ পবিত্র এবং বোকামীপূর্ণ ভালোবাসায় বুকটা ফুলে ওঠে।
যদিও আমাকে আড়াল নিতে হয়- আড়ালে থাকতে হয়। কেননা ও দেখে ফেললে আমার জন্য বিরাট লজ্জার ব্যাপার হবে, বুঝতেই পারছেন।
ও এতো আবেগ পছন্দ করে না, এটা আমাকে মাথায় রাখতে হয়।
অবশ্য সবসময় ওকে দেখা হয় না।
অভিক গাড়ি নিয়ে আসে ওকে নিয়ে যেতে প্রায়ই। তখন ও কলা ভবনের ভেতরেই গাড়িতে চড়ে বসে।
কালো গ্লাসের আড়ালে ওকে তখন দারুণ মানায় অভিকের পাশে।
যদিও আমার দেখা হয় না সেটা।
তবে আমার কল্পনার চোখ যেহেতু দীর্ঘ- আমি পরিস্কার দেখতে পাই ওর স্বচ্ছ হাসি। যা বরাবরই আমাকে পিপাসী করতো।
আচ্ছা, ও কি তখন অভিকের হাত ধরে রাখে? বোধহয় না। রাস্তাঘাটে ও ওসব পছন্দ করে না, আমি জানি।
আমরা যখন রিক্সায় ঘুরতাম টিএসসি থেকে বসুন্ধরা সিটি কিংবা টিএসসি তেকে বেইলী রোড পর্যন্ত, তখন ও রিক্সার হুড তুলতে দিতো না রোদে যথেষ্ট পুড়তে হলেও।
আর আমাকে প্রচণ্ড কসরৎ করে ওর উষ্ণ দেহের সংস্পর্শ হতে দূরত্ব বজায় রাখতে হতো।
এসবই অতীত।
অবশ্য ওর স্পর্শ নয়, আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ হয়েছিলো আমার।
দুই.
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সময় আমিই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম খুলনায়। উঠেছিলাম বন্ধু হিমেলের বাসায়।
ফেরার আগের দিন সন্ধ্যায়, যখন আমি, ও আর হিমেল বাইরে থেকে ঘুরে এসেছিলাম, ড্রইং রুমে আমাকে একা পেয়ে হঠাৎ-ই ওর উষ্ণ-উত্তপ্ত ঠোঁটের স্পর্শ রেখেছিলো আমার কপোলে, ঠোঁটে, মুখে, চোখের পাতায়। আর আমিও।
যদিও এই জন্য পরে ওর আমার অনুতাপের অন্ত ছিলো না। দীর্ঘ সাত বছরের রিলেশানে এই ছিলো আমাদের ফিজিক্যাল অনুভুতি। যদিও এটা তেমন কিছু নয় হয়তো, তবু অনুতাপ হয়েছিলো, হয়।
অবশ্য পরে আমাকে ও প্রায়ই 'ভীতু' বলে খেপাতো- কোনোদিন এসব চাইনি বলে।
ও মনে করিয়ে দিতো আমার গল্পের থিওরিটুকু- সেক্স চামড়ার সাথে চামড়ার ঘর্ষণমাত্র, বেশি কিছু নয়। হ্যান্ডশ্যাকও তাই- চামড়ার সাথে চামড়ার ঘর্ষণ।
আমি হাসতাম।
ভাবতাম- ওসবই তো গল্পের কেচ্ছা-কাহিনী।
অবশ্য ওকে বলা হতো না।
আজ সেই আমি-ই কি-না গল্পের আশ্রয় নিয়েছি বুকের জমানো বাস্তব কিছু চিত্র ফুটিয়ে তুলতে!
লিখতে লিখতে ভাবনা হচ্ছে- কেন লিখছি? এসব কি আমি আমার পাঠকের সামনে তুলে দেবো? পাঠক আমার ব্যর্থতার কথা জেনে যাবে না! শ্রদ্ধেয় পাঠকরা কি ব্যর্থ মানুষের গল্প পড়বে? যদি তারা ইগনোর করে?
তিন.
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!
রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।
আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!
এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন