somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

না কষ্ট, না ভালোবাসা

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদের সময়টায় ব্যাস্ত এই শহরের রাস্তাগুলোর নীরবতা দেখলে মায়া লাগে । শ্রাবণের শেষের দিকে ঝিরিঝিরি এই শ্রাবণধারা কে একটু বেশীই ভালবাসি আমি । ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে নিরব রাস্তায় হেঁটেছি আমি অনেক অনেকবার । কিছু মানুষকে দেখেছি বৃষ্টি নিয়ে আদিখ্যেতা করতে অথবা বৃষ্টি ঝরার এই সময়গুলোতে ফেসবুকে খুব আবেগি স্ট্যাটাস দিতে কিন্তু সেইসব সাময়িক আবেগি মানুষদের কখনো বৃষ্টি বিলাসে উন্মত্ত হতে দেখি নি । জলধারা স্পর্শ করার অনুভুতির সাথে তাদের পরিচয় নেই । আমি তাদের দলে পরি না- তা খুব গর্বের ব্যাপার না হলেও অন্তত সুখের ব্যাপারতো বটেই । আমার জন্মও হয়েছিল শ্রাবণ মাসেই । যেদিন আমার জন্ম হয় সেদিন থেকে শুরু করে পরের বেশ কিছুদিন কালো মেঘে আকাশ ঢেকে ছিল । প্রায় দুইদিন পরে নাকি বৃষ্টি হয়েছিল। আকাশের এমন পরিস্থিতি দেখে আমার দাদী আমার নাম রেখেছিলেন "মেঘলা" । কিন্তু বিপত্তি ঘটাল আমার নানী । উনার নাম পছন্দ হয় নি । উনি এই নাম রাখতে দেবেন না । এই নামকরণ নিয়ে সেইসময় আরও বড় ঝগড়া হওয়ার আগেই আমার নানুভাই প্রাথমিকভাবে আমার নাম রাখলেন "মেঘ" । কিন্তু আসল ঘটনা হল আমার আকিকার সময় এই নাম বাদ পড়ে "নিরাত্রি" নাম রাখা হল । অবাক ব্যাপার হল কোন এক অজানা কারনে আমার দাদী কোন আপত্তি করলেন না । তবে প্রায়ই আদর করে দাদী আমাকে উনার রাখা নামেই ডাকতেন । দাদী নেই । তারপরও মাঝে মাঝে নামটা শ্রবণইন্দ্রিয়ে ঝঙ্কার তোলে । তখন অনুভব করি কিছু কিছু কষ্ট অব্যাক্তই থেকে যায় । কাউকেই বলা যায় না । এক নির্ভরযোগ্য কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে ইচ্ছে করে ।

প্রতিটি মানুষের এমন কিছু কষ্ট নিশ্চয়ই আছে । কষ্টকে ভালবাসতে পারে বলে হয়ত মানুষের মধ্যেই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে । তারপরও কিছু কিছু কষ্ট চোখের আয়নায় ভেসে উঠে । অপরিচিত কেউ সেটা বুঝে ফেললে ভাল লাগার চেয়ে ভয় লাগে আরও বেশী । ঐ মুহূর্তে সহমর্মিতার অবয়বে সুযোগ সন্ধানী মনোভাবটা সহসা বোঝা যায় না । আমার জীবনে আমি এমন কিছু মানুষ কে খুব কাছ থেকে জেনেছি যারা আমার কষ্টগুলোকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার করেছে ।

আজ একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষকে দেখলাম যে আমাকে না জেনেও আমাকে বুঝতে পেরেছে । এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই যে পুরোপুরি আমাকে বুঝতে পারবে তারপরও --যতটুকু বুঝেছে ততটুকুই আশাতিত ছিল আমার জন্য । মাঝে মাঝে অসম্ভব মন খারাপ হলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে অজানায় হারিয়ে যাই । আজকের দিনটাও তেমনি একটি সময় । বের হলাম । কোথায় যাব জানি না । হেটেই চলেছি । রাস্তা বেশ ফাঁকা আর নীরব । হাটতে হাটতে প্রায় রাজারবাগ চলে এসেছি । রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়ালাম । আমি আবার একা একা রাস্তা পার হতে বেশ ভয় পাই । প্রায় ফাঁকা রাস্তায়ও আমি প্রায় মিনিট পাঁচেকের বেশী সময় ধরে দাড়িয়ে আছি । তারপরও পার হতে পারছি না অথবা পার হতে চাচ্ছি না । এমন সময় একজন সুপুরুষ এসে সামনে দাড়িয়ে সালাম দিল । সালামটা শুনে একটু বিরক্ত লাগলো । "স্লামালাইকুম" কি সঠিক উচ্চারণ হল !!!! সালামের ভুল উচ্চারণে আমার আবার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এমনিতেই মন খারাপ । এর মধ্যে এই যন্ত্রণা । বললাম "বলুন, আসসালামুআলাইকুম" !!! ভদ্রলোক হেসে আবার সঠিক উচ্চারণে সালাম দিলেন । এবার ভাল লাগলো । উত্তর দিলাম ।
-" চিনতে পেরেছেন আমাকে ?"
--একটু ভাল করে তাকালাম । কিন্তু চিনতে না পেরে একটু ভয় পেলাম মনে মনে । ভাবলাম "ছিনতাইকারী" নাতো !! আমার অভিব্যাক্তি দেখেই কিনা জানি না নিজে থেকেই উনি বললেন --
-- আমি অনিক । আপনার কলেজের বন্ধু শাহেদের বৌ রিনি-র এর কাজিন । ওদের বিয়েতেই দেখা হয়েছিল । আমি শুধু "ও" বলতেই পারলাম । কারন আমার কিছুই মনে পড়ছিল না আর মনে করতেও ইচ্ছে করছিল না । ভাল লাগছিল না কিছুই । আমাকে চুপ থাকতে দেখে নিজেই বললেন "কোথায় যাচ্ছেন ?"

কি বলব আমি ?? আমি নিজেই জানি না কোথায় যাচ্ছি । অনিক নিজেই বলল
--" আসুন, আপনাকে পৌঁছে দেই"
-- কোথায় ??
--যেখানে আপনার গন্তব্য !
--আমি জানি না ।
--- আমি জানি । চলুন ।

আমি মোটেও অবাক না হয়ে লক্ষ্মী মেয়ের মত গাড়িতে উঠে বসলাম । গাড়িটা শান্তিনগর হয়ে রূপসীবাঙলার পাশ দিয়ে ফার্মগেট হয়ে ক্যান্টনমেন্টের সুশোভিত অরণ্যের ভেতর আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল আর আমি মুগ্ধ হচ্ছিলাম । ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ছোট ছোট জলরাশি উইন্ডো গ্লাসে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে । আমার ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু আমি ছোঁব না । আজ আমার ইচ্ছে অ-পূর্ণের দিন । আমি চেয়ে আছি দিগন্তে । কখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে তা নিয়ে আমি যখন ব্যাস্ত তখন আমার পাশের মানুষটি খুব সাবধানে ড্রাইভ করে আমাকে আমার অজানা গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে । একটা জায়গায় এসে গাড়ি থেমে গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য । দেখলাম সামনে একটা বন্ধ গেট যেটার ঐ পাশে যাওয়া জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ । অনিক গাড়ি থেকে নেমে গেটের গার্ডের কাছে থাকা ফোনে কার সাথে যেন কথা বলল এবং ওয়ালেট থেকে কি একটা কার্ড বের করে কি যেন করলো । আর ম্যাজিকের মত গেট খুলে দেয়া হল । গেটের ঐ পাশে একটি অসম্ভব সুন্দর রাস্তা । পিচঢালা পথ । এয়ারপোর্ট রোডের সেই নিষিদ্ধ পথ । এত চমৎকার যে আমার মন হাল্কা হয়ে গেল । আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে হেটে চলেছি । এই পথের শেষ দেখতে চাই । কিন্তু পথ আর শেষ হয় না । আমি ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ি । পাশেই অনিক কে পাই । অন্যমন্সক হয়ে অনিক বলল,
--"এটা আমার পছন্দের একটা জায়গা । এটা আমার গন্তব্য । "
একটু অবাক হলাম আমি। অ্যারোপ্লেন আসা-যাওয়ার পথ কি কারো গন্তব্য হয় ? আমিতো বলেই ফেললাম,
--আপনি এখানে আসেন কেন ???
--- এমনি । নীলাকাশ দেখবো বলে ।
--আচ্ছা, আপনাকে ঢুকতে দিল কেন ?? ঐখানে সাইন বোর্ডে লিখা ছিল "জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ"
--আমরা জনসাধারণ নই । জনসাধারণের সেবক । তাই আমরা ঢুকতে পারি । আরও কিছুক্ষণ পর অনিক বলল,
-- আপনাকে একটা প্রশ্ন করি ?
--- জি করুন !
--আপনি সবসময় টিপ বাঁকা পড়েন কেন ??

প্রশ্নটা শুনে কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে গেলাম । কি বলব জানি না । এই বাঁকা হয়ে থাকা টিপ নিয়ে আমার একটা গোপন ইচ্ছে আছে । এই বাঁকা টিপটা কেউ যেন সবসময় সোজা করে দেয়ার বাহানায় আমার কপাল স্পর্শ করে । তার স্পর্শ যেন আমি পাই । এই গোপন ইচ্ছের কথা সবাইকে বলা যায় না ।

আমি সবসময়ের মত নিরব ছিলাম।আমার নীরবতার পর কথা আর বাড়ায় নি অনিক। কতক্ষণ বসেছিলাম জানি না । তবে আকাশে মেঘের আড়ালে ইদের চাঁদের উঁকিঝুঁকি দেখতে ভাল লাগছিল। একটা সময়ে অনিকের সাড়াতেই আবার গাড়িতে উঠে বসা । বাসায় ফেরা । বাসার সামনে এসে অনিক একটা কথাই বলল " আপনি কিছুই লুকাতে পারেন না । না কষ্ট , না ভালোবাসা " ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×