৬। বান্দর চুকা গাছ
আমাদের বাড়ির এক কোনায় একটা ঢেঁকি ঘর ছিল।ঢেঁকি ঘরের পেছনে কুয়ার পাড় আর একটা জাম্বুরা গাছ।জাম্বুরা গাছটা নিয়মিত ফলবতী হত,কিন্তু এর জাম্বুরাগুলো ছিল ভয়ঙ্কর টক।পাড়াপড়শীরা গাছটার একটা নাম দিয়েছিল,বান্দর চুকা গাছ।
গাছটা এমনভাবে হেলে দাড়িয়ে ছিল যে এর বেশ কয়েকটা বড় ডাল এসে পড়েছিল ঢেঁকি ঘরের উপরে।অর্থাৎ মোটামুটি যারা গাছ বাইতে জানে,তারা খুব সহজেই এই গাছ দিয়ে ওই ঘরের চালে উঠতে পারত।
আমি তখন ক্লাস টুতে পড়ি।হঠাৎ একদিন আত্মপলব্ধি হল আমার গাছে উঠা শেখা দরকার।
বাড়িতে অনেক আরোহণযোগ্য গাছ থাকলেও আমি টার্গেট নিলাম বান্দর চুকা গাছকেই।কারণ এটা দিয়ে সরাসরি ঘরের চালে উঠা যাচ্ছে।পরের দিন স্কুলে গিয়ে সবার কাছে গপ্প করা যাবে আমি ঘরের চালে উঠছিলাম।হতে পারে চালটা খুব উঁচু না,কিন্তু চাল তো।
যাই হোক,আমি ট্রাই মারা শুরু করলাম।নানান কারিগরি শেষে আমি পঞ্চম দিনে বৃক্ষ আরোহণ শেষে চালে পদার্পণ করলাম।আমার মুখে তখন হিলারী আর তেনজিং এর এভারেস্ট বিজয়ের হাসি।
কিন্তু প্রবলেম হল নামতে গিয়ে।আমি যেই চাল থেকে আবার জাম্বুরা গাছের ডালে উঠতে গেছি,তখন নিচের দিকে তাকালাম।ওরে বাপরে...মাটি এতো নিচে কেন?মনে হল আমি বুঝি সত্যি সত্যিই হিমালয়ে উঠে গেছি।এখান থেকে নামা কোন ভাবেই সম্ভব না।জীবনে আর কোন দিন মাটি পারাতে পারবো কিনা এই দুশ্চিন্তা আমায় জেঁকে ধরল।
ব্যাপারটা প্রথম খেয়াল করলেন আমার মা।বান্দর চুকা গাছজয়ী পুত্র যেখানে আনন্দে উদ্বেলিত থাকবে,সে মলিন মুখে চালে বসে আছে কেন?তিনি আমার নিষেধ সত্ত্বেও আশেপাশের বাড়ির লোকজন ডেকে আনলেন আমাকে ভূমিস্যাৎ করানোর জন্য।আমার এক চাচা চেয়ারের উপর দাড়ালেন,আমি তার কোলে লাফিয়ে পড়লাম।
বুঝেন,আমি কত উপরে উঠেছিলাম।
আমৃত্যু শৈশব চাই ১
আমৃত্যু শৈশব চাই ২
আমৃত্যু শৈশব চাই ৩
আমৃত্যু শৈশব চাই ৪
আমৃত্যু শৈশব চাই ৫