somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিন্তিত হইয়া হাঁটার বিপত্তি

২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু দিন আগের কথা। গুলিস্তান যাবো। সক্কাল বেলা ঠেলাঠেলি করে বাস উঠব এটা ভাবতেই বিরক্ত লাগতেসিল। সেই ভাবের ঘরে হানা দিলো মনসা কন্যা। সেই মহিলা সাপের ভয় দেখাইয়া দশ টাকা নিয়া নিসিল। তার বাক্সেও ভেতর কি ছিল সেই জানে। কিন্তু সাপের নাম শুনলেই আমি আধ-মরা। দশ টাকা দেবার পর সে আমার মাথায় বুলাইতে চাইলে সাহস করে তারে একখান ধমক দিসি। সে কিছু মনে করসে বলে মনে হয় নাই।

হিজড়া দেখলেও ভয়ে উল্টো দিকে হাঁটি। সেদিন মুদি দোকানে গেসিলাম। দোকানীকে বাজারের লিস্টি দিয়া একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। হঠাৎ সে যেন পেছন থেকে দাঁড়িতে হাত দিলো। চমকে পেছনে তাকাইয়া দেখি- এক হিজড়া, “'মাশাল্লাহ, তোমার দাঁড়িগুলা সুন্দর গো”'।
বললাম, “'থ্যাঙ্কু য়ু”'।
সে বলল, “'ওয়েল কাম”'।
দেখলাম ভয় পাই নাই। অবশ্যই এর আগে কেউ দাড়ি নিয়া প্রশংসা করসিল কিনা ইয়াদ হইল না।
তারপর সে দোকানদারকে বলল, “'এই উনারে ছিড়া প্যাকেট দিসো কেন, পাল্টাইয়া দাও'”।
তার এই খাতিরটাও ভালো লাগসে।
বিকেলে আমার এক বন্ধু বললেন,' “বেঁচে গেসেন, এরা খুব ডেনজারাস'”। ঠিক কথা, তবে সাপওয়ালী মতো না।

গতকাল মিরপুর মাজারে গেসিলাম মানে যাইতেসিলাম। কি চিন্তা করতেসিলাম আল্লাহ মালুম। সমস্যা হইল আমার চিন্তাগ্রস্ত মুখখানি দেখলে নাকি অসুস্থ্য অসুস্থ্য মনে হয়। অনেকদিন আগে আমার খুব পসন্দের টিচার আ ন ম ওয়াহিদুর রহমানের লেকচার শুনতেসিলাম। মনোযোগ দিয়া। হঠাৎ স্যার বললেন, 'এই তোমার কি হয়েছে, অসুস্থ্য নাকি'।
বললাম, 'না স্যার ঠিক আছি'।
স্যার কিছু হিতোপদেশ দিসিলেন। বলতে পারতেসিলাম না, মনোযোগ দিয়া কিছু চিন্তা করলে বা শুনলে আমার চেহারা এমন হয়ে যায়। স্যারের সেই লেকচারটি হুবহু না হলেও আজও অনেকখানি মনে আছে। সমস্যা হলো সেই চেহারাখান কেমন থাকে তা আমার পক্ষে দেখা সম্ভব না। আয়নার সামনে অনেকবার চিন্তিত মুখে তাকাইয়া সিলাম। কিন্তু সেটা তো মুখ ঘোমড়া করে রাখার অভিনয়, বাস্তব নয়।

চার-পাঁচ সাল আগে আন্দরকিল্লায় আমিন ভাইয়ের বাসার সামনে তার জন্য দাড়াইয়াসিলাম। কে যেন কাঁধে হাত রাখল।
বলল, 'বাবা এতো দুঃচিন্তা কেন? সব ঠিক হইয়া যাবে'।
মুশিবত। আমি তখন কোন চিন্তায় ছিলাম না। পরে শুনলাম ভদ্রলোক জামাত নেতা শাজাহান চৌধুরী। এই জিনিসটা মজা লাগসিল। এইভাবে যদি মানুষকে ইমপ্রেস করা যায়, খারাপ না। শাহাজান চৌধুরী নিয়া আমার কিছুই জানা নাই। তবে রাজনীতিবিদ’রা নিশ্চয় কিছু না কিছু দিয়া মানুষরে ইমপ্রেস করে।

ওহ, মিরপুর মাজার নিয়া যা বলতে ছিলাম। নিচের দিকে তাকাইয়া হাঁটছি।রাস্তার মধ্যে একজন হাত চেপে ধরল। বুড়া একজন মানুষ। লম্বা জোব্বা পরা। পান খাচ্ছে।
বলল, 'মাকে সন্মান করবি। মাকে দেখে রাখবি'।
ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পাইসিলাম বটে।
বললাম, 'ঠিক আছে। মাকে সন্মান করব'।
মায়ের কথা শুনে মনটা কেমন আর্দ্র হয়ে গেল। যাই হোক সেই লোক হাত ছাড়তেসে না। আমি হাত টেনে নিই। লোকটার হাতের কথা হইল, থাক না তোমার হাতটা ধরা।
তারপর বলল, 'এতো টেনশন কিসের'?
আমিও চিন্তায় পরলাম, 'আসলে এতো টেনশন কিসের'?
সে বলল, 'টেনশনের কোন কারণ নাই'।
আসলেই তো টেনশনের কোন কারণ নাই।
বললাম, 'ঠিক আছে টেনশন করব না'।
তারপর সে মাথায় হাত বুলাইয়া দিয়া বলল, 'তোরে বাপ ডাকলাম। দশটা টাকা দে। বাপ ডাকসি কিন্তু, না করতে পারবি না'।
আসলে বাপ ডাকলে কি না বলা যায়। যায়। কিন্তু ভয় পাইলে আর আত্ম-বিশ্বাস না থাকলে বাপ না বউয়ের ভাই বললেও ঘটনার হেরফের হয় না। দশ টাকা দিতেই হয়। তাড়াতাড়ি দশ টাকা দিলাম। তারপর সেই লোক খোদার খাসির মতো জোব্বা পরা এক লোকরে সেই দশ টাকা দিলো। সেই তিনগুন মোটা লোক দশ টাকার নোটটা রিকসাওয়ালারে দিলো। যাক, যদি আক্কেল থাকে এই এক শিক্ষায় যথেষ্ট। তা না হইলে আমার জীবনে বার বার এই ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:৩৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×