ময়না ও দুধওয়ালা
নতুন দুধওয়ালার উপর আর বিশ্বাস রাখতে পারছে না ময়না। যে কারণে আগের দুধওয়ালাকে বাদ দিয়েছে সেই কাজই সে করছে নতুন দুধওয়ালা। প্রথম ক’দিন ঠিকঠাকমতো দুধ দিলেও গেল মাস থেকে ময়না বুঝতে পারছে যে দুধওয়ালা দুধে পানি মিশাচ্ছে। সেদিন থেকে দুধওয়ালার সাথে দেখা করার মওকা খুঁজতে থাকে ময়না। কিন্তু দুধওয়ালাকে ধরতে পারেনা সে। কারণ দুধওয়ালা যখন তার বাসায় দুধ দিতে আসে তখন সে থাকে অফিসে। আর ছুটির দিন এই সময়টাতে সে যায় একটি টিউশনি করতে। কাজেই দুধওয়ালার পোয়াবারো। প্রতিদিন পানি মিশিয়ে দুধ দিয়ে যায় ময়নার কাজের মেয়ের কাছে। কাজের মেয়েকে বলে কোন লাভ হয়নি। উল্টো দু’কথা সে শুনিয়ে দিয়েছে ময়নাকে। মনে হয় যেন দুধওয়ালার সাথে হাত মিলিয়েছে সেও। কিন্তু ময়নাও নাছোড়বান্দা। একদিন অফিস কামাই করে বাসায় বসে থাকে সে। দুধওয়ালা আসতেই চেপে ধরে।
তাই তো বলি এত দুধ খাই তবুও মাথা ঘুরায় কেন? রোজ রোজ দুধে পানি মিশাও তাই না ?
কি যে বলেন আপনি ? এমন অধর্মের কাজ আমি করতে পারি ম্যাডাম ? দুধ বিক্রি করা আমাদের তিন পুরুষের ব্যবসা। আমি একাজ করলে আমাদের পূর্ব পুরুষদের আত্মা শাস্তি পাবে না ?
রাখো তোমার তিন পুরুষের ব্যবসা ! তোমাদের মতো দুধওয়ালাদের আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। তুমি যে দুধে পানি মিশাও এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
রাগে গলার স্বর চড়িয়ে ময়না বলে। ওর কথায় দুধওয়ালা কেমন যেন মিইয়ে যায়। তবুও সে আমতা আমতা করে বলে আসলে হয়েছে কি ম্যাডাম জানেন ? গরমের দিন তো তাই গাইটা বেশী বেশী পানি খাচ্ছে। তাই দুধটা একটু পানসে হয়ে গেছে।
কিন্তু দুধওয়ালার কথায দমবার পাত্রী নয় ময়না। সে মুখ বাঁকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বলে
আমাকে বোকা ভেবেছো তাই না ? গরু বেশী পানি খেলে দুধ পানসে হয়ে যায় ? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। তোমাকে চৌদ্দ শিকের ভিতর ঢুকিয়ে তবে ছাড়ব।
ময়নার কথায় এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে যায় দুধওয়ালা। তার মিথ্যে ঝাড়িঝুড়ি যে এখানে ঠিকবে না সেটা পরিস্কার হয়ে যায় ওর কাছে। গলায় যথাসম্ভব আকুতি ঝরিয়ে বলে
ম্যাডাম, এ কাজটি করবেন না। আগে আমার সব কথা শুনুন। তারপর আপনার যা ইচ্ছে হয় করবেন।
তার আকুতিতে একটু নরম হয় ময়না।
ঠিক আছে, বলো কি বলবে।
ম্যাডাম বলছিলাম কি। এখন তো গরমের দিন। গাইটা শুধু যে বেশী পানি খায় তাই নয়। গোসল করাতে পানিতে নামালে আর উঠতে চায়না। আমার মনে হয় অনেকক্ষণ পানিতে থাকার কারণে পানি চামড়া ভেদ করে গাইটার শরীরে গিয়ে দুধের শিরায় মিশে যায়। তাই বোধহয় দুধ পানসে লাগে।
দুধওয়ালার কথায় রাগ সপ্তমে চড়ে যায় ময়নার।
তোমার এমন উদ্ভট কথা আমি বিশ্বাস করব ভেবেছো ? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। এক্ষুণি আমি পুলিশকে খবর দিচ্ছি।
ময়নার কথায় এবার মরিয়া হয়ে উঠে দুধওয়ালা। তার কন্ঠে আকুতি ঝরে পড়ে। বিনীত অনুরোধ জানায় সে ময়নাকে।
ম্যাডাম, শেষবারের মতো আমার কথাটা শুনুন। এরপর আপনার যা ইচ্ছে হয় করবেন।
ঠিক আছে, যা বলবে ঝটপট বলো। তোমার কথা মানেই তো অনুর্বর মস্তিস্কের উদ্ভট চিন্তার ফল।
দু’হাত কচলিয়ে সারা শরীরে গদগদ ভাব ফুটিয়ে তোলে দুধওয়ালা বলে
ম্যাডাম, এতক্ষণ আমি যা বলেছি সবই ছিল মিথ্যা, বানোয়াট। সেজন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। আর আসল সত্যটা বলার অনুমতি চাইছি।
বল, সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। দুধে পানি মিশাও সে কথা তো চেপে রাখার কোন উপায় নেই। সেটাই তো বলবে ? বলো।
ম্যাডাম, সত্য কথাটা হলো আমি দুধে কখনও পানি মিশাই না।
তাহলে করটা কি ? দুধ এত পানসে লাগে কেন ?
প্রায় চীৎকার করে উঠে ময়না।
আগের মতো ভক্তিতে গদগদ হয়ে দুধওয়ালা বলে
ম্যাডাম, আমি দুধের সাথে পানি মিশাই না, পানির সাথে দুধ মিশাই।