somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেন্টমার্টিন দ্বীপে তাবুবাস।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পোস্টটি প্রথমে আমার ব্লগস্পটের ব্লগে প্রকাশ করি। ভ্রমনলগ :- সেন্টমার্টিন দ্বীপে তাবুবাস। পর্বে। এই পোস্টটি সামুতেও লিখলাম সবাই পড়ার জন্য।

রাত মনে হয় তখন ১১ টা । হটাৎ করে সাফায়েত ভাই ফোন দিল, সজল সেন্ট মার্টিন যাবা ? আমি বললাম , দেখি ভাই টাইম বের করতে পারিকিনা। উনি বলল :- “তুমি গেলে ভাল হয়। আমি আগে কখনো যায়নি।“ কনভারসেশনটা যেভাবে হুট করে শুরু হয় সেভাবেই শেষ হয়ে যায়।

মাথার মধ্যে কেও একটা ট্যুর প্রান দিলে , সেটা মাথার মধ্যেই ঘুরতেই থাকে। সব উল্টাপাল্টা হয়ে যায় যতক্ষন পর্যন্তনা ট্যুরটাই যাওয়া না হয় , শেষ না হয়। সেন্টমার্টিনে আগে ২ বার যাওয়া হলেও কখনো ক্যাম্পিং করা হয়নি।
তো একদিন ফোন করে সাফু ভাইকে বললাম টিকিট কাটতে। রাত ২টার টা। উনি তো অবাক!! রাত দুইটা কেন ? আমি বললাম সাগরে ট্রলারে করে সেন্টমাটিন যেতে না চাইলে রাত দুটার পরের টিকিট-ই কাটতে হবে।
২২ / ৩ / ২০১২
--------------------------------------------------------
তো মার্চ মাসের এক গভীর রাতে ব্যাগ , তাবু নিয়া ঘর থেকে বের হতে গেলাম , আম্মা বলল কই যাস ? আমি বললাম আম্মা এক বন্ধুর বোনের বিয়ে , গায়ে হলুদ। দুদিন ঘরে থাকবোনা। আম্মা স্লিপিং ব্যাগ আর তাবু সমেত ফুলে ফেফে উঠা ব্যাগের দিকে তাকিয়ে থাকে আর আমি সুরুত করে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
রাত দুটাই চট্রগ্রামের সিনেমা প্লেস এর এস আলম কাউন্টারে বসে আছি। দেখি সাফায়েত ভাই আর উনার ৩ বন্ধু আর দলের সবচেয়ে ছটো সদস্য সায়েম বসে আছে। এত জন যাচ্ছে যানতামনা। সারপ্রাইজ ছিল। আমিও একটা সারপ্রাইজ দিলাম , বোমা ফাটালাম যেন , বললাম আমরা দ্বীপে হোটেল উঠবনা। সাথে করে নিয়ে আসা তাবুতে থাকবো। সবাই একবার আমার দিকে দেখে আর সাথে থাকা তাবু গুলার দিকে দেখে। ক্যাম্পিং আমি ছাড়া এ দলের সবার জন্য নতুন। :D

[নোট:- চট্রগ্রাম থেকে গভীর রাতে অনেক বাসই টেকনাফ বা শাহ পরীর দ্বীপে যায়।
সোদিয়া এস আলম এর ২ টার পর দুটা বাস টেকনাফের উদ্দেশ্যো ছাড়ে। আর শাহ আমিন সার্ভিসের একটা বাস। এস আলমের ঔই বাস দুটার টিকিট কাটতে হলে আপনাকে সিনেমা প্যেলেস এর মোড়ের ( ন্দনকানন ) এর সোদিয়া কাউন্টারে যেতে হবে , বাস দুটাই প্রতিদিন রাতের ২ থেকে ২:৪০ এর মধ্যে ছেড়ে যায়। শাহ আমিন বাসের মেইন অফিস দেওয়ান হাটে। দুই কম্পানির বাসের টিকিটই ৪০০ টাকা জনপ্রতি। তো প্রশ্ন করতে পারেন রাতের ২ টাই কেন টেকনাফ যাবো ? ভোরে নই কেন? কারণ সেন্ট মার্টিনের জন্য টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট থেকে সব জাহাজ বা ভেসেল সকাল ৯:৩০ এর মধ্যেই ছেড়ে যায়। রাতের বাসে উঠলে আপনি ঠিক সময়ে পোছে যাবেন। অন্যথায় মাছ ধরার বা যাত্রি টানার সার্ভিস ট্রলারে যেতে হবে। ট্রলার যাত্রা এডভেন্চার হলেও , গভীর সমুদ্রে খুবই বিপদ জনক। ]

২৩/০৩/২০১২
-------------------------------------------------------
তো বাস রাত ২:৩০ এ ছাড়লো। আনেক চেস্টা করেও জানালার পাশের সিট পাইলামনা। দলের সবাই একটা একটা করে দখল করে বসে আছে।সিটে বসে ঘুমাই গেলাম। কখন যে বিশ্ব রোড / লিংক রোড় চলে আসলাম বলতেও পারিনাই। বাসে ব্রেক দিল। চা খেয়ে ঘুমাই গেলাম আবার।তবে রাতে কয়েকবার বিজিবি চেক পোস্টে গাড়ী থামিয়ে পুরা গাড়ী চেক করলো। একবারতো আমাকে নেমে বাসের ডিকি তে রাখা আমার ব্যাগ প্যাকটি খুলে দেখাতে হলো। উখিয়া পর্যন্ত কিছুই টের পেলামনা। এর পর যেন ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেল। বাস যেন লাফিয়ে লাফিয়ে চলতেছে। রাস্তার বেহাল দশা। আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম। সকালের আলো ফুটলো , একদিকে পাহাড় আর অন্যদিকে নদী। সুন্দর একটা রাস্তা দিয়ে অবশেষে টেকনাফ থেকে কিছু কিলোমিটার আগে দমদমিয়া জাহাজ ঘাটাই নামলাম। কেয়ারি জাহাজে টিকিট কাটতে ডুকলাম। ওদের দুটা জাহাজ একটা কেয়ারি সিন্দাবাদ অন্যটা কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন। ক্রুজ এন্ড ডাইন জাহাজটাই সবচাইতে ভালো। নতুন ছিল তখন। নরমাল সিট চাইল ৮০০ টাকা। আর ভিআইপি ১২০০ টাকা। ভিআইপি আর আর নরমাল ( কোরাল) সিট আসলে কিছুইনা। জাহাজ ছাড়ার পর সবগুলাতেই যাওয়া যায় বসা যায়। তো “কোরাল” সিটের টিকিটের দাম আমি ৩০০ টাকা মূলিয়ে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে সকালের নাস্তা খেতে ঠুকলাম। কেয়ারির একটা লোক এসে বললো ৪০০ টাকাই যাবোকিনা। রাজি হয়ে গেলাম।


ছবি :- ওই দেখা যায় কেয়ারী সিন্দাবাদ। ওটার পেটের ভেতরদিয়ে আমরা পাশের ক্রুজ এন্ড ডাইন এ উঠলাম।


ছবি:- যাত্রা তবে শুরু। কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজ আমাদের জাহাজ থেকে।


ছবি:- মনেই হচ্ছেলনা যে আমরা একটা জাহাজে আছি। যেন কোন সমতলের রেস্তোরা।

ক্রুজ জাহাজটা নতুন হওয়াই সুযোগ সুবিধা ভাল ছিলা। সব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছিল। মোবাইলটা চার্জে লাগিয়ে আমরা জাহাজটা পরিদর্শনে বের হলাম। ইন্জিন রুম , ভিআইপি রুম , ছাদ , উপরের ছোটো রেস্তোরা। সব দেখে ফেল্লাম। একপাশে বাংলাদেশ অন্যপাশে মায়ানমার । সাতরেই যেন যেকোন এক দেশে ঢুকে যাওয়া যায়। তা হলে আমারদের জাহাজ কি এখন নো মেনস ওয়াটারের উপর চলতেছে :P ?


ছবি:- মিয়ানমার এর একটা সৈকত।

আমারা যখন সেন্টমার্টিন আইল্যান্ড কে দুর থেকে একটা রেখার মত দেখলাম তখন ঘড়িতে ১২ টার ও বেশি বাজে।


ছবি :- ওই দেখা যায় সেন্টমার্টিন।


ছবি:- সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট। প্রায় সবকটা জাহাজ সমেত।

দ্বীপে যখন নামলাম তখন মাথার উপর কড়া রোদ। আমাদের কোন তাড়া হুড়া ছিলনা। উল্টো খিদালাগছিল। তো নমেই ব্যাগ বুগ রাখার জন্য জায়গা খুজতে লাগলাম। হাটতে হাটতে আমরা ডেইল পাড়া বিচের কাছে চলে আসলাম। রিয়াদ গেস্ট হাউজে কথা বললাম। মালিক লোকটা খু্ব ভালো। অনেক বুঝানোর পর মাত্র ২০০ টাকায় আমাদের একটা রুম দিল যেটায় ব্যাগও রাখতে পারবো , টয়লেট ব্যবহার করতে পারবো। আমরা আগেই বলে দিয়েছিলাম যে আমরা থাকবোনা , শুধু ব্যাগ রাখবো আর বাথরুমটা ব্যাবহার করবো। তো ব্যাগট্যাগ সব হোটেলে রেখে দরজায় ভাল করে তালামেরে টেনেটুনে দেখে আমরা বের হলাম নারিকেল জিনজিরা দ্বীপে ঘুরতে। প্রথমেই াামরা খাবার খেতে গেলাম। দ্বিপে অনকে হোটেল আছে। সবকটাই মাছের আইটেম । সব মাছ ভাজা কাচা যেরকমই থাকুকু বাইরে সাজিয়ে রাখে। আমরা প্যাকেজ সিস্টেম খাবারটাই নিলাম। জনপ্রতি ১২০ টাকা। সবজি , ডাল, ভাত আর একটা মাছ। মাছ চাইলে আমরাই বেছে নিতে পারবো। বাইরে সাজানো মাছ গুলা দেখতে লাগলাম। নাম অজানা অনেক মাছো সাজিয়ে রাখছে। আমি একটা বড় রুপচাদা মাছ বেছে নিলাম। সায়েম টেনসেনে পড়ে গেল কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে।


ছবি:- মাছ লাইবানা ?


ছবি:- কাঁকড়া।


ছবি :- সারি সারি চিংড়ি আর কাঁকড়া ভাজার অপেক্ষায়।

খাওয়া শেষ। রোদো কমে গেছে। টুরিস্ট যারা যারা দ্বীপে রয়ে গেছে তারা একে একে বের হতে লাগলো। আমাতের সায়েম আর ইহান ভাইতো এত্ত সুন্দর সুন্দর টুরিস্ট দেইখা তারাতারি তাদের সানগ্লাস , শার্ট ঠিক ঠাক করে নিল। আমরা দ্বীপ ঘুরার জন্য উঠতে লাগলাম। সায়েমকে দেখি মুখ হা করে একদিকে তাকিয়ে বসে আছে। ওই দিকে তাকালাম। দেখি থ্রিকোয়াটার পড়া শহুরে এক মেয়ে টুরিস্টের দিকে সে তাকিয়ে আছে হা করে। তারাতারি তাকে টেনে নিয়ে আসলাম। বাচ্চা ছেলে আবার লাব এট ফাস্ট সাইড হয়ে গেলে ?
তো প্রথমেই দ্বীপের যেদিকে মানুষ জন কম সেদিকে এগুলাম । ডেইল পাড়া বিচের দিকে। সায়েম বেজার মুখে আমাদের সাথে রওনা দিল। বুঝলাম বেচারার মন এখন আর ক্যাম্পিং এ নাই , সুন্দরীর দিকেই তার মন পড়ে আছে।


ছবি:- জেটি ঘাট । জাহাজ সব চলে গেছে। রোদের কারণে পুরা সৈকত এবং জেটি টুরিস্ট শুন্য।


ছবি:- ডেইল পাড়া বিচ।


ছবি:- সমুদ্রের পানিটা দেখছেন ? এজন্যই তো সেন্টমার্টিন এত্ত ভালো লাগে।

আমরা হাটতে লাগলাম , দেখতে লাগলাম। ইহান ভাই আর রিদওয়ান ভাই দেখি জায়গায় জায়গায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে প্রোফাইল ফটো দুলতেছে , ফেবুতে আপ দেওয়ার জন্য। আমরা চোখ কানও খোলা রাখলাম , ক্যাম্প সাইটের জন্য। কয়েকটা জায়গা পছন্দ হলো তাবু খাটানোর জন্য। তো শেষে সবাই মিলে ঠিক করলাম একেবারে বিচের পাশে তাবু না খাটিয়ে একটু দরে গাছপালার ভেতরে তাবু খাটাবো। কারণ বাতাসের মাত্রাটা বেশি। ক্যাম্প সাইট সিলেক্ট হওয়ার সাথে সাথে সবাই ঠিক করলাম এখন গোসোল করা যায়। প্যান্ট , শার্ট খুলে সমুদ্রে যাপিয়ে পড়লাম অবশ্যই ভেতরের আন্ডার প্যান্ট, বক্সার পড়া ছিল। সৈকতে কেও না থাকলেও আমরাতো সভ্য জগতের পোলাপাইন।

সাফায়েত ভাই দেখলাম দুরের একটা বেড়ার দোকান থেকে ফুটবল কিনে আনলো। পানিতে ফুটবল ছুড়া ছুড়ি শুরু হলো। কোন সময় যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসলো আমরা টেরই পেলামনা।


ছবি :- পাথর , বালু , পানি আর সুর্য । আর কিছু লাগবে ?


ছবি:- কত্ত বড় গাছ। সেন্টমার্টিনের মাথার উপর উঠে বসে আছে।


ছবি:- সুর্য যাচ্ছে তার বাড়ী আর আমরা ডাব খাই আরতা দেখি।


ছবি:- মাঝিরা যার যার ঘরে ফেরত এসেছে।


ছবি:- সেন্টমার্টিনি বয়জ প্লেইং ক্রিকেট। দারুন একটা সন্ধ্যা গেল।
আমি আর সাফায়েত ভাই সেন্টমার্টিনের মূল বাজারে আসলাম। একট দোকানে ডুকে মুরগি কিনলাম , ডিম কিনলাম , গাজর , শশাও কিনলাম। দোকানদার একটু অবাক হলো। থ্রি কোয়াটার পড়া টুরিস্টদের নিশ্চয় ওরা মুরগি , ডিম কিনতে দেখনা দ্বীপে। তারপর আমরা সোজা ব্যাগ-বুগ নিয়ে হেটে ক্যাম্পসাইটে চলে আসলাম। সবাই মিলে ৩টা তাবু খাটিয়ে ফেল্লাম আমরা।


ছবি:- তাবু খাটানো চলছে।

৮টার দিকে বিকট আওয়াজ করে দুরে কোথাও জেনারেটর অফ হয়ে গেল। সব কেমন যেন হটাত করে নিরব হয়ে গেল। সেন্ট মার্টিনে সরকারি ভাবে কোন বিদ্যুৎ লাইন নেই। তাই পুরা দ্বীপের একমাত্র ভরসা জেনারেটর । রাতে ১০-১১ টার মধ্যে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন সেন্টমার্টিনকে ভুতরে একটা দ্বীপ মনে হয়।


ছবি:- ঘুটঘুটে অন্ধকারে চাজার লাইটের আলোই ক্যাম্প স্থাপন চলছে।


ছবি:- তিনটে তাবুই খাটানো হয়ে গেছে । এখন খালি বারবিকিউ , খাওয়াদাওয়া , আড্ডা আর ঘুম।

বারবিকিউর জন্য আমরা চট্রগ্রাম থেকেই মসলা , কয়লা নিয়ে আসছিলাম। আর বাকি জিনিস দ্বীপেই কিনে নিয়েছি। আর সেন্টমার্টিনে সৈকতের কাছে বড় আগুন ধরানো নিষেধ। কেও কিছু না বললেও ধরানো উচিতনা। কারণ রাতের বেলা সমুদ্রের অনেক ওয়াইর্ড লাইফ বালুতে উঠে আসে। তাদের বিরক্ত করা হয়। সাভাবিক চলাচলেও সমস্যা হয়। দুরের বোট গুলাও সমস্যাই পড়ে। তাই আমরা বড় কোন আগুন ধরালামনা।


ছবি:- ক্যাম্প ফায়ার না। বারবিকিউর জন্য কয়লায় আগুন ধরানো হচ্ছে।


ছবি:- মুরগী গুলাকে আমরা নির্মম ভাবে পুড়িয়ে খেয়ে ফেল্লাম।

হটাত দেখি স্থানীয় একজন লোক এসে দুর থেকে আমাদের কান্ড দেখতে লাগলো। সে নাকি আগুন দেখে দেখতে এসেছে কি ঘটনা। আমরা কেউ নারিকেল গাছে উঠতে পারিনা। তাকে বলার সাথে সাথে সে টপাটপ ক্যাম্প সাইটের দু তিনটা নারিকেল গাছে উঠে ১০-১২টা নারিকেলে পেড়ে ফেল্ল। তাকে কিছু টাকা সাধলাম নিলনা। যে নারিকেল আমরা ২০-২৫ টাকা করে বিকালে খেলাম। তার থেকেও তাজা নারিকেলের পানি সম্পুর্ন ফ্রিতে খেলাম। খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গেলাম। তাবুর চারপাশে অসংখ্য কুকুরের উপস্থিতি টের পেলাম। বাইরে বের হয়ে যখন ঘুট ঘুটে অন্ধকারে টর্চ লাইটের আরো ফেললাম অনেক গুলো জ্বল জ্বলে চোখ দেখি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভুতুড়ে পরিবেশ পুরা। তারা তাড়ি তাবুর ভেতরে ডুকে চেইন লাগিয়ে দিলাম। সমুদ্রের গর্জন আর অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ শুন শুনে ঘুমিয়ে গেলাম।

[নোট:- আপনি সকাল নটার মধ্যে টেকনাফ থেকে কিছু কিলোমিটার আগে দমদমিয়া ঘাটে নামতে পারলে জাহাজের টিকিট কেটে সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন। অনেক জাহাজ আছে কেয়ারী সিন্দাবাদ , কেয়ারী ক্রজ এন্ড ডাইন , এলটিসি কুতুবদিয়া , ঈগল ইত্যাদি। ভাড়া যাই বলুক দাম দর করে টিকিট কাটুন। আপনি যেদিন ই যাননা কেন। রিটার্ণ আসতে পারবেন যে কোন দিন। রিটার্ন টিকিট টা ভাল ভাবে বুঝে নিন। দ্বীপে হোটেল রেন্ট একটু বেশি সামনের দিকের হোটেল গুলাই। একটু হেটে ভেতরে গেলে সস্তা পাবেন। রিয়াদ গেস্ট হাউজ , সিমানা পেরিয়ে মুটা মুটি সস্তা। আর নিজস্ব তাবুতে থাকতে চাইলে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। সন্ধ্যা হয়ে গেলে তাবু খাটিয়ে ফেলুন। মনে রাখবেন সেন্টমার্টিনের খাবার পানি মাটির খুব কাছের লেয়ার থেকে তোলা হয়। তাই যত্র তত্র ময়লা পেলবেননা , টয়লেট করবেননা। প্লাস্টিকের বা অপচনশিল কিছুই ফেলে আসবেননা। ]

২৪/০৩/২০১১
------------------------------------------------------
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম জোয়ারের পানির শব্দে। চারদিকে কেমন ঠান্ডা বাতাস। পরিবেশটাই কেমন যেন ছিল।


ছবি:- শুভ সকাল।


ছবি:- সকালের আলোই ক্যাম্পসাইট। চারদিকে ভালো করে দেখলাম। কারণ রাতে কোথাই ক্যাম্প করছি আমরা নিজেরাই যানিনা।

তাবু গুটিয়ে হোটেলে এসে গোসোল করে নিলাম। এরপর নাস্তা সেরে ছেড়া দ্বীপে যাত্রা। জেটি ঘাট থেকে ১২০ টাকা দরে ট্রলারে যাত্রা শুরু করলাম। উদ্দেশ্য ছেড়া দ্বীপ। আমরা ছেড়া দ্বীপে হেটে হেটে গিয়ে তাবু খাটিয়ে থাকার প্লান করলেও তা পারলামনা সময়ের অভাবে জরুরী কল। শহরে ফেরত যেতে হবে। কিন্তু এর পরে আমি ছেড়া দ্বীপে আসি আবার এবং দারুন একটা ক্যাম্পিং করি। ওই গল্পটা আরেকদিন বলব।

তো আমরা একটা ট্রলারে করে ছেড়া দ্বীপের পথে যেতে থাকলাম। যেতে যেতে পুরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ দেখা যায়। কারণ ছেড়া দ্বীপ টা সেন্ট মার্টিন এর একেবারে শেষে , সেন্ট মার্টিনের-ই একটা অংশ। শুধু জোয়ারের পানি বাড়লে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুধুমাত্র পুর্ণ জোয়ারের সময় হেটে হেটে সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়া দ্বীপ যওয়া যায়না। বাকি সবসময় যতে পারবেন। সময় নেবে ১.৫ থেকে ২ ঘন্টার মত। আমরা সময় সল্পতা আর রোদের কারণে বোটেই রওনা দিলাম।


ছবি :- আমরা প্রায় সবাই বোটের ভেতর।


ছবি:- টুরিস্ট বোট।


ছবি:- ওই দেখা যায় ছেড়া দ্বীপ।

আমাদের সাথে অন্য কিছু টুরিস্টও উঠলো। ছেড়া দ্বীপের ঘাটে এসে বড় বোট থেকে ছোট একটা বোটে করে ছেড়া দ্বীপে নেমে গেলাম। পিচ্চি একটা দ্বীপ। একটা দৌড় দিয়ে ঘুরে ফেলা যায়। কিন্ত অপরুপ। আমরা বসে , ঘুরে অনেকটা সময় কাটালাম। প্রচুর ডাব খেলাম। কাল রাতে সেন্টমার্টিনের ডাবের পানির সাথে একটু পার্থক্য পেলাম। প্রশ্ন করায় দোকান দারই বললো যে এগুলা আসলে টেকনাফের ডাব। সেন্ট মার্টিনের না। কোথায় এসে কি খাচ্ছি ?


ছবি:- সাফু ডাব খাই।


ছবি:- দোস্তি।


ছবি:- ছেড়া দ্বীপের পাথুরে পানি। একটু গভীরে সনরকল করতে পারা যায়।


ছবি:- অজানা ফল।

এবার ফেরা। তার আগে একটু “ সমুদ্র বিলিসে” টু মেরে আসলাম।


ছবি:- সমুদ্র বিলাস।

এরপর দুপুর তিনটায় জাহাজে উঠে পড়লাম। এবার বাড়ী ফেরার পালা।


ছবি:- ছুড়ে দেওয়া খাবার এরা উড়তে উড়তেই লুফে নেয়। জাহাজ থেকে তোলা।

এরপরে একবার ছেড়া দ্বীপে পুর্ণিমায় ক্যাম্পিং করেছি। সে গল্প আরেক দিন বলবো। অপেক্ষায় থাকুন। :D

এই ট্রিপের জন্য আমি প্রথমেই ধন্যবাদ দেব আমার টিমের লোকজনকে। এরপরই দুটা তাবু ধার দেওয়ার জন্য জাফর ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর তথ্য ও টিপস দেওয়ার জন্য "রাব্বি" ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তার ব্লগটা অনেক হেল্প করছিল । এপর বিল্লাহ মামুন ভাইকেও ধন্যবাদ দরকারি কিছু হেল্প করার জন্য।

[ নোট :- দ্বীপে খাবারের বেশ কটি রেস্টুরেন্ট আছে। প্যাকেজ সিস্টেমও খেতে পারেন , নন প্যাকেজেও। হোটেল ভাড়া আর খাবারের দাম টুরিস্ট সিজন আর জাহাজ আসা যাওয়ার টাইমের উপর উঠে নামে। প্লিজ কোন “কোরাল বিক্রেতার থেকে কোরাল ,শৈবাল এসব কিনবেননা। আপনারা কিনতে থাকলে তারা সমুদ্র থেকে আহরণ করবে। আর এক সময় দেখা যাবে সেন্ট মার্টিন সমুদ্র থেকে হারিয়ে যাবে। সেন্টমার্টিন থেকে ভোরে হাটা দিলে আপনি পুরা দ্বীপে একটা চক্কর দিয়ে আসতে পারবেন দুপুরের মধ্যেই। ছেড়া দ্বীপে হেটে হেটে হেটে যেতে চাইলে জোয়ার ভাটার টাইমটা যেনে নিন স্থানীয় দের থেকে। ]

সবই লিখে দিলাম। তাও কোন প্রশ্ন থাকলে ইমেইল করুন:- [email protected] বা আমার >ফেসবুকে< নক করুন।

আর আমি ভারত ভ্রমন নিয়েও লিখছি। বিস্তারিত তথ্য সমেত। পড়তে এখানে Click করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×