somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কি নেটকোহলিক হয়ে যাচ্ছি? মাঈনউদ্দিন মইনুল।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশেষ উপলক্ষে আমার প্রিয় বন্ধুটি সেদিন যখন বাসায় আসলো, তখন তার অস্থিরতা দেখে তো আমি রীতিমতো অবাক! এতদিন পর দেখা, কিন্তু আড্ডাবাজ বন্ধুটি এমন অস্থির হয়ে বাসায় ফিরতে চাচ্ছে কেন? অনেক অনুরোধ করে আরেকটু সময় দিতে রাজি করানোর পর সে বললো, তোর কম্পিউটার কোন্ রুমে, নেট কানেকশন আছে?

ভাবলাম জরুরি কাজ হয়তো; তাই নির্দ্বিধায় খুলে দিলাম। আমি এটাওটা করে যখন পড়ার ঘরে ঢুকলাম, তখন দেখলাম বন্ধুটি আমার বেশ শান্ত ভঙ্গিতে কমপিউটারে কী যেন লিখছে? যা খুশি তা-ই করুক, তাতে আমার কী! কিন্তু প্রায় দু’ঘণ্টা পার হবার পরও কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে একটু কাছে গেলাম। দেখছি, মিটমিট করে হাসছে আর কী যেন লিখছে!

আমার বন্ধুটি ইংরেজি একটি ইন্টারএকটিভ ব্লগসাইটে নিয়মিত লেখে। তার আইডি আছে ফেইসবুক ইউটিউব ভিমিও টুইটার মাইস্পেইস লিংক্ড ইন ফ্লিকার এমএসএন স্টাইপে এবং প্রায় সব সাইটেই যেখানে আইডি দরকার। সরকারি চাকুরিতে যুক্ত থাকার সুবাদে যে পেয়েছে অঢেল সময়। আজকাল তাকে ফোন করলে খুব তাড়াহুড়ো করে কথা শেষ করে দেয়। নিজে তো ফোন করেই না! বাইরে সাক্ষাৎ প্রায় হয়ই না এখন আর। সমাজ বা বন্ধু না হয় বাদই দিলাম, আমি ভাবছি তার পরিবার তথা সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর কথা। সেকি আজকাল তার স্ত্রী-সন্তানকে দু্’দণ্ড সময় দিতে পারে? যদি না পারে, তবে তার ফল কী হতে পারে?

আপনি কি এলকোহলিক? এরকমের প্রশ্নে সেরা এলকোহলিকেও আঁতকে ওঠে বলবে, “না তো! তা কেন হতে যাবে?” কিন্তু এপ্রজন্মের কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় সে ইন্টারনেট-আসক্ত কিনা, তার পক্ষে সত্য উত্তর দেওয়া কিন্তু কঠিন হয়ে যাবে। ইন্টারনেট থেকে যেমন অনেক শব্দ সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তেমনি এর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি বুঝানোর জন্য সৃষ্টি হয়েছে নেটকোহলিক শব্দটি। যেভাবে বিভিন্ন সাইটে আর পত্রপত্রিকায় যেভাবে নেটকোহলিক-দের সাহায্যে এগিয়ে আসছে আর বিভিন্ন ধরণের গবেষণা-প্রতিবেদন প্রকাশ করছে, তাতে বিষয়টি আমলে না দিয়ে উপায় নেই। ‘কীভাবে ঘনঘন চা পান থেকে মুক্তি পাওয়া যায়’ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করার পর আমার বন্ধুটি বলেছিলো, “চল চা পান করতে করতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি!” তাই চলুন নেটে থাকতে থাকতে চিন্তা করি কীভাবে এথেকে উদ্ধার পাওয়া যায়।

আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় যে, ইন্টারনেট-এর তথ্যের প্রাচুর্য্যতা ও সহজলভ্যতায় এতই মায়া আছে যে, চাইলেও পারি না লগঅফ করতে। একটির পর একটি সাইটে ক্লিক করে যাই, পড়ি-পড়বো করতে করতে।

নোবেলপ্রাইজ বিজয়ী হারবার্ট সাইমন (১৯৭৮) বলেছিলেন,“A wealth of information creates a poverty of attention"। বুঝতে পারি এখন ওঠার সময় হয়েছে, তবু ওঠতে ঠিক পারি না।


কিন্তু যেহেতু বিষয়টি সামনে চলেই এসেছে, দু’টি সতর্কবাণী জানিয়েই শেষ করি। যদি মনে করেন আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার আসক্তির পর্যায়ে পড়ে, তবে দেখা দরকার ঠিক কোন্ ধরণের সাইটে আপনি সময় দিচ্ছেন: লিংকডইনে নাকি ফেইসবুকে, ইমেইলে নাকি অনলাইন পত্রিকায়, ব্লগে নাকি ইউটিউবে, স্কাইপেতে নাকি টুইটারে ইত্যাদি। রেসকিউটাইম আর টাইমডক্টর হলো এমন দুটো প্রোগ্রাম যা খুব সহজেই ডাউনলোড করে বুঝতে পারা যায় ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরণ ও প্রবণতা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ভারচুয়াল সমাজ যেন একচুয়াল সমাজকে ধ্বংস না করে দেয়। শুভ ব্লগিং, শুভ রিলেশনশিপ!

*ছবি: ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:১৬
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×