somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়নাল নামা

১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




(১.)নিরীহ জয়নাল

জয়নাল আমার বন্ধু। খুবই লাজুক স্বভাবের। তবে প্রচন্ড রসিক। s.s.c পরীক্ষার পরে ও আমার কাছে চলে এল। আমি তখন ট্ঙ্গীতে থাকতাম। এবং একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরীতে সেলাই মেশিন অপারেটর পদে কর্মরত ছিলাম। ও আমাকে ধরল আমার সাথে কাজ করবে,বাড়ি থেকে রাগ করে চলেএসেছে। কিছুতেই আর ফিরবে না। ওর আগ্রহের কারনে ওর কাজ ও থাকার ব্যবস্থা করলাম।

ও আর আমি এক সাথে থাকলে যে কোন বিষয় এমন ভাবে উপস্থাপন করতে পারি যে সেখানে দর্শক কেউ থাকলে হাসতে হাসতে তার অবস্থা টাইট। আমি নিজে ছোট বেলা থেকে কথা কম বলি। তবে ওর সঙ্গে থাকলে সারা দিন ননস্টপ বকবক করতে কোন সমস্যা হয়না। শাহিন এবং কাজলের কৌতুকের ভিডিও দেখে দুজন মুখস্ত করে ফেলতাম। পরে সারাদিন তা কমিক করে অভিনয় করতাম আর হাসাহাসি করতাম।

আমরা সমবয়সি হলেও, ও আমার ৩ ক্লাস নিচে পড়ত। এবং আমি ওকে কাজ শিখিয়েছি। এজন্য আমি সবসময় ওর সাথে সিনিয়র সিনিয়র ভাব দেখাতাম। ও আমাকে তুই তুই করে বললেও আমার অনুগত ছিল। যা বলতাম তাই মেনে নিত। সব সময় সব কাজে আমাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করত। উদাহরণ দিচ্ছি ধরুন, ও আর আমি রাস্তা দিয়ে হাটছি,হাটার সময় ও আমার পিছনে পিছনে হাটবে কখনও ভুলেও আগে যাবেনা। আমি যদি অকারণে রাস্তা চেন্জ করি ও ও তাই করবে। এজন্য ওরেক আমি প্রচণ্ড ধমকাতাম। ও অনুগত শিষ্যের ন্যায় সব মুখঝ বুজে সহ্য করত। কখনও প্রতিবাদ করত না। সম্ভবত আমি এ কারনে আরও ওস্তাদ ওস্তাদ ভাব নিতাম। বোঝাতাম একটু চালাক হ। একা চলা শেখ। মানুষ এরত বোকা হয় নাকি! আমি না থাকলে কি করবি?কিন্তু যাই বোঝাই না কেন,বোকা ছেলে কিছু বোঝেনা। তখন আমি ভাবতাম এছেলেটা বুঝি এমনই থেকে যাবে সবসময়। দুই বন্ধুর মধ্যে একজন যদি কিছুটা বোকা প্রকৃতির হয় সম্ভবত তাদের বন্ধুত্বের ভীত তত মজবুত হয়। মাঝে মাঝে আমি ওর সাথে প্রচণ্ড খারাপ ব্যবহার করে ফেলতাম। এজন্য পরে খুব খারাপ লাগত।


(২.)পল্টিবাজ জয়নাল

মানুষ মরণশীল একথাটা যেমন সত্য,মানুষ পরিবর্তশীল এ কথাটাও বোধ করি অসত্য নয়। ৫/৬মাস পরে একদিন আমার কাছে মনে হল জয়নাল আর আগের মত নাই। সব কাজেই এখন আর আমাকে আগের মত সমীহ করেনা। যে ছেলে আগে আমাকে ছাড়া কখনো রুমের বাইরে পর্যন্ত যেতনা,তার বাইরে এখন প্রায় ডজনখানেক বন্ধু। আমাকে ও আর আগের মত সময়ই দেয় না,শুধু তাই নয় রীতীমত ও আমার সাথে উল্টো আচরন করা শুরু করল। এতদিন ওকে আমি যে সব কাজে হুকুম করতাম ও সেগুলো টিকঠাক পালন করত। আর এখন হুকুম পালন দুরে থাক উল্টো আমাকেই হুকুম করে। আমি বলি,কিরে তো এত উন্নতি?
ও বলে, কামাল তুই আমারে এতদিন অনেক ঠকাইছিস,অনেক মাদবরি ফুটাইছস,এখন থেকে আমি ফুটামু। এখন থেকে আমি তোর বস। আমি য বলব তুই তাই করবি।

যাহোক এসব বিষয় কৌতুকের পর্যায়েই থেকে যেত। মন কষাকষি পর্যায়ে যেতনা কখনো। দুজন একসাথে রান্না করতাম,একসাথে কর্মস্থরে যেতাম,একসাথে ঘুমাতাম সব কিছু ছাপিয়ে জয়নালের সাথে আমার সময়গুলো ভালই কাটছিল।


(৩.)প্রেমিক জয়নাল

তার কিছুদিন পরে জয়নাল চলে গেল বাড়িতে। শেখপুর বাজারে কাঠের দোকান দিল। আমি একা একা থাকি। সে সময়ে জয়নাল একটি মোবাইল ফোন কিনেছিল। তখন সবার হাতেহাতে মোবাইলটা এখনকার মত ব্যপকভাবে প্রচলন শুরু হয়নি। সময়টা সম্ভবত ২০০০বা ২০০১সাল হবে সম্ভবত। যাহোক আমিও সে সময়ে অনেক সাধনা করে সেকেন্ড হ্যান্ড একখানা মোবাই ফোন কিনে ফেললাম। একদিন জয়নালকে একটা মিসড কল দিলাম। কিছুক্ষণ পরে ও ব্যাক করল। তখন কল রেট ১০টাকা মিনিট। ও আমার সাথে ৩০ সেকেন্ডের বেশি কথা বললনা। ও বলে,ধুর তোর সাথে কথা বইলা টাকা নষ্ট করার টাইম নাই। মনেমনে কষ্ট পেলাম। ঘনিষ্ট বন্ধু। তার জন্য ১০টাকা খরচ করতে পারিসনে। উস্টা মারি তোর বন্ধুত্বের কপালে। অথচ জয়নাল আমাদের এলাকায় মহিমা নামের একটি মেয়েকে পছন্দ করত। সেই মেয়ের নাম করে হলে খাড়ার উপর ৫০০টাকা খরচ করতে ওর বুক কাপতো না। কিন্তু অনেক চেষ্ট করেও মেয়েটার সামনে ওকে নিতে পারি নাই। মেয়েটাকে দুর থেকে দেখলেই নাকি ওর হার্টবিট বেড়ে যায়। কাছে গেলে নাকি ও হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবে।

এর কিছুদিন পরে আমার আরেক বন্ধু সেলিমের সাথে বিষয়টা নিয়ে শেয়ার করলাম। সেলিম আবার কুটু বুদ্ধিতে ওস্তাদ। সেলিম বলল,ওর নাম্বারটা আমার কাছে দে। তারপর দেখ কেমনে ওরে ধরা খাওয়াই।

সেলিম ওর নিজের নাম্বার দিয়া জয়নালকে মিসড কল দিল। জয়নাল ব্যাক করল। সেলিম রিসিভ করাল ওর এক মেয়েবন্ধুকে দিয়ে। মেয়েটি ফোন ধরে বলল,"সরি ভাইয়া আমি মহিমা বলছি। ভুল করে আপনার নাম্বারে চলে গেছে।"

ব্যস ল্যঠা চুকে গেল প্রতিদিন সকাল দুপুর বিকাল জয়নাল মিয়া সেলিমের নাম্বারে ফোন করতেই লাগলো করতেই লাগলো আর সেলিম মিয়া নকল মহিমাকে দিয়ে রিসিভ করাতেই লাগল। আর জয়নাল মেকি প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খেতেই লাগল খেতেই লাগল। আর ওর পকেট থেকে পার মিনিটে ১০টাকা করে খসতেই লাগল।

কিছুদিন পরে বিষয় টা যখন ও বুঝতে পারল তখন ও বলল,কামাল তুই আমার বন্ধু হয়ে এরকম একটা কাম করতে পারলি,আর সেলিম কাকা আমার কাকা হইয়া..ছি.ছি

পরে জয়নাল আমার উপর প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল।


(৪.)অবশেষে জয়নাল

এলাকার জাহাঙ্গীর ভাই নাহিদ ভাই আরও যারা সিনিয়র ভাই আছে তারা বিষয়টা সেলিমের কাছে থেকে অবগত হল। তখন তারা জয়নালকে দেখলেই বলে কিরে জয়নাল,সেলিম আর কামাল বোলে তোরে মানুষ বানাইয়া দিছে...


**পূনশ্চ
(প্রিয় জয়নাল অনেক দিন যাবত প্রবাসে আছিস। তোকে অনেক মিস করি । যেখানেই থাকিস ভাল থাকিস সব সময়।)



১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×