somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তথাকথিত মা দিবস

১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে ‘মা দিবস’। আজকের করণীয় কী? প্রথমেই ফেসবুক এ মা এর সাথে একটা প্রোফাইল পিকচার দেয়া। ছোটবেলায় মায়ের সাথে তোলা একটা ছবির ছবি তুলে বা স্ক্যান করে কভার পিকচার হিসেবে দেয়া। সময় থাকলে মায়ের জন্য কিছু একটা স্পেসাল গিফট কেনা। ন্যাকা ন্যাকা গলায় মাকে “ I LOVE U MAA” বলা। বেশ আবেগময় কিছু স্ট্যাটাস ফেসবুক এ দেয়া। এই তো!! এটাই মা দিবস এর কর্মসূচি। মনে হতে পারে যে আমি ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় লেখাটি শুরু করেছি। কিছুটা সত্যি হলেও পুরোপুরি নয়। একদিনের জন্য কাউকে স্পেশাল অনুভব করানোতে ঠিক দোষের কিছু নাই। অসুবিধাটা ওইখানে যখন আমরা একদিনের জন্যই শুধু স্পেশাল অনুভব করাই। বাকিদিন ফিরেও তাকাই না। পৃথিবীর আর সব সম্পর্কের চেয়ে মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক সবচেয়ে অকৃত্রিম। ভনিতা নেই, অকারণ জোর করে ভালোবাসা প্রকাশের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এই একটা সম্পর্কের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা নেই যদি না সন্তান সেরকম কিছু করে। কারণ মা কখনো সন্তানকে পারতপক্ষে ত্যাগ করে না। করলেও বুকের বিশাল একটা অংশজুড়ে সন্তানের জায়গা থাকে। কিন্তু সন্তানদের এই অভ্যাস আছে মাকে ত্যাগ করে খুশি থাকা। তাই-ই হয়তো এত ঘটা করে মা দিবস পালন করা।

আমার ধারণামতে, মা দিবস এর এই উদ্যোগ ঠিক উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপট থেকে নয়। এই দিবসের কার্যকারিতা অনেকটা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথেই মেলে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেক আমেরিকান টিভি সিরিজ দেখেছি এবং এখনো দেখি। ওখানে একটা জিনিস খেয়াল করেছি যে ওরা একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর মা-বাবার সাথে থাকাকে খুবই ‘খ্যাত’ মনে করে। তারা এও ধারণা করে নেয় যে যে ব্যাক্তি এখনো বাবা-মা এর সাথে থাকে সে খুব একটা ‘ম্যাচিউরড’ নয়। বুঝাই যাচ্ছে যে তারা পাশ্চাত্যের মানুষেরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বাবা-মা এর সাথে থাকে না। তো এদের জন্য বাবা-মাকে আলাদা করে মনে করাটা প্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। তাই এরা বিশেষ বিশেষ দিন ঠিক করে বাবা-মাকে কার্ড পাঠায়। আমাদের উপমহাদেশে আমরা এখনো বাবা-মা থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যেতে পারিনি। কিন্তু যেহেতু আমরা অনুকরণপ্রিয়, তাই বিয়ের পর আজকাল আমরা মা-বাবাকে একা ফেলে স্বার্থপরের মত আলাদা থাকার কথা চিন্তা করতে পারি। মেয়েরাতো এটাকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়। “আমি আমার বাবা-মা ছেড়ে আসবো, আর তুমি মহাশয় বাবামায়ের সাথেই খোকা হয়ে থাকবা? কভি নেহি!!!” অবশেষে যারা এই আলাদা থাকার দলে অন্তর্ভুক্ত হয় তাদেরই দরকার মা দিবস এর মত বিশেষ বিশেষ দিনগুলোর। এই দিনের উপর ভরসা করে গিফট শপ দোকানের মালিকেরা বহু পয়সা কামিয়ে নেয়। সত্যি কথা বলতে এরা অপরাধবোধ কিনে নিতে চায় সন্তানদের কাছ থেকে।

আরেক দল আছে, যারা অবস্থাপ্রেক্ষিতে বাবা-মা থেকে আলাদা থাকে। সবচেয়ে বড় এ দলে আছে বিবাহিত মেয়েরা। এদের কোন আলাদা দিন লাগে না। সময় পেলেই এরা মাকে মনে করে। উদাস হয়। ফোন করে মায়ের গলাটা শুনে। যারা কাজের খাতিরে মা এর থেকে আলাদা থাকে, তারা আর কোন সময় না হলেও খাওয়ার সময়টাতে মায়ের কথা ঠিকই ভাবে।

প্রত্যেকটা মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো মা। বিপদে পড়লে, অসহায় লাগলে সবার প্রথমে যে মানুষটার সান্নিধ্য পেতে মন চায়, তিনি আমাদের ‘মা’। আমরা সন্তানরা স্বার্থপর। নিজেদের প্রয়োজন ছাড়া মায়ের কথা ভাবি না। তারপরো মায়ের কাছে আমাদের জন্য দরজা সারা জীবন খোলাই থাকে। মাকে ভুলানোর জন্য আমাদের বিশেষ দিনের দরকার নেই।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×