somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রাচের কর্নেল; আমাদের গর্ব আমাদের কষ্ট

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিন আগে মন্ত্রমুগ্ধের মত একটা বই পড়লাম- শাহাদুজ্জামান-এর লেখা 'ক্রাচের কর্নেল'। কর্নেল তাহেরকে নিয়ে লেখা প্রায় সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার বিশাল বই। ল্যাপটপ বা পিসির যুগে ছাপা অক্ষরে লেখা বই পড়ার অভ্যাস এমনিতে কমে গেছে।এই বইটা পড়লাম কয়েকজনের কাছে খুব সুনাম শুনে। অনেক ভালো লাগলো এই বইটা পড়ে; সাথে সাথে খারাপও লাগলো কর্নেল তাহেরের জন্য; একজন বীরের জন্য।কয়েকদিনের আগের ট্রাইব্যুনালের রায়ে গোলাম আজমের ফাসি হয় নাই তার বয়সের কথা বিবেচনা করে; কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধে বা পা হারানো তাহেরকে এই দেশেই ফাসিকাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে এক প্রহসনের ট্রাইব্যুনালে। সেই বইয়ের কিছু চুম্বক অংশঃ

১।কর্নেল আবু তাহের প্রথম বাঙালি হিসেবে নর্থ ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্রেগের স্পেশাল ফোর্সেস অফিসার্স ট্রেনিং ইন্সটিউটে ট্রেনিং-এর জন্য সিলেক্টেড হয়েছিলেন। ট্রেনিং শেষে তাকে যেই সার্টিফিকেট দেয়া হয় তাতে উল্লেখ ছিল- 'Abu Taher is fit to serve with any army under any condition in the world'.

২। তাহেরের পাশের কোয়ার্টারে থাকে ক্যাপ্টেন পারভেজ মোশাররফ। ফুর্তিবাজ মানুষ, নতুন বিয়ে করেছেন। স্ত্রী ইংরেজী সাহিত্যের তুখোর ছাত্রী। ক্যাপ্টেন পারভেজের স্ত্রী মাঝে মাঝে সঙ্গ দেন লুৎফাকে। এদিক ওদিক বেড়াতে নিয়ে যান; শহরে একসাথে কেনাকাটা করতে যান। তাহের পারভেজের বস কিন্তু তাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতোই।
বহু বছর পর রাজনীতিতে অনুৎসাহী; ফুর্তিবাজ এই ক্যাপ্টেন পারভেজ মোশাররফই হয়ে উঠেন পাকিস্তানের প্রধান কুশীলব। তিনি হন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।

৩। ১১ নাম্বার সেক্টরে এক এক করে যোগ দেন আনোয়ার, সাঈদ, বেলাল, বাহার। আরও কিছুদিন পর সৌদি আরব থেকে পালিয়ে বড় ভাই আবু ইউসুফও লন্ডন হয়ে চলে আসেন ভারতে। যোদ্ধা হিসেবে যোগ দেন ১১ নাম্বার সেক্টরে। একমাত্র বড় ভাই আরিফ ছাড়া সবকটি ভাই তখন যুদ্ধক্ষেত্রে, তাহেরের অধীনস্থ যোদ্ধা। লোকে বলে ব্রাদার্স প্লাটুন।কিছুদিন পর ভাইদের মত তাহেরের কিশোরী বোন ডলিও যোগ দেয় তাহেরের সেক্টরে। কামালপুর অপারেশনে যখন তাহেরের নিকট একটা সেল ড্রপ হয় তখন তার সবচাইতে কাছেই ছিল বেলাল আর বাহার। স্ট্রেচারে করে যখন তাহেরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখনো জ্ঞান হারাননি তাহের, রক্তে মাটি ভিজে যাচ্ছিল। ঐ অবস্থায় মুখটা সামান্য হেসে হারুন হাবীবকে বলেনঃ জার্নালিস্ট আমি বলিনি ওরা কখনো আমার মাথায় আঘাত করতে পারবে না। এই দেখো পায়ে লাগিয়েছে। মাই হেড ইজ স্টিল হাই; গো ফাইট দা এনিমি; ওকুপাই কামালপুর বিওপি।

৪। প্রহসনের এক বিচারে তাহেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। বিষ্ময়ের ষোলকলা পূর্ণ হয় যখন জানা যায় যে অপরাধের জন্য তাহেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সে অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেবার মতো কোনো আইনই নেই। রায় ঘোষনার ১০ দিন পর আইন মন্ত্রনালয় সামরিক আইনের বিশতম সংশোধনী জারি করেন। এবং তাতে ১ম বারের মত বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরে রাজনৈতিক মতবাদের প্রচার নিষিদ্ধ ও বেআইনী এবং সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ।

৫। ঢাকা জেলের কোন জল্লাদ রাজি হননি তাহেরের ফাসিতে যোগ দিতে। জল্লাদ আনা হয় অন্য জেল থেকে। তাহের যখন ফাসি মঞ্চের দিকে রওয়ানা দিবেন তখন কারা কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি তাহেরের কাছে জানতে চানঃ আপনার শেষ ইচ্ছে কি? তাহের একটু থামেন। মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠে তার। বলেনঃ ইচ্ছে তো একটাই। আমার মৃত্যুর বিনিময়ে এ দেশের সাধারন মানুষের জীবনে শান্তি আসুক। মঞ্চের কাছে পৌছে তাহের জিজ্ঞেস করেনঃ আর একটু সময় কি আছে?
‘আছে”
‘আমি একটা কবিতা পড়তে চাই’। বলে তাহের পড়েনঃ
‘জন্মেছি সারা দেশটাকে কাপিয়ে তুলতে
কাপিয়েই গেলাম।
জন্মেছি তাদের বুকে পদচিহ্ন আকবো বলে
একেই গেলাম।
জন্মেছি মৃত্যুকে পরাজিত করবো বলে
করেই গেলাম।
জন্ম আর মৃত্যুর দুইটা বিশাল পাথর
রেখে গেলাম।
সেই পাথরের নিচে শোক আর শাসকের
কবর দিলাম।
পৃথিবী অবশেষে এবারের মতো বিদায় নিলাম।

এরপর তাহের বলেন, এলরাইট গো এহেড,ডু ইউর ডিউটি, এই এম রেডি।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×