somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামাজের নেশা ।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নামাজের নেশা ।
ছুটি শেষে এবার রাত্রিকালীন বাস-এ ঢাকা ফিরছিলাম । সকালে অফিস করতে হবে এই নিয়ে টেনসনে ছিলাম ঠিক মত পৌঁছাব কিনা । কয়েকজন অসুস্থ যাত্রী ছিলেন –মাঝে মাঝেই তারা যন্ত্রনাকাতর চীৎকার কর বাসযাত্রীদের কাতর করে তুলছিল । আরও ছিল বেশ কয়েকটি পরিবার শিশু ,তাদের সঠিক পরিচর্যার ও খাদ্যজনিত অসুবিধার কারণে চাইছিল বাসটা গন্তব্যে তাড়াতাড়ি যেন যেতে পারে ।
এর মধ্যে এক মাঝবয়সী মুরব্বী-আরবদেশীয় ইসলামী ড্রেস পরা, কিছুক্ষণ পর পরই ড্রাইভারের কাছে গিয়ে অনুরোধ জানাচ্ছিল , যেন ফজরের আজানের সাথে সাথে কাছাকাছিই কোন মসজিদের কাছে গাড়ী থামায় । উনি ফজরের নামাজ মসজিদে জামাতের সাথে পড়বেন ।
ভোরের আজান যখন হচ্ছিল,-আজকাল পশ্চিমা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র অনেক সুবিধেও দিয়েছে - কেবল দ্রোন নয় , মোবাইল থেকেই আযান এর আওয়াজ ভেসে উঠলো । বাসের বেশীর ভাগ যাত্রী আধো ঘুম আধো জাগরণে । বাস থেমে গেল একটি মসজিদের কাছে । তিনি নামাজ পড়তে গেলেন । বাসের
সমস্ত মানুষকে বসিয়ে –যাদের মধ্যে আমার মত অফিস জয়েন করা মানুষ সহ অনেক অসুস্থ , ভ্রমনে ক্লান্ত মানুষ ছিলেন । কিন্তু সেই নামাজ পড়া মানুষটির কাছে নিজের ধর্ম পালনটিই জরুরী ছিল –অন্য মানুষের অসুবিধা সমূহকে কোন আমলে না এনে তিনি নিজের আখের গোছানর কাজে
লাগালেন ।
বাসটি প্রায় কুড়ি মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল । লোকজন বিরক্ত প্রকাশ করলেল কেউ কিছু বলছিল না-কিন্তু আমি ভীষন বিরক্ত হচ্ছিলাম । নামাজী ভদ্রলোক ফিরে এলে অনেক সাহস নিয়ে , কিছুটা বিরক্তির সাথে বললাম –‘ হুযুর ,এই যে বাস থামিয়ে নামাজে গেলেন , এতগুলো মানুষের বাড়তি বিড়ম্বনার সৃষ্টি করলেন এইটা কি ঠিক হল ?’ উনি প্রথমে বুঝতেই পারছিলেন না যে ,বাস থামিয়ে নামাজ পড়ার জন্য তারা কোন অন্যায় কাজ হয়েছে ।বরং ভাবখানা তার এই এবাদতে সহযোগীতা করতে পেরে বাকী বেনামাজীদের বরং কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ । ফলে আমার প্রতিবাদ উনি এতই উত্তেজিত যে প্রায় তোতলাতে থাকলেন এবং আমাকে প্রায় নরকের অগ্নিকুন্ডে ফেলেই দিলেন যেন । কোনমতে তাকে থামান হলো ।
এইভাবে প্রকাশ্যে , স্থান কাল বিবেচনা না করে যে ধর্মাচরণ-এর মাশালাটা কি? নামাজের সময় হলেই সব কিছু থামিয়ে নামাজ পড়তে হবে বা পড়তে দিতে হবে? এইটা তো মিশ্রিত সমাজ । একই জায়গায় নানা কিসিমের, বিশ্বাসের লোকজন তাকে । সে সব জায়গার পবিত্রতা, সে সব ভিন্ন ধর্মাবলীদের অথবা সাধারণ মানুষের কোন অসুবিধা করছে কিনা কিছুই মানা হবে না ?
নামাজ বা সালাত হচ্ছে ঈশ্বর স্মরণ-সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণ । সে সব করার জন্য নিজের প্রস্তুতি ছাড়াও প্রয়োজন একটি শান্ত নির্জণ পবিত্র জায়গা । এভাবে নেহাৎ যান্ত্রিক ভাবে তা পালনে মধ্যে কতটুকু ঈশ্বর স্মরণ হয় ,আর কতটুকু নিয়ম রক্ষা – বা আদৌ হয় কিনা সন্দেহ ।
আমি সেদিন বাসে প্রতিবাদ করছিলাম মানবিক ও সিভিক যুক্তি দেখিয়ে । ঘরে ফিরে ধর্মীয় পুস্তক ঘাটতে ঘাটতে কিছু ধর্মীয় যুক্তিও পেলাম-
মেশকাত এর একটি হাদিস আছে। হযরত ইবনে সালাম বলেন- ‘এমন সময়ে নামাজে মনোনিবেশ করবে যখন লোকেরা নিদ্রা মগ্ন থাকে।’ অর্থাৎ কোন মানুষকে কষ্ট না দিয়ে নির্জনে নিবিষ্ট চিত্ত এবাদত করবে।’
কিন্তু আমাদের সবকিছুতে উল্টা । আমরা ধর্ম পালন করি সাড়ম্বরে –সবাইকে জানিয়ে, দেখিয়ে । একধরনের দেখানেপনা আছে আমাদের ধর্মপালনের মধ্যে এবং এর সবটাই যে ধর্মীয় রীতি মেনেই করা হয় সেটাও না । নামাজ বা এবাদত, প্রার্থনা এসব স্রষ্ঠার সাথে মানুষের নিভৃতালাপ , তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন- এর জন্য ধ্যানমগ্নতা প্রয়োজন । কিন্তু আমরা যে ভাবে ঘুষ খেতে খেতে, গাড়ী চালাতে চালাতে,বাজার করতে করতে নামাজের আজান শুনলেই দৌড়ে নামাজটা সেরে আসি এ কাছে মনে হয় - শুধু এক কর্তব্য পালন,সত্যিকার ধর্মপালন নয় ।
এই দেখানেপনার চুড়ান্ত রূপ প্রত্যক্ষ করি রমজানের মাসে । বলা হয় এই মাস সংযমের । কিন্তু বাস্তবে ঠিক যেন পাল্লা দিয়েই পালন করা হয় অসংযমের । এই মাসে মুসলমানরা কে কত রকম আইটেম কত ভাবে কি পরিমান খেতে পারে তারই এক ধুন্ধুমার আয়োজন । এই মাসে গোটা ঢাকা শহর যেন হয়ে যায় এক হোটেল । সারাদিন ধরে সবাই আয়োজন করতে থাকে খাবারের । তারপর সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় খাওয়ার মোচ্ছব । সেটা চলতে থাকে সেহেরি পর্যন্ত । আজকাল তো আবার শুরু হয়েছে বড় হোটেলে এফতার আর ভোর রাতে সবাই ছুটছে সোনার গাঁয়ে ,ওয়েস্টিনে শেহরী পার্টি । কি দুর্দান্ত সংযম মাস ।
রমজানে সব জিনিষের দাম বাড়ে । সবাই দোষ দেয় ব্যবসায়ীদের ।আমি বলি সত্যি যদি আমরা সংযম করি,সত্যি যদি কৃচ্ছতাই হয় সায়েম’র মূলমন্ত্র –তবে জিনিষের দাম বাড়বে তো নাইই, বরং কমবে ।
সংযমের মাসে সব চ্যানেলে শুরু হয় রান্নার আইটেম আর কত শোভনীয় লোভনীয় খাবার খাওয়া যায় তার প্রতিযোগীতা । সংযম কোথা ?
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×