somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝিনাইদহের দর্শনীয় স্থানসমুহ

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নলডাঙ্গা মন্দিরঃ
রাজা ইন্দ্র নারায়ন নলডাঙ্গায় অত্যন্ত সুন্দর এ মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য বাইরের দিকে ছিল ৩৯ ফুট ৩ ইঞ্চি মাপের। গর্ভ- মন্দিরের উপরে ১টি এবং চারকোণে ৪টি চূড়া ছিল। প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের নামকরণ করা হয়েছিল 'ইন্দ্রেশ্বরী'। পরে এর নাম রাখা হয় 'সিদ্ধেশ্বরী'। ১৮৬৫ সালের বেশ কিছুকাল আগে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।

যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২০-২২ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে কালীগঞ্জ হয়ে নলডাঙ্গা যেতে হবে। এরপর নলডাঙ্গা হতে ভ্যানযোগে অথবা পায়ে হেটে নলডাঙ্গা মন্দিরে পৌছানো যাবে। নলডাঙ্গা হতে মন্দিরের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।


মিয়ার দালান:
বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার সদর থানায় অবস্থিত একটি পুরানো জমিদার বাড়ী। বড়ীটি স্থানীয় নবগঙ্গা নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত। ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। বর্তনানে বাড়ীটি ভগ্নপ্রায়। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী ইমারতের প্রধান ফটকে নির্মান সময়ের কিছু কথা কাব্যিক ভাবে খোদাই করা আছে। তাতে লেখা, ‘শ্রী শ্রী রাম, মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আশরাফুন্নেসা নাম, কি কহিব হুরির বাখান। ইন্দ্রের অমরাপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার, ৭৫,০০০ টাকায় করিলাম নির্মান। এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জলমাঝে কমল সমান। কলিকাতার রাজ চন্দ্র রাজ, ১২২৯ সালে শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালে সমাপ্ত দালান।‘
বঙ্গাব্দ ১২৩৬ সালে নির্মাণ শেষ হওয়া এই ইমারতটি ঠিকঠাক মত রক্ষনাবেক্ষণ করা গেলে সেটা ঝিনাইদহ শহরের একটি উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। যত দূর জানা যায় যে জমিদার এই দালানটি নির্মাণ করেন তিনি ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় ভবনটি বিক্রি করে দেন সেলিম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির কাছে। তাই ভবনটিকে স্থানীয় ভাবে কেউ কেউ সেলিম চৌধুরীর বাড়ীও বলে থাকে।
বলা হয়ে থাকে বাড়ীটি থেকে নবগ্ঙ্গা নদীর নিচ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ ছিল। সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখ এখনো চিহ্নত করা যায়। নদীতে যে ভাবে বাধ দিয়ে ইমারতটি নির্মান করা হয়েছিল সেভাবে তৈরী আর কোন পুরানো ইমারত ঝিনাইদহ শহরে দেখা যায় না।
বাড়ীটির স্থানীয় ভাবে ব্যাপক পরিচিতির আর একটি বড় কারণ বাড়ীতে থাকা এনটি বিশেষ খেজুন গাছ। যে গাছটিতে একাধিক মাথা ছিল এবং প্রতিটি মাথা থেকেই রস আহোরণ করা যেতো।
যেভাবে যেতে হবে:ঝিনাইদহ শহর হতে স্থানটির দুরত্ব ০৩ কিঃমিঃ। ঝিনাইদহ শহরের যে কোন স্থান হতে অটোরিকসা / রিকসা যোগে আরাপপুর বাসষ্ট্যান্ড হয়ে মুরারীদহ মিয়ার দালানে যাওয়া যাবে।
আবাসন ব্যবস্থা ঃ আবাসন সুবিধা নাই। তবে ঝিনাইদহ শহরে আবাসিক হোটেল আছে।



কে,পি বসুর বাড়ীঃ
জগদ্বিখ্যাত গণিতবিদ অধ্যাপক কালীপদ বসু ১৯০৭ সালে নিজের জম্মস্থান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে নবগঙ্গা নদীর তীরে ১ একর জমির উপর ১৭ কক্ষ বিশিষ্ট এক প্রাসাদোপম দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন। বাড়ীটি এখনও বসবাসযোগ্য এবং সুদৃশ্যই বলা যায়।
যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২১-২২ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে হাটগোপালপুর যেতে হবে। এরপর হাটগোপালপুর হতে ( উত্তরদিকে )ভ্যানযোগে কে,পি বসুর বাড়ী যেতে হবে। হাটগোপালপুর হতে কে,পি বসুর বাড়ীর দুরত্ব ৫ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।


গোড়ার মসজিদ (গোরাই)
মসজিদটি বারোবাজার ইউনিয়নের বেলাট দৌলতপুর মৌজায় অবস্থিত। ইসলামী ঐতিহ্যের এক অনুপম নিদর্শন গোড়ার (গোরাই) মসজিদ। মসজিদের পূর্বদিকে একটি পুকুর আছে। মসজিদ থেকে পুকুরে যাওয়ার জন্য বাঁধানো ঘাট ছিল। ভাঙ্গা ইটের উপস্থিতি ও স্থানে স্থানে প্রোথিত ইটের চিহ্ন তা প্রমাণ করে। বারান্দাসহ এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি বর্গাকৃতি। এ মসজিদটি অবস্থিত মসজিদগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা ভাল অবস্থায় ছিল। ১৯৮৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক খননের পর দেখা গেছে, গম্বুজের কেন্দ্রস্থল ২ ফুটের মত ভাঙ্গা। বৃত্তাকার ও উপুড় করা পেয়ালার মতো দেখতে গম্বুজটি অত্যন্ত মনোরম। মসজিদের পাশে একটি কবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি গোরাই নামের এক দরবেশের মাজার বলে অনেকের ধারণা। তাঁর নামানুসারে এ মসজিদকে গোড়ার (গোরাই) মসজিদ বলা হয়। বর্তমানে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়া হয়। মসজিদে ৫ ফুট প্রশস্ত দেয়াল আছে। পুর্বের দিকে ৩টি প্রবেশদ্বার , দু'পাশের দু'টি অপেক্ষাকৃত ছোট। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে ২ টি বড় ও ২ টি ছোট মোট ৪টি প্রবেশ পথ ছিল। এখন এগুলো জানালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পশ্চিমের দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে। পশ্চিম দেয়ালে ৭/৮ ফুট লম্বা ২টি এবং উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে ২টি মোট ৪ টি কালো পাথরের স্তম্ভ আছে। মসজিদের দেয়ালে পোড়ামাটির পত্র-পুস্পে শোভিত শিকল, ঘন্টা, ইত্যাদি আরোও অনেক নকশা আছে।
এ মসজিদের বাইরের দেয়াল সম্পূর্ণটাই পোড়ামাটির কারুকার্য দ্বারা চমৎকার ভাবে অলংকৃত। মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের এক নয়নাভিরাম ও অনন্য উদাহরণ। এটি সম্ভবত হোসেন শাহ বা তার পুত্র নসরত শাহ কর্তৃক নির্মিত। এ মসজিদের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় গৌড়ের সাত্তম ও খনিয়া দীঘি মসজিদ, দিনাজপুরের সুরা মসজিদ, দেওয়ানগড় মসজিদ, টাঙ্গাইলের আতিয়া মসজিদ ও সিংহদার আওলিয়া মসজিদের।

যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগে গোড়ার মসজিদে যেতে হবে। বারবাজার হতে গোড়ার মসজিদের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।


গলাকাটা মসজিদ:
সাদিকপুর মসজিদ থেকে ১৫০ গজ পূর্বে গলাকাটা মসজিদটি বারোবাজার - তাহেরপুর রাস্তার পার্শ্বে অবস্থিত। চারটি ৬ কোণাকৃতি বড় মোটা পিলারের উপর বর্গাকৃতি মূল মসজিদটি দন্ডায়মান এবং প্রত্যেক বাহু ২৫ ফুট লম্বা ও দেয়াল ৫ ফুট চওড়া। এতে ৩টি প্রবেশ দ্বার আছে। মসজিদটির পূর্ব পাশে পাকা প্রাঙ্গন ছিল। ভিতরে পশ্চিমের দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে এতে পোড়ামাটির কারুকাজ, ফুল, লতাপাতা, ঘন্টা, চেইন ইত্যাদির নকশা আছে। কালো পাথরের ৮ ফুট উচ্চতার দু'টি স্তম্ভ ছাদের পিলার হিসেবে আছে। স্তম্ভের সামনে পিছনে ৬টি মাঝারি আকৃতির গম্বুজ আছে। শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে হুসাইনের আমলের ৮০০ হিজরীর আরবি-ফার্সিতে লেখা কয়েকটা পাথর খননের সময় এগুলো এখানে পাওয়া গেছে। মসজিদের সাথে সাদৃশ্য আছে গৌরের ধবীচক ও ঝনঝনিয়া মসজিদ, ঢাকা রামপালে বাবা আদমের মসজিদ, শৈলকুপার শাহী মসজিদ ও বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের। ইসলামী স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে গলাকাটা মসজিদ বাংলাদেশের পুরাকীর্তিকে সমৃদ্ধ করেছে।গলাকাটা মসজিদের পাশে গলাকাটা দীঘি অবস্থিত। খান জাহান আলী (রাঃ) এর সমসাময়িক এ দীঘি বলে প্রবল জনশ্রুতি আছে। এ দীঘিটি চর্তুদিকের পাড়সহ বারো বিঘা জমির উপর অবস্থিত। এ দীঘির দক্ষিণ পাড়েই গলাকাটা মসজিদ। দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি ছোট অনুচ্চ ঢিবি আছে।


যেভাবে যেতে হবে: ঝিনাইদহ হতে স্থানটির দুরত্ব ২৮-৩০ কিঃ মিঃ। ঝিনাইদহ হতে বাসযোগে সড়ক পথে বারবাজার যেতে হবে। এরপর বারবাজার হতে ( পশ্চিম দিকে) ভ্যানযোগেগলাকাটা মসজিদে যেতে হবে। বারবাজার হতে গলাকাটা মসজিদের দুরত্ব ১ কিঃ মিঃ ।
আবাসন ব্যবস্থা: আবাসন সুবিধা না থাকায় দিনের আলোয় নিরাপদ স্থানে ফেরত আসতে হবে।

নিচের লিংকে আরো দর্শনীয় স্থান সম্পার্কে জানুন
http://digitalvillagebd.blogspot.com/2010/10/blog-post_28.html
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×