লালন শাহের গানে গানে সারাটি রাত
২২ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে আমি, রুদ্র আরিফ, গোলাম রাব্বানী, আহসান পাভেল ও জাহিদুল হক পাভেল... রওনা দিলাম মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের উদ্দেশে। গুলিস্তান থেকে যাত্রা করা আমাদের বাস কখনো যানজটে আটকে থাকে, কখনো চলে সাবলীল গতিতে। এভাবে আমরা যখন সিরাজদিখান বাজারে এসে থামি, তখন চারদিকের পৃথিবীতে সন্ধ্যা। এখানে পরিচিত দু-একজনের সঙ্গে দেখা। স্থানীয় হোটেলে হালকা খাবার খেয়ে হাজির হলাম ট্রলারঘাটে।
আমাদের ট্রলারে চড়েই যেতে হবে সিরাজদিখানে, ইছামতি নদীর পাড়ে দোসরপাড়ার টেকেরহাটে। প্রতি বছরই পদ্মহেম ধামের উদ্যোগে এখানে বেশ বড় আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় দুদিনব্যাপী লালন শাহ বটতলা মধুপূর্ণিমা সাধুসঙ্গ। এবার এ উৎসবের পঞ্চম আয়োজন। এখানে দরবেশ নহীর শাহ, টুনটুন বাউল, রব বাউল, আনুশেহ, রিংকু, বজলু শাহ, খিজমত ফকির, স¤্রাট বাউল, দীলিপ দাস, সুমন্ত বাউল, ভজন দাশ বৈরাগীসহ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের তরুণ-প্রবীণ অনেক লালন শিল্পী সারারাত গান গান।
আমাদের ট্রলার চলছিল লালন উৎসবের দিকে। আকাশে চাঁদ-তারা কিছুই দেখা যাচ্ছিল না, সারা আকাশ মেঘে ঢাকা। নিম্নচাপের ফলে আশপাশে রহস্যময় অন্ধকারে ছেয়েছিল, দূরে কোথাও হয়তো বৃষ্টি হচ্ছিল। আমাদের আশঙ্কা আজ সারারাত আর চাঁদের দেখা মিলবে না। উৎসবও হয়ত ভ-ুল হয়ে যেতে পারে। যাত্রীদের প্রত্যেকের মনে মনে কামনা, তাদের শঙ্কা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রলার থেকে আমাদের চোখে পড়ে কিছুটা সামনেই মিটি মিটি আলো। বুঝতে পারি ওটাই টেকেরহাট। একসময় যখন আমাদের ট্রলার স্পর্শ করে ইছামতির পাড়ের নরম মাটি, তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা।
২.
দোসরাপাড়া টেকেরহাটে নেমেই আমাদের মন একদম ভালো হয়ে যায়। পুরো চরাঞ্চলটাতেই যেন জোয়ারের পানির মতো আনন্দ আর গভীর উল্লাস পাশাপাশি নৃত্য করছিল। জ্বলজ্বলে আলোর মতো মানুষের কলকাকলিতে মুখর পুরো হাট। লালনের গানের প্রেমে মুন্সিগঞ্জ, সিরাজদিখান, মাতুব্বরবাড়ি, দোসরপাড়া, টেকেরহাট, ঢাকা এবং দেশের নানা জায়গার হাজারো হাজারো লালনভক্ত ও অনুসারীদের পদচারণায় মুখর ইছামতি পাড়ের লালন শাহ বটতলা মধুপূর্ণিমা সাধুসঙ্গ ।
টেকেরহাটে ছোট ছোট কুপিতে আলো জ্বালিয়ে জিলিপি, সন্দেশ, চটপটিসহ বিভিন্ন ঝাল-মিষ্টি খাবারের দোকান নিয়ে বসেন দোকানিরা। বসে চুরি-ফিতা-লিপস্টিক, ছোটদের বিভিন্ন খেলনা বা শাড়ি, লুঙ্গির দোকান। বটগাছের তলায় চলছে লালনের জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা। ঝাকড়া চুলের বাউলরা কেউ একতারা হাতে, কেউ এমনিতেই কথা বলছিলেন নিজেদের মধ্যে। ঘণ্টখানেকের মধ্যেই শুরু হবে লালনের গান।
আমরা দেখি, মেঘের ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ তীব্র আলো নিয়ে জেদি চাঁদ উঁকি মারছে। দেখা যাচ্ছে দু-একটি তারাও। কিন্তু পরক্ষণেই আবার যেন মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে চাঁদকে। চরের আশপাশ আমরা ঘুরে দেখি, আমরা যাই লালনের সঙ্গীত শেখার স্কুল পদ্মহেম ধামে। চেনা-জানা আরও অনেকের সাথেই দেখা হয়ে যায়। ফাঁকে খেয়ে নিই সদ্যভাজা গরম জিলিপি, চটপটি বা চানাচুর। আকাশে একসময় চাঁদ মেঘকে পরাজিত করে জ্যোৎস্ন্যার প্লাবন নিয়ে হাজির হয়। আমরা ঘণ্টাখানেকের জন্য ইছামতির বুকে ঘুরতে একটি ডিঙ্গি ভাড়া করি।
ইছামতি নদীতে কোনো স্রোত নেই। খুবই শান্ত এ নদীতে চাঁদের আলোয় ঘুরে বেড়ানোটা ছিল আমাদের জন্য এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। নৌকায় ঘুরতে ঘুরতেই আমরা শুনতে পাই লালনের গান শুরু হয়ে গেছে।
৩.
নৌকা ভ্রমণ শেষ করে, রাত ১০টা-১১টার দিকেও দেখছিলাম লোকের পর লোক আসছিলেন। বটতলার চারদিক ঘিরে ছিল শ্রোতাদের ভিড়। আমরা বটতলা থেকে কিছুটা সরে গিয়ে চরের মাঠে খোলা আকাশের নিচে শীতল পাটিতে শুয়ে-বসে শুনছিলাম গান-
‘আমি অপার হয়ে বসে আছি
ওহে দয়াময়
পাড়ে লয়ে যাও আমায়
আমি একা রইলাম ঘাটে
ভানু সে বসিলো পাটে
তোমা বিনে
ঘোর সংকটে না দেখি উপায়
পাড়ে লয়ে যাও আমায়।’
কিংবা,
‘বাড়ির পাশে আরশিনগর
সেথা এক পড়শি বসত করে’
কিংবা,
‘মানুষ ছাড়া খ্যাপারে তুই কুল হারাবি
মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’
আমাদের মতো আরও অনেকেই এভাবে শীতল পাটিতে শুয়ে-বসে শুনছিলেন গান। মধ্যরাত একসময় আরও গভীরে যায়। দর্শক-শ্রোতার ভিড় কিছুটা কমতে থাকে। আমরা গিয়ে বটতলায় বসি। এ সময় বাউলরা লালনের প্রচলিত গান ছাড়াও অনেক অপ্রচলিত গানও পরিবেশন করেন। রাত বাড়ার সাথে সাথে যেন উপস্থিত ভক্তদের ভাবও বাড়তে থাকে। একজন প্রবীণ বাউল গান গান তো পরমুহূর্তেই আবার আরেকজন তরুণ গান গাইতে শুরু করেন। গানের ফাঁকে ফাঁকে উপস্থাপক গানের মর্মবাণী সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন। শ্রোতারা যার গাওয়া গান বেশি পছন্দ করেন তাকে বকশিস দেন, তাকে বার বার গাইতে অনুরোধ করেন। প্রত্যেক গায়কই লালনের প্রতি গভীর ভক্তি নিয়ে গান পরিবেশন করেন।
গানে গানে যখন সারা টেকেরহাট লালনে মত্ত, তখন আমরা নিজেদের মধ্যে বিস্ময় প্রকাশ করি লালনের গানের গভীরতা নিয়ে। আমরা অনুভব করার চেষ্টা করি লাখ লাখ ভক্তকে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণীভেদে লালন কীভাবে আজও মাতিয়ে রেখেছেন। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো লালনের বাণীর মধ্যে খুঁজে বেড়াই নিজেদের!
এই মন্ত্রমুগ্ধতার মধ্যেও একটি দুঃসংবাদ আমাদের সবাইকে হয়তো ভেতরে ভেতরে বিষাদগ্রস্ত করে রেখেছিল। আমরা শুনতে পেয়েছিলাম গান শুনতে টেকেরহাটে আসার পথে ট্রলার ডুবিতে ৩-৪ জন মারা গেছেন!
৪.
গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। এক সময় আবিষ্কার করি আমরা শুয়ে আছি শীতলপাটিতে, খোলা আকাশের নিচে। হালকা রোদ এসে লাগে চোখে। যে টেকেরহাটকে, যে ইছামতিকে গভীর রাতে খুব রহস্যময় মনে হচ্ছিল, ভোরের রোদে তা যেন নতুন রূপে দেখা দেয়। আমরা ভোরে ‘গোষ্ঠগান’ শুনে পুনরায় উঠে পড়ি ট্রলারে, রওনা দিই ঢাকার উদ্দেশে। তখন কেউ যেন খুব চুপে আমার কানে কানে গাইতে থাকে একটি গান : ভবে আসার আগে যখন,/বলেছিলে কর্মসাধন/লালন বলে সে কথা মন,/ভুলেছো এই ভবের লোভে।
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা
আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো
চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?
চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন