মাটির ব্যাংকটা ভাঙতেই কতগুলো পয়সা ছিটকে পড়ে । ঝন ঝন শব্দ তুলে সেগুলো একটা একটা করে গুনে বিজয়ের মা । পাশে বসা উৎসুক বিজয়- "মা হইব তো ?"
হাতের শেষ কয়েনটা গুনে নিয়ে মা আশ্বস্ত করে ,"হইব বাবা ,যাও সুজনরে ডাইকা আনো ।"
লাফাতে লাফাতে ছুটে যায় বিজয় । খানিক পরেই সুজনের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়া আসে ।" শোন বাবা, অরে পছন্দ মতো জামা, প্যান্ট, 'সু' কিন্যা দিবা ।এই নাও ট্যাকা ।"
বাজারটা ঝলমল করছে । লোকের ভিড়ে হাঁটা খুব অসুবিধে ।একটু ফাঁকা দেখে বিজয় জামার ভেতর থেকে ছোট্ট পুটলি বের করে ,"দেখ তো সুজন ভাই ,"এ ট্যাকা গুলান দিয়া মার একটা কাপড় হইব নাকি ।"
'তুই ট্যাকা পাইছস কই ?'
"মা যে রকম আমার লাইগা জমাইছে , আমিও জমাইছি । হেই ঈদের থন । মায় মইদ্যে মইদ্যে ট্যাকা দিছিল ।তুমিও তো দিছিলা ,এক ট্যাকাও খরচ করি নাই ।
জানো সুজন ভাই কাইল দেখছি মার কাপড়ডা ছেঁড়া । মায় কিন্তু জানেনা কইলাম ।"
বিস্মিত সুজন কোলে তুলে নেয় বিজয়কে ।'চল খুইজা দেহি ,হইবই ।'
অনেক ঘুরে ওরা একটা সবুজ শাড়ি ,বিজয়ের জন্য একটা জামা কিনে ।বিজয়ের আর সু কেনা হয় না ।
রাতে মার গলা জড়িয়ে বিজয় আবদার করে মা কাইল কিন্তু সেমাই রাঁনতে হইব।
পোলাও রাঁনধবা ।সেই কবেথুন তুমি চাইল রাইখা দিছ , ঈডের দিন রাঁনধবার লাইগা ।
'রান্ধুম তো' । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিজয়ের মা । সেই কবে থেকে একটু একটু করে সেমাই, চিনি, চাল, মসলা জোগাড় করে রেখেছেন । ঈদের দিনে রান্নার জন্য । মোরগটাও বড় হয়ে গাছে ।
ওদিকে আনন্দে উৎফল্ল বিজয় । বারবার ওঁকে দেখে নতুন জামাটা বুকে চেপে ধরে বলে, ইস রাতটা এত বড় কেন ?
সাকালে মোরগটা জবাই করতে দেয় না বিজয় । কত যত্ন করেছে সে এতদিন । নাইবা খেল গোশত । শুধু পোলাওতেই চলবে তার ।
মাকে জোড় করে নতুন শাড়িটা পড়ায় ।কি সুন্দর লাগছে মাকে । লাল জামা পরে মাকে সালাম করে । খুশিতে তার চোখ-মুখ উদ্বেলিত ।
ছেলের আনন্দে মার চোখে পানি এসে যায় । দই চোখে চিকচিক করে আনন্দের অশ্রু । উঠানে খঁদ খেতে খেতে মোরগটা ডেকে উঠে বকবক করে । বাতাসে খাবারের সুবাস ।
ওডের ছোট্ট ঘরটাতে এখন ঈদ লেগেছে । সত্যিকারের ঈদ । যে দিনটার জন্য একটা একটা করে পয়সা জমিয়ে একটি বছর ধরে অপেক্ষা ।