somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ক্ষুদে পাঠশালার ক্ষুদে ছাত্রী...

২৬ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- পান্তা ভাতের কুন্ডু!
- কাঁচা লংকা ঝাল!
- তুমি নিম পাতা!
- তুমি তেজ পাতা!
- তুমি সিং মাছ!
- তুমি মাছের তরকারী!
- পটলের কারী!
- তুমি পটল!
- তুমি নিম পাতা!
- এমন কথা বলেনা বাবা, তুমি না ভালো ছেলে!

---- এই কথোপকথন অনেকের কাছেই পরিচিত লাগতে পারে। যারা টেলিভিশনে জ়ি বাংলাতে সোম-মঙ্গল-বুধবারে বাচ্চাদের "ডান্স বাংলা ডান্স" প্রোগ্রামটি নিয়মিত দেখে থাকেন।

আমি ভেবে আশ্চর্য হয়ে যাই, অতটুকুন বাচ্চাদের অত অত প্রতিভা দেখে! স্টেজ পারফর্ম করতে বড়দেরই টেনশনে ঘাম ছুটে যায়। কিন্তু,এই পিচ্চিদের মধ্যে এইসব ভয় -ডরের কোন বালাই নেই। গানের সুরে সুরে স্টেপ বাই স্টেপ নাচের পারফর্ম কিভাবে যে এরা মনে রাখে! তার উপর অত ছোট বাচ্চারা জাজদের কমেন্ট এর কি সুন্দর রেসপন্স করে! ওরা অতসব বুঝে কি করে!! !:#P !:#P !:#P !:#P

আর, উপরের কথোপকথনটি নার্সারী ক্লাসের ছাত্রী দিপান্বিতা কুন্ডুর সাথে সিনেমা অভিনেতা মিঠুনের কথোপকথন। গত সপ্তাহে তার গুরু , মানে ট্রেইনার বলেছে, তাকে নাকি এক বিষয় বার বার শিখিয়ে দিতে হয়না, একবারের চেয়ে খুব বেশি হলে দু'বারেই ঠিক করে ফেলে; ভালো পারফর্ম করে। তার প্রমাণ আমরা দর্শকরাই দেখছি। এর মধ্যেই সে আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। B-) B-)

আমিও কিছু ছাত্র-ছাত্রী পড়াই। তাদের নিয়ে আমার ক্ষুদে পাঠশালা। আমি যখন থেকে পড়াতে শুরু করি তখন থেকে আমার সবচেয়ে বড় ক্লাসের স্টুডেন্ট ক্লাস এইট হলেও বাচ্চাদের পড়াতেই আমার বেশি ভালো লাগে। এদের মধ্যে অনেক প্রতিভা বিরাজ করে। এদের নানা ধরনের কথার ভঙ্গী, পড়াশুনার ধরন আমার ভালো লাগে। ছোট বাচ্চারা দেখতে পিচ্চি হলেও যারা বাচ্চাদের পছন্দ করেন তারা জানেন যে এরা বড়দের খুব বন্ধুর মত গ্রহণ করে। ভালোভাবে বললে এরা বড়দের মত ভাবতে শেখে। আমার এই চারাগাছগুলোতে আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে আমি গড়ে তুলতে চেষ্টা করি।

এখনকার বাচ্চাদের এমনিতেই কত্ত কত্ত পড়া! ইয়াহ ভারী ব্যাগে এক গাদা বই খাতা টেনে তারা অস্থির! তার উপর পড়ার পাশাপাশি আরো কত ধরনের গুনে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা। তার জন্য তাদের উপর অনেক প্রেশার দেই আমরা। তাই আমার এখানে যারা পড়তে আসে তাদের আমি কোনরকম প্রেশার ছাড়া পড়া করাই। যেমন-স্কুলের ডায়রী দেখে আমি আগে স্কুলের পড়াটা করিয়ে দেই। মানে, আমার এইখানে বসে তারা পড়াটা মুখস্ত করে(যদি মুখস্তের দরকার হয়)।
প্রথমে "কোন অধ্যায়" রিডিং পড়তে বলি। আমার এইখানে ক্লাস থ্রী এর দুজন ছাত্র আছে। দুজন আবার দুই সেকশনের। পড়া অনেক সময়েই একরকম হয়না। তবু, তাদের দুজনকে, 'একই বিষয়ের একই পড়া' হোক বা নাহোক, একজনকে বলি, "নাও, ওকে যত কঠিন করে হোক, পড়া ধর, এবং হারাও"! X((X(( ব্যাপারটায় ওরা খুব মজা পায়। এতে উপকার কি হয়? প্রথমত, আরেকজনের কাছে হেরে যাওয়ার ভয়ে, নিজে ভালো করে পড়ে। দ্বিতীয়ত- বইয়ের অধ্যায় এর ভেতর থেকে কি ধরনের প্রশ্ন হতে পারে তা বুঝতে পারে। তৃতীয়ত- অধ্যায় রিডিং পড়া এবং তার পরপর বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ধরার কারনে, অধ্যায়ের সাথে সংযুক্ত এমসিকিউ প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন এবং রচনামূলক প্রশ্ন সম্পর্কে ভালো ধারণা হয়ে যায়। ফলে, নিজেরাই প্রশ্নের উত্তর কতটূকু হবে তা বুঝতে পারে।এটা শুধু ওই একই ক্লাসের বাচ্চাদের ক্ষত্রেই আমি করিনা। মাঝে মাঝে ক্লাস ফাইভ আর ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাটিকেও একজনের পড়া অন্যজনকে বলতে বলি।

এছাড়া যে কাজটি করি, বাচ্চাদেরকে আমি কখনো বলিনা, বইয়ের অধ্যায়ের ওই প্রশ্নগুলোই পড়ে আসবে। আমি একটা নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে হয়তো ৫টি বা ১০টি প্রশ্ন আছে, আমি তাকে বলি, তুমি এর মধ্য থেকে যেকোন ৩/৪/৫টি পড়ে আসবে। সাথে বলে দেই, পরীক্ষা নেব। এই পরীক্ষা হলো, যা সে প্রতিদিনের পড়া হিসেবে শিখেছে সেই পরীক্ষা। অর্থাৎ আমি যখনই বাচ্চাদের কিছু লেখাই তাতে নাম্বার দেই। আর, কোন কিছু ভুল হলে তা লাল কালি দিয়ে মার্ক করে দেই। মাঝে মাঝে নিজের যদি অসাবধানতায় ভুল হয়ে যায়, তবু সেটা স্বীকারও করি।

ওদেরকে বলা থাকে, যে পড়াগুলো পড়ানো হয়ে গ্যাছে তা কিন্তু, তোমরা বাসায় মাঝে মাঝে রিভাইজ করবে, নইলে, মনে করো, ক্লাসে পরিক্ষার সময় এলো, তখন তোমার কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে হলো, কিংবা দাওয়াত থাকলো, তখন পড়া করা হয়নি বলেতো তোমাকে মা-বাবা সাথে নিবেনা। তাই সবসময় পড়া করে রাখাই ভালো। তাছাড়া এখন এত ভালো করে পেরেছ, কিন্তু, পরীক্ষার সময় অসুস্থ থাকলেতো ভালো করে না লিখতে পেরে ভালো নাম্বার পাবেনা।

আজকাল কি সব পড়াশুনা থাকে বইয়ের মধ্যে , যার অনেক শব্দেরই অর্থ বাচ্চারা জানেনা। X( :| :(( আমি, তাদেরকে পড়া করানোর সময় অথবা, পড়া ধরার সময়, নিজে যেন জানিনা এমন করে জিজ্ঞেস করি, "আচ্ছা, এই কথাটার মানে কি?" তারা কখনো বলতে পারে, কখনো পারেনা; তখন আমি তাদের বিষয়টা ওদের বোধগম্য স্তরে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করি। কখনো অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, ওরা অনেক কিছুই বুঝে। আবার মাঝে মাঝে, অধ্যায় রিডিং পড়ানোর পর, আচমকা বলি, এই প্রশ্নের উত্তরটা, তুমি যেভাবে বুঝেছ, নিজের ভাষায় লিখো।

অনেক সময় আমি ওদের পড়াশুনার বাইরে কে কি পারে তা আমাকে জানাতে বলি। ওদেরকে মাঝে মাঝে বলি, আজ কোন মজার অথবা, যা খুশি বিষয় নিয়ে লিখ। মাঝে মাঝে পড়া শেষ হয়ে গেলেও কিছুটা সময় কৌতুক, গল্প শুনতে চাই বলে ওদের আটকে রাখি। উদ্দেশ্য , ওরা কি বলতে পারে তা যাচাই করা।;);)

আমি বেত নিয়ে পড়াইনা। বাচ্চাদের সাথে অনেক মজা করি। নিজের অনেক কিছুই শেয়ার করি। নিয়মিত বাচ্চাদের পরিবারের মানুষের খোঁজ খবর নেই। ওদের শরীর-মনের কুশল জিজ্ঞাসা করি। বাচ্চারা আনন্দের সাথে পড়া করে। এটা যেন তাদের বেড়ানোর জায়গা। ওরা মজা পায়।

আমি দুই সেকশনে পড়াই। এক - "একাডেমিক।" (সপ্তাহে ৫দিন, দুই ঘন্টা করে)
দুই- "ছবি আঁকা" (সপ্তাহে ২দিন এক ঘন্টা করে)

কদিন আগে আমার সবচেয়ে ছোট স্টুডেন্ট ভর্তি হলো। বয়স ৩ বছর ২মাস। ;) ওর মা আমার কাছে দিয়েছেন, বাচ্চার ছবি আঁকা শেখানোর জন্য। পিচ্চি কিচ্ছু আঁকতে পারেনা। শুধুই দাগাদাগি করে। /:) আন্টি তাতেই খুশি। কারণ তিনি আমার কাছে মেয়েকে দিয়েছেন কিছু শেখার জন্য নয়। জাস্ট তিনি ওকে স্কুলে দেবেন। মা'কে ছাড়া মেয়ে কতটা সময় বাইরে অন্য মানুষদের সাথে থাকতে পারে তার প্র্যাকটিস। বিষয়টা ভালোই লাগলো। :#) :)

পিচ্চি এই এলাকায় খুব নামকরা। পরিচিত। সারাদিন জানালা ধরে কথা বলে। আঙ্কেল আন্টি বলে বলে ঈশানের(ঈশান আমার স্টূডেন্ট, ক্লাস ওয়ান, গভ-বয়েজ স্কুল) বাবা-মা'র সাথে কথা বলে। এষার(আমার মামত বোন) সাথে কথা বলে।খুব গপ্পিস! আমার এইখানে পড়তে এলেও বকর বকর করতেই থাকে। :#) :#)

আমি প্রথমে ওকে পড়াতে নেয়া ঠিক করার সময় ভাবছিলাম ওকে অন্যদের সাথে বিকেলে না পড়িয়ে আলাদা সময়ে, সকালে পড়াবো। কিন্তু, আন্টি জানালেন তাহলে নাকি ও থাকবেইনা। ঈশানকে খুব পছন্দ করে। ওর সাথে দিলে বা সবার সাথে একসাথে বসালে চুপ থাকবে। পছন্দ ও করবে। বাচ্চা মানুষ কি আর চুপ থাকে! তবু, আমি আমার আগের স্টুডেন্ট দের সাথেই ওর পড়ার টাইম ঠিক করলাম। কিন্তু, একটু আগে পিছে করে দিয়ে। তাতে অন্যদের সমস্যা বাঁধবেনা।

একদিন পড়তে এসেছে, সেদিন ঈশান-দিয়ানের বাসায় মেহমান এসেছে তাই ওরা পড়বেনা। রাফা একা হয়ে গেছে। ওর মা ঈশানরা পরে আসবে বলে আমার কাছে মেয়েকে বসিয়ে দিয়ে বাসায় চলে গিয়েছেন। কিছুক্ষন দাগাদাগি করার পর ওকে মশা কামড়িয়েছে। আমাদের বাসায় ইলেকট্রিক কয়েল জ্বালানো থাকে। সেদিন আগে থেকে দেয়া হয়নি। যাই হোক,
- রাফা আমাকে বলছে, "তোমাদের বাসায় এরোসল নেই?"
- আমিঃ আছেতো! কিন্তু, এখন দেয়া যাবেনা। আমার গন্ধ লাগে।
- রাফাঃ গন্ধ লাগে?!!
- আমিঃ হু! (বলে আমি হাসি)
- রাফাঃ জানো, এরোসল দিয়ে না ঘরের সব জানালা দরজা লাগিয়ে দিতে হয়!
- আমিঃ হ্যাঁ। কিন্তু, ওটাও করা যাবেনা।
- রাফাঃ কেনওওও? !!
- আমিঃ কারন আমাদের এই ঘরের দরজা নেই, দেখেছ?

তারপরে সে আমাকে বলে জানো, টিভিতে দেখায়, মশার কয়েল মশাকে গপ গপ করে খেয়ে ফেলে!! (কথাটা বলে পিচ্চির সে কি হাসি!!) তোমরা ঐরকম মশার কয়েল লাগাবা।
আমি বল্লাম, হু, তাইতো!

পিচ্চিটা এত কিউট! এই পিচ্চি এই বয়সেই এত সুন্দরী। তরুনী হলেতো খবর আছে। আর এত বুদ্ধি!!

আমার এখানের সব স্টুডেন্টই বেশ মেধাবী। আরেকটি পোস্টে ওদের ছবি দেবো।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:২৯
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×