প্রতিচ্ছবি
-অদ্বিতীয়া সিমু
ক্রিং ক্রিং শব্দে ফোনটা বেজেই চলছে।
তিয়াষার বড় বিরক্ত লাগছে। একবার রিসিভার হাতে নিয়ে রেখে দিল। বাবা, যদি তাতে বিপরীতদিকের প্রার্থী বিরত হয়। পাগল আর কাকে বলে! কেউ এত রাত পর্যন্ত কাজ করে এত সকালে ফোন ধরে! কে জানে কে করছে। বাধ্য হয়ে মাথার উপর বালিশ চাপা দিল। তবু বেজে চলছে ক্রিং ...ক্রিং ...
-ওহ্, মাবুদ...
আড়মোড়া ভাঙলো তিয়াশা। লাথি মেরে কাথা সরাল। হাত দিয়ে চোখ রগড়ে দেওয়ালের দিকে তাকাল। ঘড়িতে ১১.১৫ বাজে। আপন মনেই হেসে নিল। ওকেই মানুষ পাগল ভাববে। ১.০০ টার মিটিংয়ে অবশ্যই থাকতে হবে। খাটে বসেই কানে রিসিভার ঠেকাল তিয়াষা।
-হ্যালো , কে বলছেন?
-তুই কি এখনো ঘুমাচ্ছিস?
চমকে উঠলো তিয়াষা। কার কণ্ঠ! সুরমা! ইম্পসিবল!
-কে... কে...কে বলছেন?
-আমায় ভুলে গেছিস্?
-মানে.. কে.. সুরমা?
-নামতো জানিস!!
-তুই এতদিন পর! কোথায় আছিস? রায়ান বাবা কেমন আছে? আরমান ভাই কেমন আছে?
-এত প্রশ্ন!! তুই বদলাবি না তিশা...
-শিয়াল মরলে কি তার ল্যাঁজ সোজা হয়!!
সুরমা ফোনের ওপাশে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। এপাশে বসে তিয়াষা কল্পনা করে সুরমাকে। শাড়ী পড়া মেয়ে, সবাইকে খাইয়ে-দাইয়ে নিপাট করে ফোনের পাশে বসেছে। মুখটা হয়তো ঘামে জব্ জব্ করছে, আঁচল দিয়ে মুছে নিচ্ছে। সেই সুরমা, যে কিনা মাঠে হাওয়াই ঘোড়ার মত উড়ে চলতো, শ্যামলা পেটা শরীর। কপালে একটা কাটা দাগ আছে। কেই প্রশ্ন করলে মিষ্টি হেসে মিথ্যে বানানো গল্প বলতো।
-জানিস, যখন ছোট ছিলাম তখন আমগাছতলায় রাতে আম কুড়াতে গেছি। সেখানে একটা পেত্নী থাকতো, সে আমাকে নোখ দিয়ে আঁচড়ে দিল...
সবাই অবাক হয়ে তাকাতো। তিয়াষা মানতো না।
-তা পেত্নী যদি চিরে দেয়, গর্ত হলো কি করে!!
সুরমা কি দমে যাবার পাত্রী !
-বারে তিশা, তুই তোর সুমাকে অবিশ্বাস করিস? পেতœীতো খুঁচিয়ে দিল...
ভলিবলের তুখোর খেলোয়াড় ছিল সুরমা।ওকে ছাড়া স্কুলে ভলিবল হত না। ইন্টারের পর, অনার্সের ২য় বছরে হঠাৎ করে বিয়ে হল সুরমার। সুমার বাবা সুমাকে পড়াতে রাজী না। ঢাকা থেকে জোর করে নিয়ে গেলেন। পাশের গ্রামেই বিয়ে দিলেন অনেক যৌতুকের বিনিময়ে। কারণ, মেয়ে নাকি কাল!!
সুখের সংসার সুমার, বছর ঘুরতেই ছেলে এল কোল জুড়ে...‘রায়ান’। তিয়াষা অবাক হতো ও আরমানকে নিয়ে কোন গল্প করতো না।
সুমার সব কথা জুড়ে রায়ান থাকতো। কিন্তু আরমান ভাইয়ের কথা উঠলেই ও গুটিয়ে যেত। কেমন যেন বদলে গেল সুমা। কি করে বদলায় মানুষ! এরপর?
এরপর জীবনের আয়োজনে, জীবনের প্রয়োজনে ছিটকে পড়েছে দুই বান্ধবী। একজন সংসারে, আরেকজন জীবনের রেলগাড়িতে ঢাকাতেই।
-তিশা...
চমক ভাঙে তিশার।
-হু, শুনছি।
-তবে কথা বলছিস না কেন?
-ভাবছি কতদিন পর আমরা কথা বলছি!
-৬ বছর..
এত অবলীলায় কি করে কেটে গেল ৬ বছর!
-তিশা, তুই কি বিয়ে করেছিস?
উচ্চস্বরে হেসে উঠে তিয়াষা। বিয়ের ধারে কাছেও নেই তিশা। ও এসব নিয়ে ভাবে না।
-বড়ো হাসছিস?
-তো কি করবো? ভেবিছিস, উড়নচণ্ডী এবার বিয়ে-থা করে থিতু হয়েছে!!!
-ক্ষতি কি হলে!! বিয়ের পর স্বামীর সাথে আমার মত প্রেম করবি...
-মন্দ না...আরমান ভাই কেমন আছে?
চুপ হয়ে গেল ওপাশটা!
-কিরে...কি?
গুমড়ে কান্নার শব্দ।
-সুমা কাঁদছিস কেন?
- আমার আবার মেয়ে হয়েছে।
-খুশীর খবর। কান্নার কি হয়েছে...নাম কি রেখেছিস?
-রাইসা।
-দারুণ! রায়ন-রাইসা।
সুমা অস্থির হয়ে উঠলো।
-তিশা তোর সাথে আমার কথা আছে... অনেক কথা...
-কি কথা, বল?
ডুকরে কেঁদে উঠলো সুমা।
কি বলবে সুমা? স্বামীর কাহিণী! ওর ঝরে যাওয়া জীবনের গল্প! যেদিন বউ সেজে পতির ঘরে পা রাখে, পতিদেবতা মদের নেশায়...! লজ্জা, অপমান সয়েও ও সুখী বউ সেজেছে! সব জানতো ওর শ্বাশুড়ী। চুপিচুপি বউকে ডেকে ফুঁসলে দিয়েছিলো।
-ওলো ছেমড়ী, কিচ্ছু বোঝস না! ছাওয়াল বিয়ান দে, দেখবি মরদ ঠিক হইয়া গেছে.. আমরাও মরদরে ঠিক করছি..
শ্বাশুড়ীর লক্ষী বউ রায়ানের জন্ম দিল মরদ ঠিক করতে। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ভুলে যায় সব।
দিন দিন মুখোশ খোলে আরমানের। শুধু মদই না, সংগে পরনারী! কান্নায় বুক ভাঙে সুমার। পালিয়ে যেতে চেয়েছে। কি›তু পারেনি। নিজের কানে শুনেছে শ্বাশুড়ীর কু-মন্ত্রণা।
-ও আরমান, বউ যদি রাখবার চাস আরেকটা বিয়ান দেয়া...
কতদিন পালিয়ে বেরিয়েছে সুমা! পারেনি। শেষপর্যন্ত রাইসার জন্ম।
সুমার মার কথা,“স্বামী যেমুনই অউক,হেয় দেবতা। দেবতারা দোষ করবারই পারে। তাই বইল্লা তুই আইবার পারস না।”
বাবাও চোখের জলে ফিরিয়েছে মেয়েকে, সমাজে লজ্জা! আর সুমা করে যাচ্ছে সমাজের সংসার!
-দোয়া করিস, তিশা...
খট্ করে কেটে গেল লাইন। স্তব্ধ হয়ে বসে আছে তিয়াষা।
মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। বমি পাচ্ছে। টলতে টলতে বেসিনের পাশে এস দাঁড়ালো। উবু হতেই গলা দিয়ে গরম তরল বেরিয়ে এল। কষ্ট হচ্ছে। মাথাটা চেপে ধরলো তিশা। কল ছেড়ে দিতেই পানির ফোয়ারা বেরোল। বমি বুদবুদ উঠে নেমে যাচ্ছে নর্দমার ফুটো দিয়ে। কার যেন প্রতিচ্ছবি...কার?
আরমান ভাইয়ের! না, না, কার...কাদের..!!!! তিশা বেসিনের কর্ণার চেপে ধরে ব্যালেন্স রক্ষা করার চেস্টা করছে...
আলোচিত ব্লগ
আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?
ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প
বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ
(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাড়ির কাছে আরশিনগর
বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।
কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি ভালো আছি
প্রিয় ব্লগার,
আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন