somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুদে বিঞ্জানী তারেক ভাই

২৪ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যদি আবৃত্তি করি, "বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই" অমনি তারেক ভাইয়া ভেংচি কেঁটে বলে, " উ: চাঁদ কি কখনও বাঁশবাগাছের আগায় ওঠে? যতসব আজগুবি কথা।" আবার যখন পড়ি," মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাঁচি নাঁচি, দাড়াও না একবার ভাই" তখনও ধমক দেয়, "গাঁধা মৌমাছি কি মানুষের কথা বুঝে? যতসব অবৈঞ্জানিক ধারণা।" কবিতাকে এভাবেই খোঁচা দেয় তারেক ভাই। আমার প্রচন্ড খারাপ লাগলেও বলতে পারতাম না কিছুই। কারন আমি জানি যে চাদ কখনও বাঁশগাছের আগায় ওঠেনা আর মৌমাছিও মানুষের কথা বুঝে না। তবু ভীষণ ভাল লাগে বলেই কবিতা পড়ি। ভাইয়ার এমন আক্রমনে আহত হয়ে দেয়ালে ঝুলানো রবিঠাকুর নজরুলের ছবির সামনে গিয়ে তাই মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আহা, উনারা যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে ভাইয়ার মুখের উপর উচিত জবাবটা দিয়ে দিতেন।
তারেক ভাইয়া ক্ষুদে বিঞ্জানী। সব জিনিসেই তাই যুক্তি খোঁজেন। নিউটন সাহেব নামক এক বিঞ্জানী আপেল কেন অন্য কোন দিকে না গিয়ে নিচে পড়লো জাতীয় প্রশ্ন করায় তার সুযোগ্য উত্তরসুরি তারেক ভাইয়াও তাই এরকম আজগুবি প্রশ্ন করে আমাকে জর্জরিত করে বেশ মজা পায়। একবার আমাকে বলে, আকাশ কেন নীল হয়জানিস? আমি তো হা। াাকাশ নীল না হয়ে কি খয়েরি বেগুণী হবে নাকি? কি সব ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে আমাকে বৈঞ্জানিকভাবে বুঝিয়ে দিল আকাশ নীল ছাড়া অন্য রঙের হওয়া অসম্ভব ব্যাপার।
ভাইয়রি ঘরভর্তি নানা রকম জিনিসপত্র। ছোটখাটো গবেষণাগার বলা চলে। ব্যাঙ কাটার যণ্ত্র থেকে শুরু করে এসিড পর্যন্ত কি নেই। গোপনে ব্যাঙের নাড়িভুড়ি কেটে বের করে দাঁত কেলিয়ে দানবের মত হাসে। আর আমি আক্রান্ত ব্যাঙের যন্ত্রণার চিন্তায় অস্থির। এটার সাথে ওটা মিশিয়ে গ্যাস বানিয়ে দিব্যি বেলুন উড়িয়ে দেয়। একদিন তো আমাকে এক আজব সমস্যায় ফেলে দিল। এক বাটি পানিতে একটা কয়েন ছেড়ে দিলে হাত না ভিজিয়ে খালি হাতে কয়েনটা উদ্ধার করতে পারবি? আমার চোখ তো কপালে উঠার যোগাড়! হাত না ভিজিয়ে আবার পানি থেকে পয়সা তুলে কিভাবে? আমার হা করা মুখ গহব্বর দেখে বেশ তৃপ্তি সহকারে বিদঘুটে হাঁসি হেসে এবারও সে আমার কবিতাকেই আঘাত করে বসলো, এমন অসম্ভব ব্যাপার কবিতা টবিতা দিয়ে সম্ভব করা যায়না, বুঝলি গাধা? আমি চুপ। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছি। একটা হরলিক্সের খালি বোতলে এক টুকরা কাগজে আগুন ধরিয়ে ছেড়ে দিল। তারপর ওটা উপুড় করে পানিভর্তি বাটিতে ধরতেই সব পানি যাদুর মত বোতলে ওঠে এলো। ভাউয়া তারপর বীরের মত হাত না ভিজিয়েই পয়সাটা তুলে আনলো। আমার কবিতাকে আরেক ঘা বসিয়ে দিতেও ভুললোনা।
আমি কিন্তু ভাউয়ার প্রতিভায় অবাক হলাম। তাকে সেদিন থেকে নিউটনের চেয়ে বড় মাপের বিঞ্জানী হিসেবেই গন্য করা শুরু করলাম। কিন্তু সে আমাকে আহতই করে গেল। তার ব্যাক্তিগত গবেষণাগারেও আমার প্রবেশের উপর কড়া নিষেধাঞ্জা আরোপ হল। কেননা, আমার মত গাঁধাদের ও ঘরে প্রবেশ বিঞ্জান জগতের জনৗ বিরাট অসম্মানের ব্যাপার। আমিও নিরবে মেনে নিয়ে দিন কাটাতে থাকলাম।
এভাবে অনেকদিন। আমি বড় হলাম। ক্লাস এইট তেকে নাইনে উঠব। ভাইয়াও ততদিনে কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে পা দিয়েছে। একদিন পূজার ছুটিতে বাড়ী এলো। বিমর্ষ দেখাচ্ছে ভাইয়াকে। আমি আশেপাশে ঘুরঘুর করছি। কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা। হঠাৎ সে ই আমাকে নরম স্বরে কাছ ডেকে নিল। তারপর যা বলল তা একেবারে অকল্পনীয়্। নিচু স্বরে বলল, তোর কাছে কিছু ভাল কবিতার বই হবে? আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বিনয়ের সাথে বলল, জীবনানন্দ হলে ভাল হয়। আমি আরও অবাক। নিউটন আইনস্টাইনদের দ্বারা আচ্ছন্ন চোখে জীবনাননন্দের ছায়া সত্যিই বিস্ময়ের ব্যাপার। আমার ভেতরে জিঞ্জাসা বেড়েই চলছে। বিঞ্জাণীর হঠাৎ কবিতার প্রয়োজন! আমি তবু চুপ। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বিব্রত ভঙ্গিতে বললো, " ভার্সিটিকে করবী নামের এক মেয়ের সাথে কথা হয়। ওকে আমার ভাললাগে।কি সুন্দর গড়গড় করে কবিতা আবৃত্তি করে। আমি হা করে চেয়ে থাকি। তাল মিলাতে পারিনা। ভীষণ কষ্ট হয় তখন।"
আমি কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে একগাদা কবিতার বই এনে সামনে হাজির করলাম। যাবার সময় একটুখানি টিপ্পনি কেটে বললাম, "সব অযৌক্তিক ব্যাপারগুলো করবী আপার মুখে গিয়ে যৌক্তিক হয়ে গেল বুঝি!"
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×