somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারে বিজিত ও বিজয়ী – উভয় দলের অংশগ্রহন জরুরী

২৩ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






সরকারে বিজিত ও বিজয়ী – উভয় দলের অংশগ্রহন জরুরী

অতি সাম্প্রতিক কালের রাজনীতি নিয়ে কিছু সমালোচনা করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার দাবিদার হল বর্তমান বিরোধীদল নিজেই। সরকারের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন তারা গুছিয়ে তুলতে পারছে না। এর জন্য দায়ভার পুরোপুরিই তাদেরই। জনগণ আর কত শুনবে যে এই সরকার ব্যর্থ! তাদের কথা অনুযায়ী যদি মেনেও নেই যে সরকার ব্যর্থ, তারপরও তো বিরোধী দলের দায়িত্ব কি এইটা দাঁড়ায় না যে সরকার কোন কোন জায়গায় ব্যর্থ, সে জায়গাগুলো পরিস্কার করে দেখিয়ে দিয়ে তারা ক্ষমতায় থাকতে সেই সব ক্ষেত্রে কি কি করেছিল সে সমন্ধে ব্যাপক প্রচারন চালানো?

কিন্তু গতানুগতিক পথে চলে বিরোধীদল সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলো নিয়ে বললেও তাদের ক্ষমাতাসীন সময়ে কি কি করেছিল তা কিন্তু আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে না। ফলটা হয়েছে এখন এমন যে বিরোধীদল ক্ষমতায় থাকতে যে যে ভুল করেছিল, ঠিক একই ভুল পথে হয় সরকার চলা শুরে করেছে [ সর্বশেষ প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ] কিংবা বিরোধীদল যে সময়ে সরকারে ছিল, সে সময়ে তাদের ঘটানো বিভিন্ন ঘটনাকে বেশি বেশি করে তুলে ধরে বিরোধীদলকেই রীতিমত ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে [ খালেদা জিয়ার বাড়ি ] সরকার।

আমাদের রাজনীতির আরেকটা দিক আছে, এই দিকটা আমাদের মাঝে মাঝে চোখে পড়লেও আমরা এই বিষয় নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাই না। আমাদের দেশে যে দল সরকার গঠন করে, তার বাইরে সবাই বিরোধীদল হয়ে যায়। এটাই যেন একটা স্বতসিদ্ধ রীতি। ফলে সরকারে অধিষ্ঠিত দলকে যেমন বিরোধীদের সইতে হয় – সামলাতে হয়, তেমনি দেশ গড়ার জন্য বরাদ্দ সময়ের ভেতরে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের বাস্তবায়নও চালিয়ে নিতে হয়।

আমদের গত কয়েক বারের অভিজ্জতায় দেখা গেছে যে, বিরোধীদল নির্বাচনের পরের এক থেকে দুই বছর একটু স্তিমিত থাকলেও এর পর থেকে উজ্জ্বীবিত হয়ে ওঠে। এটা কিন্তু তাদের কর্মসূচীর জন্য নয়। তাদের সে পথটি উন্মুক্ত করে দেয় সরকার নিজেই। কেননা সরকার এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে, যেগুলোর অধিকাংশই ক্ষমতা গ্রহনের এক থেকে দুই বছরের ভেতরে বাস্তবায়িত হয় না। ফলে জনগণের যে অংশটা ভোটের আগে নিরপেক্ষ থাকে, তারা ক্রমশঃ অস্থির হয়ে ওঠে।

এটা মনে রাখতে হবে, প্রতিটি নির্বাচনই একটি পরিবর্তনের অংগীকার নিয়ে আসে। ক্ষমতা প্রত্যাশীরা ক্ষমতাসীনদের চেয়ে জনগণকে ‘ভালো-কিছু-করে-দেবে’ এমন একটা অঙ্গীকারনামা নির্বাচনের আগে ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে করে থাকে। তাই শুধু গত নির্বাচনই নয়, এর আগে হয়ে যাওয়া প্রতিটি নির্বাচন, এবং আগামী হতে যাওয়া প্রতিটি নির্বাচনই পরিবর্তনের ডাক দিয়ে যাবে। আর জনগণ সেই নির্বাচনের পূর্বে তাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলিয়ে পরের নির্বাচনের ভোট দিতে যাবে।

তাই আমাদের দেশে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা গড়ে দিতে হবে যেন তারা ও বিরোধীদল মিলে সরকারের কাজ করতে পারে। এ জন্য আমাদের সরকার-প্রশাসন এবং এর ভেতরে সবার অংশ গ্রহনের ব্যবস্থাপনাতে আনতে হবে পরিবর্তন। না হলে আমাদের দেশে এক দল বলেই চলবে আমার শাসানমলের চেয়ে অপর পক্ষের শাসনামল খারাপ।

একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাহীন – উভয় দলেই মেধাসম্পন্ন নেতা আছেন, যাঁদের কর্মনিষ্ঠা নিয়ে দলের ভেতরে বা বাইরে কোন প্রশ্ন নেই। তাঁদের কোন দায়িত্ব দেয়া হলে তারা সেই দায়িত্ব থেকে উদ্ভুত কাজকে দেশের ও দশের উপকারে ব্যয় করে থাকেন। এমন নেতাদের এক জোট করে কি আমরা কিছু দিনের জন্য একটা তত্বাবধায়ক সরকার বা জাতীয় সরকার জাতীয় কিছু তৈরী করতে পারি না? সংসদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা যাদেরই আসুক না কেন, এবং এই সব নেতাদের কেউ কেউ নির্বাচিত না হলেও, তাদের সম্বণয়ে কি মন্ত্রীসভা গঠন করা যাবে না?

হ্যাঁ, বিজয়ী দলের নেতাই হবেন প্রধানমন্ত্রী, এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁর মন্ত্রীসভা হতে হবে উভয় দল থেকে বাছাই করা লোকদের নিয়ে। এই মন্ত্রীসভা সংসদে কথা বলবেন, স্থায়ী কমিটির উপদেশ শুনবেন, আর সরকারী কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা দিবেন যেন তাঁদের আওতাধীন কাজগুলো নিরপেক্ষ ভাবে সাধিত হয়।

আমার এই প্রস্তাবের কারন আছে বেশ কয়েকটি। এর ভেতরে আশু কারনটি হল আমাদের প্রধান দুই দলের নেত্রীদের বর্তমান বয়স। তাঁদের বয়স কিন্তু বেড়েই চলেছে। মানুষের জীবনকাল নিয়ে ভবিষৎবাণী করা যায় না। তাঁদের অবর্তমানে আমাদের দুই দলই নেতা-শূন্য হয়ে পড়বেন। বাংলাদেশ তো আর উত্তর কোরীয়া না যে প্রধান নেতা তার বোন-জামাই-এর উপদেশ নিয়ে, এবং পিতার পথ ধরে, নিজের সন্তানদের ভেতর থেকে কাউকে মনোনীত করে দিবেন, আর জনগণ সেই নেতাকে ‘প্রিয় নেতা’ বলে এক বাক্যে মেনে নেবেন।

আমরা ভারতের মতও পরিপক্ক নই যে আমাদের কোন রাজনৈতিক পরিবারের কোন সদস্যকে রাহুল গান্ধীর মত করে নির্বাচনের মাধ্যমে গড়ে তুলব যেন বয়স্করা ক্ষমতা প্রয়োগে অক্ষম হলে আমাদের নেতা নিয়ে দূর্ভাবনা না থাকে। আমাদের অতি সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে যে আমাদের নেতা বানানোর প্রক্রিয়াটাই ভুলে ভরা। আমাদের ক্ষমতাসীন ‘মা’য়েরা যেন ধরেই নিয়েছেন, তাঁদের ছেলে সন্তানেরাই তাঁদের অবর্তমানে নিজ নিজ দলে হাল ধরতে সক্ষম হবেন। কোন প্রতিযোগীতা ছাড়াই এমন উত্তরাধিকার দলকেই খালি বিপদগ্রস্থ করবে না, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও তা মঙ্গলকর হবে না।

তাই এমন কোন প্রস্তাব কি ভাবা যায় না যাতে করে আগামী নির্বাচনে সংসদের সব দলের অংশগ্রহনে একটি সুন্দর সরকার গঠন করা যায়, যাতে করে নির্বাচিত দলগুলি থেকে পূর্বে অধিক যোগ্যতা দেখিয়েছেন এমন নেতাদের দিয়ে সরকার গঠন করে জনগণের সত্যিকারের চাহিদাগুলো মেটানোর যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া যায়? আজকের এই দিনে, বাংলাদেশের মত দেশে এই প্রস্তাবটি অবাস্তব হতে পারে, কিন্তু একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে এমন একটি সরকার আমাদের কত প্রয়োজন।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×