দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণের হার এক বছরের ব্যবধানে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
Published : 15 Aug 2013, 07:36 PM
২০১২-১৩ অর্থবছরে মাঝামাঝি সময়ে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে গত অর্থবছরের ঋণ বিতরণের বাংলাদেশ ব্যাংকের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি।
ঋণ বিতরণ ও আমানত বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছর শেষে ঋণ বিতরণে ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে গত অর্থবছরের জুন শেষে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এছাড়া গত ডিসেম্বরে ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও ঋণ বিতরণে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের ঘাটতি ও ব্যাংকিং খাতের কেলেঙ্করির ঘটনাগুলোকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও পরিবেশ ও সুযোগের অভাবে ঋণ বিতরণ কমে গেছে বলে মনে করেন ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত আমার ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশ। আমরা এই মুহূর্তে নতুন ঋণের দিকে যাচ্ছি না। বরং পুরনো ঋণ- যেগুলো একটু খারাপ পর্যায়ে গেছে সেগুলো আদায়ে জোর দিচ্ছি।”
ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সংকটকে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাজনীতিসহ সামগ্রিক কারণে ব্যবসায় এক ধরনের মন্দা চলছে, যে কারণে সাহস করে নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছে না অনেকেই।”
আনোয়ার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান খালেদ অবকাঠামোর অভাব ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপকেও ঋণ বিতরণ কমার জন্য দায়ী বলে মনে করেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকায় ও নির্বাচনী বছর হওয়ায় বাজারে ঋণের চাহিদা কম। ব্যাংকিং খাতের কিছু কেলেঙ্কারির কারণেও ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে আগের তুলনায় সতর্ক হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জায়েদ বলেন, “ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা থাকায় অনেক ভালো ব্যবসায়ী ঋণ নিচ্ছেন না।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংকগুলো থেকে মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা ২০১২ সালের জুন শেষে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৬৭৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছিলো।
২০১১ সালের জুন শেষে এর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিলো ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩০টি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ১০টি ব্যাংকের ঋণ বিতরণে ৬ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আর বিদেশি নয়টি ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংকের ঋণ বিতরণে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমান দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরে আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা ২০১২ সালের জুন শেষে ছিলো ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।